বঙ্গনিউজ : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে তার দেশের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার কারণে পুরো বিশ্ব অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়েছে, তবে এতে তার দেশের সার্বভৌমত্ব আরও শক্ত হয়েছে।
রাশিয়ার দূরপ্রাচ্য অঞ্চলের শহর ভ্লাদিভস্টকে এক অর্থনৈতিক সম্মেলনে মি. পুতিন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং এর পরিণতি নিয়ে দীর্ঘ বক্তৃতা করেন।
তিনি বলেন, পশ্চিমাদের এই নিষেধাজ্ঞা কাজ করছে না বরঞ্চ এতে পশ্চিমা দেশগুলোর পতন ঘটছে, আর এর বিপরীতে নতুন শক্তি হিসেবে এশিয়ার উত্থান হচ্ছে।
মি পুতিন বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি কীভাবে ইউরোপে উৎপাদন কমছে এবং মানুষজন চাকরি হারাচ্ছে।
“মানুষের চোখের সামনে” ডলার, পাউন্ড এবং ইউরো দুর্বল হচ্ছে, তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত আমাদের কোনো ক্ষতি হয়নি এবং আমাদের কোনো ক্ষতি হবেও না…আমাদের সার্বভৌমত্ব আরও সংহত হয়েছে।”
ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর নতুন করে যে তীব্র দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে, তারপর রাশিয়া এখন এশিয়া, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, চীনে গ্যাস সরবরাহের জন্য রাশিয়া মঙ্গোলিয়ার ভেতর দিয়ে একটি বিশাল নতুন গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণ নিয়ে আলোচনা করছে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন তার ভাষণে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে খুব কম কথা বলেছেন। তার ভাষণের সিংহভাগ সময় ধরে তিনি কথা বলেন রাশিয়ার ওপর চাপানো পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যেটিকে তিনি তার দেশের বিরুদ্ধে পশ্চিমের “অর্থনৈতিক যুদ্ধ” হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, “তাদের এই জ্বর, এই অর্থনৈতিক আগ্রাসন পুরো বিশ্বকে হুমকিতে ফেলছে . বিশ্ব জুড়ে মানুষের খাদ্যের সংকট তৈরি হয়েছে।”
মি পুতিন বলেন, “পশ্চিমারা নগ্ন ভাবে সবাইকে তাদের কথামত চলতে বলছে, আর সবাইকে সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিয়ে তাদের কাছে নতজানু হতে বলছে। তারা পুরোনো বিশ্ব ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে চায়, কারণ এটি কেবল তাদের জন্য সুবিধাজনক। এই নীতি তারা বহুদিন ধরে অনুসরণ করছে।
রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানির সর্বোচ্চ মূল্য বেঁধে দেওয়ার ইউরোপীয় পরিকল্পনার কঠোর সমালোচনা করে প্রেসিডেন্ট পুতিন হুমকি দেন ইউরোপের কাছে জ্বালানি বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করে দেবেন তিনি।
“আমরা গ্যাস দেবনা, তেল, কয়লা - কোনো কিছুই আমরা বিক্রি করবো না,” মি পুতিন বলেন, “যদি তা রাশিয়ার স্বার্থের বিরুদ্ধেও যায়।”
কিন্তু প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছ থেকে এই হুমকির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার গ্যাসের দামের সর্বোচ্চ মূল্য বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব করে। গত সপ্তাহে রুশ তেলের আমদানির ওপরও একইরকম মূল্য বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয়।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন বলেছেন জ্বালানি রপ্তানি থেকে রাশিয়ার আয় কমাতে হবে কারণ এই পয়সা দিয়ে মি. পুতিন যুদ্ধ চালাচ্ছেন।
সম্প্রতি ফিনল্যান্ডে করা এক গবেষণা বলছে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত ছয় মাসে রাশিয়া তেল-গ্যাস রপ্তানি করে ১৫৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন অভিযোগ করেন যে, জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানির যে চুক্তি হয়েছে, সেই খাদ্যশস্য যেসব দেশের প্রয়োজন সেখানে না গিয়ে বরং ধনী দেশগুলোতে চলে যাচ্ছে। তার কথা ছিল -”উন্নয়নশীল বিশ্বের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে”
বিবিসির রাশিয়া বিষয়ক সম্পাদক স্টিভ রোজেনবার্গ বলছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের এই বক্তৃতায় ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জন্য কোন রকমের অনুশোচনা দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৯:৩০ ২৬৮ বার পঠিত #ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ #ইউরোপ ভ্লাদিমির #ইউরোপীয় ইউনিয়ন #পুতিন #রাশিয়া