বঙ্গ-নিউজ: ঢাকায় ৫২তম সীমান্ত সম্মেলনে আজ শেষ হয়েছে। মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫ দিনব্যাপী এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন বিএসএফ মহাপরিচালক পঙ্কজ কুমার সিং ও বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদল।
সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে বিজিবি মহাপরিচালক ভারতীয় প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং এই সুসম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিজিবি মহাপরিচালক এ সময় সীমান্ত হত্যার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এটি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি আহ্বান জানান।
মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের চোরাচালান, মানব পাচার, অবৈধ সীমান্ত পারাপার এবং সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে আলোকপাত করেন বিজিবি মহাপরিচালক। এসব অপরাধ দমনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএসএফের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।
সম্মেলনে উভয় পক্ষই সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিজিবি ও বিএসএফের যৌথ কার্যক্রমের মাধ্যমে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করে।
বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সীমান্তে উভয় দেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা, আহত ও মারধরের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে অধিক সতর্কতামূলক ও কার্যকরী উদ্যোগ হিসেবে সীমান্তে যৌথটহল জোরদারকরণ বিশেষ করে রাত্রিকালীন টহল পরিচালনার ব্যাপারে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা-সিবিএমপির ওপর গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন নিষিদ্ধ পণ্যসামগ্রী পাচার যেমন- মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্য (বিশেষ করে ইয়াবা) পাচার, আগ্নেয়াস্ত্র, জালমূদ্রা, স্বর্ণ চোরাচালানসহ বিভিন্ন ধরনের সীমান্ত অপরাধ দমনের লক্ষ্যে সিবিএমপি বাস্তবায়ন এবং উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী উপকৃত হবে এমন তথ্য আদান-প্রদানে দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে।
এছাড়াও, আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন/অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, মানব পাচার, সীমান্ত পিলার উপড়ে ফেলা ও অন্যান্য সীমান্ত অপরাধ থেকে সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে বিরত রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
উভয় পক্ষ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে বলপূর্বক বাস্তুচ্যূত মায়ানমার নাগরিকদের অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে যথাযথ ও দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের ব্যাপারেও একমত হয়েছে। সর্বোপরি উভয় পক্ষ সীমান্তের অলঙ্ঘনীয়তা বজায় রাখার ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান করেছে।
সীমান্তের উন্নয়নমূলক কাজের বিষয়ে জানানো হয়েছে, উভয় পক্ষ ১৫০ গজের মধ্যে বন্ধ থাকা উন্নয়নমূলক কাজ করার বিষয়ে নিজ নিজ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সম্পৃক্ত করে বিষয়টি ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে পারস্পরিক সম্মতি জ্ঞাপন করেন। পারস্পরিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে যৌথ নদী কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত সীমান্তের অভিন্ন নদী সমূহের বন্ধ থাকা তীর সংরক্ষণ কাজ পুনরায় শুরু করার জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে একসারি বিশিষ্ট কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ কাজ অনুমোদিত স্থান ও অনুমোদিত ডিজাইন অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তিকল্পে উদ্যোগ গ্রহণ করার বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিজ নিজ সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির বিষয়টি তুলে ধরে উভয় পক্ষই এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ, সুনির্দিষ্ট তথ্য আদান-প্রদান ও নিজ নিজ সীমান্তে প্রয়োজনীয় আভিযানিক তৎপরতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছেছে।
সম্মেলনে রাজশাহী সীমান্তের চর মাজারদিয়া ও খানপুর এলাকায় বসবাসরত স্থানীয় জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা নদীর ভারতীয় অংশের ১.৩ কিলোমিটার চ্যানেল ব্যবহারের অনুমতি প্রদানের বিষয়ে আলোচনা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা আখাউড়া-লাকসাম রেলওয়ে প্রকল্পের কাজ যথাশীঘ্র পুনরায় শুরু করতে ভারতের পক্ষ থেকে সম্মতি পাওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন পাওয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হবে, এমন আশ্বাস দেন বিএসএফ মহাপরিচালক।
উভয় পক্ষ বিদ্যমান পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট ও আস্থা বৃদ্ধির জন্য সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার আওতায় বিভিন্ন খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, যৌথ রিট্রিট সিরিমনি, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, পারস্পরিক সাক্ষাৎ ইত্যাদি বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণে সম্মত হয়েছে।
সর্বোপরি বিজিবি ও বিএসএফ মহাপরিচালক সীমান্তে শান্তিপূর্ণ অবস্থান এবং একটি অপরাধমুক্ত সীমান্ত নিশ্চিতকল্পে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৬:০২ ২৫৫ বার পঠিত #অনুপ্রবেশ #দৃঢ় অবস্থান #সীমান্ত সম্মেলন