বঙ্গ-নিউজ:
( একজন নির্বাচন কমিশনার, একজন আমলা ও একজন সাহিত্যিকের প্রতি শ্রদ্ধা ): পর্ব-১
-
দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় একটা লেখা ছাপা হয়েছিল। লেখাটি ছিল “ চাঁদাবাজ” । আমাদেরকে খুব আকৃষ্ট করে দিল। খুবই যুগোপযোগী একটা লেখা। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, লিখাটি নিয়ে নাটক করতে হবে। কিন্তু নাটক করবো বললেই তো আর নাটক হয়ে যায় না। একটি গল্প মাত্র চাঁদাবাজ। ঢাকার মতো বোদ্ধা নাট্যরসিকদের নিকট গল্প আকারে উপস্থাপনতো আর করা যায় না। আর তা নাটকও হবে না। সিদ্ধান্ত হলো ,মাহবুব তালুকদারের নিকট হাজির হওয়া ছাড়া ভিন্ন উপায় নেই। শেষে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার বদান্যতায় জনাব মাহবুব তালুকদারের বাসার ঠিকানা সংগ্রহ করা গেলো। সে দিন একসাথে অনেকেই ছিল, তাদের সবার নাম আজ মনে নেই। তবে যতদূর মনে করতে পারছি তারা হলো মোঃ ওমর ফারুক,আলাউদ্দিন,নিলু,ময়না,মঞ্জু, তাজুল ইসলাম, ফররুখ আহমেদ প্রমুখ। মাহবুব তালুকদারের বাসায় কি ঘটেছিল তা এখানে আর উল্লেখ করছি না। বাকি অংশটুকু “ রূপালী পর্দায় দেখুন “ না বলে বরং অন্য ভাবে নাট্যকার মাহবুব তালুকদারের ভাষ্যে শুনুন-
জনাব তালুকদার আমাদের “ চাঁদাবাজ বাংলাদেশ লিঃ “ এর প্রথম শো এর দিন উপস্থিত হয়ে যে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছিলেন তার জবানে বললেই কিছুটা পরিষ্কার হবে বলে মনে করি। তিনি নাটকটি উদ্বোধন করতে গিয়ে বলে ছিলেন, - কলিং বেলের আওয়াজে সেদিন তাড়াতাড়ি দরজা খুললাম। বেশ কয়জন যুবক-যুবতী দেখি সামনে। একটু চমকে গেলাম। দু”পক্ষ থেকেই কিছুক্ষণ নীরবতা। শুধু ওরা সালাম দিল। সালামের উত্তর দিতেও বোধ হয় ভুলে গিয়েছিলাম। জিজ্ঞেস করলাম আপনাদের আগমনের হেতু কি ? সবাই ইতস্তত। আমি ভাবলাম, এই বুঝি সত্যি সত্যি চাঁদাবাজ এসে আমাকে আক্রমণ করলো। দুদিন আগে মাত্র “চাঁদাবাজ” গল্পটি লিখেছি। বোধ হয় এরাই খাঁটি চাঁদাবাজ এবং আমার লেখায় মনোক্ষুণ্ণ হয়ে আমার কাছে এসেছে উচিৎ শিক্ষা দিতে । অনেকটা অপরাধীর মতো তাদের আসার কারণ দ্বিতীয়বার জানতে চাইলাম। একজন একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললো, আমরা আপনার কাছে এসেছি।
তাতো দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু কেন ?
তাদের মুখে বক্তব্য শুনে ঘাম দিয়ে একটা স্বস্তির শ্বাস বেড়িয়ে এলো। ওরা আমার কোন পূর্ব পরিচিত নয়। তবে এমন ভাবে ছাই দিয়ে আঁকড়ে ধরেছে যে, না বলতে পারিনি। তাদের নাকি আমার লেখা ‘চাঁদাবাজ” গল্পটি পছন্দ হয়েছ। এটা নিয়ে ঢাকার মঞ্চে নাটক করবে এবং এটা হবে তাদের গ্রুপের পরবর্তী প্রযোজনা। আমাকে তাদের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নাটকটি উদ্বোধন করতে হবে, অগ্রিম নিমন্ত্রণও দিয়ে দিয়ে দিল। এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে যাবার সময় আমি কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে বসে শুনতে ছিলাম। আমি পরে বললাম, ঠিক আছে , আপনারা নাটক করতে আগ্রহ প্রকাশ করলে আমার তাতে অমত করার কিছু তো নেই। করুন। তবে আমি উপস্থিত থাকতে পারবো কিনা বলতে পারছিনা। কিন্তু তাদের আব্দার, আমি যেন গল্পটির নাট্যরূপ দিয়ে দেই। একটি নাটক করতে হলে মঞ্চে উপস্থাপন তো আর গল্প আকারে হয় না, প্রয়োজন হয় যথাযথ সংলাপ সৃষ্টির। তারপর পাত্র-পাত্রীগণ রূপদান করেন। আমি অক্ষমতা প্রকাশ করলে তারা মানতে রাজি নয়, তারা একেবারে নাছোড় বান্দা। শেষে শত কাজের ভীড়েও আমাকে রাজি হতে হলো এবং সেই দুরুহ কাজটি করতে হলো।
(চলবে)
বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৮:০১ ৪৮২ বার পঠিত #আমলা #মাহবুব তালুকদার #শ্রদ্ধা #সাহিত্যিক