বঙ্গ-নিউজ ডটকম:সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও তুরস্ক। এর সাথে জার্মানিও হাত মেলাবার ঘোষণা দিয়েছে। সৌদি আরব ও জর্ডান পশ্চিমাদের সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন আয়োজন শুরু করেছে।অন্যদিকে রাশিয়া, চীন ও ইরান সিরিয়াতে হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করছে। দেশগুলো হামলা করতে ইচ্ছুক রাষ্ট্রগুলোকে এ বলে হুঁশিয়ারও করছে যে, হামলার ফল ভালো হবে না।কিন্তু এ বাকযুদ্ধ কি সিরিয়াতে হামলা বন্ধ করতে পারবে? গত এক দশকে ইরাক, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের অনেক স্থানেই বাকযুদ্ধ যুদ্ধ বাধাতে ইচ্ছুক রাষ্ট্রগুলোকে থামাতে পারেনি। আন্তর্জাতিক বিধি, নীতি, নৈতিকতা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, প্রমাণ, সত্যতা ইত্যাদির তোয়াক্কা না করেই যুদ্ধ শুরু হয়েছে। আর তাতে যে শান্তির বদলে অশান্তিই বেশি ছড়িয়েছে, তাও অমোঘ সত্য। তবুও বিশ্ব হয়তো আরেকটি যুদ্ধ দেখতে যাচ্ছে। এ নিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়া হলো এখানে।
সামরিক হামলা কী আইনসিদ্ধ হবে?
সিরিয়ার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা এখনো বিতর্কের বিষয়। সামরিক হামলার পক্ষপাতীরা বলছেন, রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশন ১৯৯৩ অনুযায়ী, এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ। কিন্তু সমস্যা হলো সিরিয়া এ কনভেনশনে এখনো অনুসম্মতি প্রদান করেনি। কনভেনশনের সমর্থকেরা মনে করেন, এটি আন্তর্জাতিক আইনে পরিণত হওয়া উচিত। কিন্তু এ জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে একমত হতে হবে।
আবার, যদি কোনো রাষ্ট্র তার নাগরিকদের রক্ষায় ব্যর্থ হয়, তবে আন্তর্জাতিক মহল ব্যবস্থা নিতে পারবে। ২০০৫ সালের জাতিসংঘের বিশ্ব সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ ধরনের পদক্ষেপ সিদ্ধ, কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নিতে হলে তা অবশ্যই ‘জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সম্মতির ভিত্তিতে হতে হবে।’
রাসায়নিক হামলার প্রমাণ কী?
গত ২১ আগস্টে দামেস্কের উপকণ্ঠে গোওতা এলাকায় রাসায়নিক হামলা নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। তাতে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এ হামলা চালাল কে? পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো, তুরস্ক ও আরব লীগ বলছে, হামলার জন্য দায়ী সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের লোকজন। রাশিয়া ও ইরান বলছে এর জন্য দায়ী সরকারবিরোধীরা। এ দুই রাষ্ট্রের অভিযোগ পশ্চিমাদের সিরিয়ায় হামলা চালাতে উত্সাহিত করতে বিদ্রোহী বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে অনেক মানুষের মৃত্যু ডেকে এনে, মানবিক বিপর্যয়কে প্রকট করে তুলতে চাইছে।
মার্কিন গোয়েন্দারা বলছে, হামলার পর তারা সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ফোনালাপ রেকর্ড করেছে এবং তা থেকে জানতে পেরেছে, ওই কর্মকর্তারা রাসায়নিক হামলা নিয়ে কথা বলেছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও একটি রাসায়নিক অস্ত্র বিভাগকে প্রশ্ন করেছেন, এ হামলার কীভাবে হলো, তা ব্যাখ্যা করতে।
যদি গোয়েন্দাদের বক্তব্য সঠিক হয়, তবে হামলার জন্য সেনাবাহিনী দায়ী, এটি সত্য। কিন্তু এরপরও প্রশ্ন থেকে যায়।
কেন জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে চাইছে না পশ্চিমারা?
মার্কিন ও ব্রিটিশ কর্মকর্তার বলছে, সিরিয়ার সরকার জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের কাজ শুরু করতে দিয়েছে ঘটনার পাঁচ দিন পর। এত দিনে হামলার অনেক নমুনা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা। তবে জাতিসংঘ বলছে, পাঁচ দিন পরেও অনেক নমুনা থাকবে, যা থেকে হামলার প্রকৃতি আঁচ করা যাবে।
তবে পর্যবেক্ষকেরা এটাও জানিয়েছেন যে, সংগৃহীত নমুনা থেকে হামলায় ব্যবহূত গ্যাস ও পদার্থের চরিত্র বোঝা যাবে, নামও জানা যাবে, তবে কারা কাজটি করেছে, তা নিশ্চিত হওয়া যাবে না।
এ কারণে পশ্চিমা দেশগুলো দেরি করতে চাইছে না। তারা বলছে, এটা কেবল সময়ক্ষেপণ। কারণ নিজেদের গোয়েন্দাদের থেকে তারা এটা জেনেছে যে, হামলা নিশ্চিতভাবে সেনাবাহিনী-ই চালিয়েছে; বিদ্রোহীরা নয়।
তবে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার পর যে প্রতিবেদন আসবে, তাতে হয়তো কিছু বিষয় পরিষ্কার হওয়া যাবে। যেমন, কোন ধরনের পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে, সেটির প্রাণঘাতী হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু এবং কীভাবে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ইত্যাদি। এতে হয়তো পশ্চিমাদের দাবিটিই আরও পোক্ত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ৩:১৩:০২ ৪৩৭ বার পঠিত