বঙ্গনিউজঃ প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাক্ষের পদত্যাগের পর বিরোধী একটি দল থেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়ার পরও শ্রীলঙ্কার সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তারা এবার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন।
এক সপ্তাহের সহিংস সংঘর্ষে নয়জন নিহত এবং ৩০০ জনেরও বেশি আহত হওয়ার পর শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষে প্রবীণ বিরোধী রাজনীতিবিদ রনিল বিক্রমাসিংহে’কে বৃহস্পতিবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন।
গোতাবায়া রাজাপাক্ষের বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাক্ষে গত সোমবার পদত্যাগ করে একটি সামরিক ঘাঁটিতে আত্মগোপনে চলে গেছেন।
শত শত বিক্ষোভকারী এখনো শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে প্রেসিডেন্টের অফিসের বাইরের প্রতিবাদ শিবিরে রয়ে গেছেন। গত একমাস ধরে তারা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে সেখানে অবস্থান করছেন।
সেখানে অবস্থান করা চামালগে শিবকুমার নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমাদের জনগণ যখন ন্যায়বিচার পাবে তখন আমরা এই সংগ্রাম বন্ধ করব। তারা যাকেই প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করুক না কেন, জনগণ স্বস্তি না পাওয়া পর্যন্ত আমরা এই সংগ্রাম বন্ধ করব না’।
নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে তার ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) একমাত্র সংসদ সদস্য হওয়ায় নতুন সরকার গঠনের জন্য তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরই নির্ভর করতে হবে।
রাজাপাক্ষের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট শ্রীলঙ্কার সংসদের ২২৫টি আসনের মধ্যে প্রায় ১০০টি আসন দখল করে রেখেছে। প্রধান বিরোধী জোটের রয়েছে ৫৮টি আসন। বাকিরা স্বাতন্ত্র।
বিক্রমাসিংহে দায়িত্ব নেওয়ার পরই একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠনের চেষ্টা শুরু করেছেন। তিনি বিরোধী দলের সংসদ সদস্য হার্শা ডি সিলভাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু হার্শা ডি সিলভা প্রকাশ্যেই তা প্রত্যাখ্যান করে গোতাবায়ার পদত্যাগ দাবি করেছেন।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘জনগণ কোনো রাজনৈতিক খেলা এবং চুক্তি চায় না, তারা একটি নতুন ব্যবস্থা চায়, যা তাদের ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করবে’।
ডি সিলভা বলেন, তিনিও প্রেসিডেন্ট গোতাবায় রাজাপাক্ষেকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ‘জনগণের সংগ্রামে’ যোগ দিচ্ছেন এবং প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ ছাড়া কোনও রাজনৈতিক মীমাংসায় সমর্থন দেবেন না’।
ডি সিলভা শ্রীলঙ্কার সংসদের বৃহত্তম বিরোধী দল সামাগি জনা বালাওয়েগয়া (এসজেবি) দলের একজন সদস্য। দলটি গোতাবায়া রাজাপাক্ষের পদত্যাগ ছাড়াই জাতীয় ঐক্যের সরকারকে সমর্থন করা নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
ওদিকে, বিক্ষোভকারীরা বলছেন যে, বিক্রমাসিংহের নিয়োগ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ক্ষোভ কমাতে তেমন কিছু করবে না। কারণ শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টই এই সংকটের জন্য দায়ী।
অন্যদিকে, চলতি সপ্তাহেই নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষে। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে গোতাবায়ে রাজাপাক্ষে জানান, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও দেশের কার্যক্রম পরিচালনায় নতুন সরকার গঠনে আমি পদক্ষেপ নিচ্ছি। তার ক্ষমতা কমিয়ে সংসদের হাতে আরও ক্ষমতা দেওয়ার জন্য কিছু সাংবিধানিক সংস্কার করা হবে বলেও জানান তিনি।
তার আগে গত বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে গোতাবায় রাজাপাক্ষে জানান, তিনি পদত্যাগ করবেন না। দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকারও করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিক্রমাসিংহে সতর্ক করে দেন যে, আগামী মাসগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এবং আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি পেতে তিনি আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা জাতিকে এমন একটি অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে চাই যেখানে আমাদের জনগণ আবার তিনবেলা খাবার খেতে পাবে’।
আজ শুক্রবার বিক্রমাসিংহে শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের পর বিদেশি কোনো সরকারের সঙ্গে এটাই তার প্রথম প্রকাশ্য যোগাযোগ।
কলম্বোর ভারতীয় হাইকমিশন এক টুইটে বলেছে, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং স্থিতিশীলতার জন্য অব্যাহত সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’।
এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে প্রধান শিপিং রুটের ওপর অবস্থিত হওয়ায় ভু-রাজনৈতিক কৌশলগত দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ দেশ শ্রীলঙ্কা। যে কারণে দেশটির ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্য চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে ভারত। দেশটির প্রধান অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে দুটি দেশেরই ব্যাপক বিনিয়োগ রয়েছে।
রনিল বিক্রমাসিংহেকে পশ্চিমা-পন্থী মুক্ত-বাজার সংস্কারবাদী হিসেবে দেখা হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং অন্যদের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে
বাংলাদেশ সময়: ১৭:২৯:০৯ ৪১৬ বার পঠিত #আন্দোলন চলমান #নতুন প্রধানমন্ত্রী #শ্রীলঙ্কা