বঙ্গনিউজ : বর্বরোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) ও আপিল শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করা হয়েছে। শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ডেথ রেফারেন্সের জন্য পেপারবুক প্রস্তুত।
দেড় যুগ আগে গ্রেনেড হামলার মামলার সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে এ কথা জানিয়েছেন এটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো ওই নৃশসংতম গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও দলের নেতা-কর্মীসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ দলের কয়েকশত নেতাকর্মী। সেই ভয়াবহ হামলার ১৮তম বার্ষিকী আজ রোববার।
ওই ঘটনায় ২০১৮ সালের অক্টোবরে করা মামলার রায়ে ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং আরও ১১ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মামলাটি এখন রয়েছে দ্বিতীয় ধাপে হাইকোর্টে শুনানি শুরুর অপেক্ষায়।
এটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার মামলাটি রাষ্ট্রীয় জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নজিরবিহীন ওই হামলা চালিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে স্থবির ও ধ্বংসের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। এ কারণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলাটি শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি বরাবর দরখাস্ত করা হয়েছে। এখন মামলাটি শুনানির জন্য একটি বেঞ্চ ঠিক করে দেবেন প্রধান বিচারপতি। বেঞ্চ নির্ধারণ হলে শুনানি শুরু হবে।
কোনো মামলায় আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) মামলা নামে পরিচিত। এ অনুসারে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য বিচারিক আদালতের রায় ও নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এই ডেথ রেফারেন্স ও দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা যে আপিল করেন, সেগুলো প্রধান বিচারপতির নির্ধারণ করে দেওয়া বেঞ্চে একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে।
এটর্নি জেনারেল আশা প্রকাশ করেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ মামলার শুনানি হাইকোর্টে শুরু হবে শিগগিরই। বিচারিক আদালতে আসামিদের যে সাজা হয়েছে, তা বহাল রাখতে হাইকোর্ট শুনানিতে আইনগত দিক তুলে ধরবে রাষ্ট্রপক্ষ।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট আমলের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন দুই শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৪ জন জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) সদস্য। এছাড়া রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয় আরও ১১ জনকে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ জন: বিচারিক আদালতের রায়ে ১৯ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম (সম্প্রতি মারা গেছেন), হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, জঙ্গি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মাওলানা আবু সাইদ, হাফেজ আবু তাহের, মুফতি মঈনউদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, মো. ইউসুফ ভাট ওরফে মাজেদ ভাট, মফিজুর রহমান ওরফে মহিবুল্লাহ, আবদুল মালেক, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ, মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন ও হোসাইন আহমেদ তামিম।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ১৯ জন: যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ জন হলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ও আরিফুল ইসলাম আরিফ, জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুর রউফ, মাওলানা আবদুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মুফতি শফিকুর রহমান, হাফেজ ইয়াহিয়া, মুরসালিন, মুত্তাকিন, মুফতি আবদুল হাই, জাহাঙ্গীর বদর, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, আবু বকর সিদ্দিক ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, রাতুল আহমেদ, মো. ইকবাল, মাওলানা লিটন, শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল ও মো. খলিল।
বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জন হলেন, মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমীন, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ওরফে ডিউক, সাবেক আইজিপি শহুদুল হক, সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান, ডিএমপির সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক পুলিশ সুপার রুহুল আমীন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও সাবেক এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১২:২৫:৪৬ ৫১৪ বার পঠিত #গ্রেনেড হামলা #প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা #বাংলাদেশ