বঙ্গ-নিউজ: ডলার লেনদেনে অতি মুনাফার অভিযোগে দেশি-বিদেশি আরও ছয় ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বুধবার রাতে এসব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) কাছে এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম।
যে ব্যাংকগুলোকে চিঠি পাঠানো হয়েছে সে তালিকায় বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে আছে এইচএসবিসি। দেশি ব্যাংকের মধ্যে আছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), এনসিসি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়া।
‘ব্যাংক কোম্পানি আইন লঙ্ঘন’ করায় ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। এক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকের এমডিদের কাছে পাঠানো চিঠিতে অতি মুনাফার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। একই সাথে ঘোষিত দামের সঙ্গে ডলারের প্রকৃত দামের মিল না থাকা, ঘোষিত দামে রপ্তানি ও আমদানিতে ডলারের মূল্য নির্ধারণ না করা, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনলাইন পোর্টালে নিয়মিত দাম ঘোষণা না করাসহ আরও কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, যেহেতু ডলার নিয়ে এখন একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, তাই এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জিরো টলারেন্স অনুসরণ করবে। ব্যাংকগুলোতে এখন পরিদর্শন কার্যক্রম চলছে। অভিযোগ পেলে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের আরও ব্যবস্থা নেবে।
এর আগে গত ১৮ আগস্ট প্রথম দফায় ছয় ব্যাংকের এমডিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তারও আগে বেশি দামে ডলার বিক্রি করায় ৮ আগস্ট একসঙ্গে ছয়টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনের যুদ্ধের জেরে পুরো বিশ্বেই ডলারের দাম বেড়ে গেছে। দেশে আমদানি ব্যয়ের তুলনায় রপ্তানি ও রেমিটেন্স সেভাবে না বাড়ায় বাজারে ডলারের তীব্র সংকট দেখা দেয়। ফলে দ্রুত বেড়ে যায় ডলারের দাম। এ অবস্থায় ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে হিমশিম খেতে হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।
এমন পরিস্থিতিতে কিছু কিছু ব্যাংক বেশি দামে ডলার বিক্রি করেছে- এমন অভিযোগ পান বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা। পরিদর্শনে গিয়ে এ পর্যন্ত ১৮টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত ১২টি ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে, যার মধ্যে দুটি বিদেশি ব্যাংকও রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে ডলারের দাম ৮৪-৮৫ টাকার মধ্যে ঘোরাঘুরি করছিল। হঠাৎ করেই সেই ডলারের দর গিয়ে ঠেকে ১০৯ টাকায়। আর খোলা বাজারে ডলার কেনাবেচা হয় ১২১ টাকায়।
পরবর্তীতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে সেই দামে লাগাম আসে। বর্তমানে ব্যাংকে নগদে ১০৪ থেকে ১০৫ টাকা ও খোলা বাজারে ১০৯ টাকা বিক্রি হচ্ছে ডলার।
অভিযোগ পাওয়া যায়, বাড়তি চাহিদার সুযোগে কিছু কিছু ব্যাংক নিজেদের কাছে মজুদ থাকা ডলারের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে শুরু করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে জানা গেছে, কয়েকটি ব্যাংক অল্প সময়ের ব্যবধানে ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত মুনাফা করে নিয়েছে। এ তথ্য পাওয়ার পরই বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করে।
এদিকে ডলারের বাজারের বর্তমান অবস্থায় করণীয় নির্ধারণে আজ বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোর সাথে ফের আলোচনায় বসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে অংশ নেবেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ সময়: ২০:২০:৫৮ ৩২৫ বার পঠিত #ছয় ব্যাংক #ডলার #বাংলাদেশ ব্যাংক #ব্যাখ্যা তলব