বঙ্গনিউজ : বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বিভিন্ন বড় শহরে সন্ধ্যার পর বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে গিয়ে সন্ধ্যা সাতটার পর লবিসহ ভবনের ভেতরে, বাইরে সাজানোর বাড়তি বাতি বন্ধ রাখতে বলছে বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থাগুলো।
কিছু ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক চালু রাখা লিফটের সংখ্যাও কমিয়ে ফেলতে বলা হচ্ছে।
ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড, ডেসকো এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, ডিপিডিসির কর্মকর্তারা শহরের দোকানপাট ছাড়াও ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে নানা ভবনে সন্ধ্যার পর এসে এই বিষয়ে ভবন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিচ্ছে।
দেশের অন্যান্য বড় শহরগুলোতেও বাণিজ্যিক ভবনের কর্তৃপক্ষকে একই নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
বাণিজ্যিক ভবনে যা বলা হচ্ছে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার গুলশানের একটি বাণিজ্যিক ভবনের তদারকির দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা বলছেন, “ওনারা সন্ধ্যার পরে এসেছিলেন। আমাদের লবিতে সেসময় বাতি জ্বলছিল। সন্ধ্যার পরে ভবনে ঢোকার পথে, সীমানা প্রাচীর এবং বাইরে বিল্ডিং-এর নানা অংশ সাজানোর জন্য আমরা বাতি জ্বালাই। আমাদেরকে বলা হয়েছে এসব বাড়তি বাতি না জালাতে।”
সেসময় ঐ ভবনে তিনটি লিফট চালু ছিল। সন্ধ্যার পর লিফটের সংখ্যা কমিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে।
ঢাকার বেশ কিছু এলাকা থেকে একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে।
রেইনবো অপারেশন্স বিডি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ রেজওয়ানুল কবির বিবিসিকে বলেছেন, তাদের ভবনে সন্ধ্যা সাতটার পর বাতির সংখ্যা কমিয়ে ফেলতে মৌখিকভাবে বলে যাওয়া হয়েছে।
“আমরা সেই অনুযায়ী বাতির সংখ্যা কমিয়ে এনেছি। আমাদের লিফটগুলোকে স্লিপিং মোডে রাখা হচ্ছে। শুধুমাত্র বোতাম চাপা হলে সেগুলো চালু হয়।”
গত মাসের সাত তারিখ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সারা দেশে আলোকসজ্জা না করার নির্দেশনা জারি করে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ।
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সারা দেশে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, শপিং মল, দোকানপাট, অফিস ও বাসাবাড়িতে আলোকসজ্জা না করার নির্দেশ দেয়া হয়।
জুলাই মাসের ১৯ তারিখ থেকে সারাদেশে এলাকা ভিত্তিক এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ।
যদিও বেশিরভাগ এলাকাতেই লোডশেডিং তার চেয়ে বেশি হচ্ছে। কোথাও কোথাও চার ঘণ্টার কথাও শোনা যাচ্ছে।
তবে এখন বাণিজ্যিক ভবনে লবিসহ ভেতরে বাইরে সাজানোর বাতিও কমিয়ে ফেলতে বলা হচ্ছে।
বড় ধরনের বিদ্যুৎ সংকট কাটিয়ে উঠতে দেশের সকল শিল্প কারখানায় এলাকা ভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন ছুটির দিন নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আজই সেনিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
যা বলছে কর্তৃপক্ষ
আলোকসজ্জা বিষয়ক নির্দেশনা জারি করার আগে চলমান গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট কাটিয়ে উঠতে সম্ভাব্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আলোচনা হয়েছে।
দরকার হলে অফিস আদালতে করোনা মহামারি কালে গড়ে ওঠা হোম অফিস আবার চালু, শীততাপ যন্ত্রের ব্যাবহার নিয়ন্ত্রণ করা এবং সরকারি অফিস আদালতে দরকারে কাজের সময় কমিয়ে আনা এরকম বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে।
দেশজুড়ে চলমান লোডশেডিং শীতকালের আগে শেষ হবে না বলেও সরকারের তরফ থেকে ধারনা দেয়া হয়েছে।
ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: কাউসার আমীর আলী বিবিসিকে বলেন, সন্ধ্যে সাতটা থেকে তাদের ভিজিলেন্স টিম বের হয়। তারা দেখে যে কোথাও বাড়তি আলোকসজ্জা আছে কিনা।
“কেউ না বুঝে করে ফেললে ওই আলোকসজ্জা আমরা বন্ধ করে দেই…কোথাও অতিরিক্ত লাইট জালানো থাকলে সেটার কথা বলা হচ্ছে। বাণিজ্যিক ভবনগুলোকে অনুরোধ করা হচ্ছে। তাদের বাধ্য করা হচ্ছে না। আমরা করিডোরের বাতির কথা বলছি না। বলছি বাড়তি বাতির কথা।”
ডিজেল, পেট্রলসহ সমস্ত জ্বালানি তেলের দাম ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি
তিনি জানিয়েছেন, সরকারের তরফ থেকে তাদেরকে আলোকসজ্জা কমানো ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রাম বিতরণ অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী অশোক চৌধুরী বিবিসিকে জানিয়েছেন তারা বাড়তি বাতি না জ্বালানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। “যদিও ভবনগুলো নিজেরাও এটা করছে। কারণ লোড শেডিং-এর কারণে তাদের যেহেতু জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। জেনারেটর চালানো তাদের জন্য কস্টলি হয়ে যাচ্ছে।”
বাংলাদেশ সময়: ১৩:২৬:১০ ৩২১ বার পঠিত #জ্বালানি #বাংলাদেশ #বাণিজ্য