বঙ্গনিউজ খেলার খবর : তাঁর মৃত্যুর পর দেড় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু বিতর্ক থামেনি। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর থেকেই প্রশ্নটা উঠছে। চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলাই আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির মৃত্যুর কারণ নয় তো?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই অস্ত্রোপচারের পর কিংবদন্তির চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত আটজনকে দাঁড়াতে হবে আদালতের কাঠগড়ায়।
আর্জেন্টিনার এক বিচারক কাল এই আটজনের বিরুদ্ধে ‘অবহেলাজনিত হত্যাকান্ড’-এর অভিযোগ গঠন করেছেন। ২০২৩ সালের শেষ থেকে ২০২৪ সালের শুরুর মধ্যে আদালতে উঠতে পারে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস। অভিযুক্ত এই আটজনের মধ্যে আছেন ম্যারাডোনার পারিবারিক চিকিৎসক ও নার্স।
২০২০ সালে ম্যারাডোনার মস্তিস্কে অস্ত্রোপচারের পর যখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তখন অভিযুক্ত এই আটজন ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে মৃত্যুটা এড়ানো যেত’ বলে মনে করা হচ্ছে। তথ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে এই অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
’৮৬ বিশ্বকাপ কিংবদন্তির মস্তিস্কে রক্ত জমাট বাঁধায় অস্ত্রোপচার করানো হয়। মাদকাসক্ত হয়ে পড়ায় ৬০ বছর বয়সী ম্যারাডোনার শরীরে আরও নানারকম জটিলতা ছিল। কোকেন এবং মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বুয়েনস আয়ার্সে এক বাড়িতে সুস্থ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলেন ম্যারাডোনা। কিন্তু তাঁকে বিছানায় মৃত পাওয়া যায়, সেটি অস্ত্রোপচারের দুই সপ্তাহ পর। তখন হার্ট অ্যাটাককে মৃত্যুর কারণ বলা হয়েছিল।
আর্জেন্টিনার এক সরকারি কৌঁসুলির নেতৃত্বে চিকিৎসাবিদ্যায় ২০ জন বিশেষজ্ঞের প্যানেল গত বছর জানান, ম্যারাডোনার ‘চিকিৎসায় প্রচুর ঘাটতি এবং অনিয়ম করা হয়েছে।’ তখন বলা হয়েছিল তাঁর যেসব অসুস্থতা ছিল, সেজন্য সঠিক ও পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পেলে ‘বাঁচার সুযোগটা আরও বেশি থাকত।’
তদন্তে বিশেষজ্ঞরা বুঝতে পারেন, ম্যারাডোনার সেবা–যত্নের দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, সবাই অবহেলা করেছেন, ‘দীর্ঘ একটা সময়’ তাঁকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়ায় মৃত্যু হয়। কৌঁসুলিরা তাই অবহেলাজনিত হত্যাকান্ডের অভিযোগ গঠন করেছেন ম্যারাডোনার সেবা–যত্নের দায়িত্বে থাকা সেই আটজনের বিরুদ্ধে। অভিযোগটা হলো, তাঁকে ‘ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
অভিযুক্তরা হলেন ম্যারাডোনার পারিবারিক চিকিৎসক ও নিউরোসার্জন লিওপোল্ডো লুক, মনোবিদ অগাস্তিনা কোসাচোভ, মনোবিদ কার্লোস দিয়াজ, চিকিৎসা–সমন্বয়ক ন্যান্সি ফোরলিনি, নার্সিং সমন্বয়ক মারিয়ানো পেরোনি, সেবিকা রিকার্দো আলমিরন ও দাহিয়ানা মাদ্রিদ এবং চিকিৎসক পেদ্রো পাগলো দে স্পাগানা।
এসব বিবাদীর বিরুদ্ধে কৌঁসুলিদের অভিযোগ, ম্যারাডোনার ঘরে তাঁরা যে ‘হাসপাতালের মতো ব্যবস্থা করেছিলেন, তা ছিল বেপরোয়া এবং তাতে ঘাটতি ছিল।’ অভিযোগ প্রমাণ হলে আট থেকে সর্বোচ্চ ২৫ বছরের জেল হতে পারে। তবে অভিযুক্ত সবাই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং কাউকে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরুর আগে আটক করা হয়নি।
ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর লুকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করেছিলেন তাঁর দুই সন্তান। বাবার স্বাস্থ্যের অবনতির জন্য এই চিকিৎসককে দায়ী করার পর তদন্ত শুরু হয়। কিডনি, যকৃৎ ও হৃদপিন্ডের সমস্যায় ভুগছিলেন ম্যারাডোনা। ১৯৮৬ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যারাডোনার বিখ্যাত সেই ‘শতাব্দীর সেরা গোল’ ও ‘হ্যান্ড অব গড গোল’ –এর ৩৬ বছর পূর্তির দিনে আদালত এই বিচারিক প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দিল।
২৩৬ পৃষ্ঠার এই নির্দেশনামা দেখেছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। ম্যারাডোনার এক ছেলের আইনজীবী মারিও বাউদ্রাই রয়টার্সকে বলেছেন, বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি মৃত্যুর সময় ‘অসহায় অবস্থায় ছিলেন। যখনই আমি মৃত্যুর কারণটা দেখেছি, তখনই বলেছি এটা হত্যাকান্ড। এটা নিয়ে দীর্ঘদিন লড়াই করে এখন এই পর্যন্ত আসা গেল।’
এই মামলার বিচারক জানিয়েছেন, বিবাদীদের পক্ষের কিছু আইনজীবী মামলাটি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছেন। মনোবিদ কোসাচোভের আইনজীবী ভাদিম মিসচানচুক জানিয়েছেন, তিনি আপিল করবেন। কারণ, তাঁর মক্কেল যে বিষয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন, তার সঙ্গে ম্যারাডোনার মৃত্যুর কোনো যোগসূত্র নেই বলে দাবি করেছেন এই আইনজীবী।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৮:০০ ২৭৯ বার পঠিত #আর্জেন্টিনা #ডিয়েগো #ফুটবল #ফুটবল বিশ্বকাপ #ম্যারাডোনা