বঙ্গ-নিউজ ডটকম:প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সিরিয়া পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করার পর যুক্তরাষ্ট্রের চারটি যুদ্ধজাহাজ যাত্রা করেছে ভূমধ্যসাগরে। ওই যুদ্ধজাহাজ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সংবলিত। এর মাধ্যমে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে তাদেরকে কোন সামরিক শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেয়া হয় নি গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল বলেছেন, সংঘাতময় সিরিয়া পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য করণীয় নির্ধারণের জন্য পেন্টাগন অগ্রসর হচ্ছে। ভূমধ্যসাগরে বাড়ানো হচ্ছে মার্কিন নৌবাহিনীর শক্তি। শুক্রবার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সিরিয়া পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেন। তার ওপর সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহারের প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে বিভিন্ন দেশ। ওদিকে বুধবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছে সরকারি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যা করেছে বলে যে অভিযোগ আছে সেখানে পৌঁছার জন্য দামেস্কে পৌঁছেছেন জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক প্রধান আঙ্গেলা কেনি। তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছার চেষ্টা করছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, তিনি সিরিয়ায় এত বিপুল মানুষের প্রাণহানির পক্ষপাতহীন একটি তদন্ত করার বিষয়ে প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল মালয়েশিয়া সফর করছেন। তিনি সেখানে সাংবাদিকদের বলেছেন, বিভিন্ন দেশ থেকে সিরিয়া পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপের জন্য চাপ আসায় প্রেসিডেন্ট ওবামা পেন্টাগনকে সম্ভাব্য পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশ মতোই ভূমধ্যসাগরে যুক্তরাষ্ট্র তার শক্তি বাড়াচ্ছে। প্রেসিডেন্ট যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেই মতো তারা কাজ করবেন। তবে মার্কিন নৌবাহিনী সিরিয়ায় সামরিক শক্তি প্রয়োগের কোন নির্দেশ গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পায় নি। গত বুধবার সিরিয়ার সরকার দামেস্কের বাইরের দিকে একটি এলাকায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যা করে বলে অভিযোগ আছে। বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সারি সারি লাশ। তার মধ্যে শিশুদের লাশই বেশি। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরোধীরা দাবি করছেন, সরকার এসব মানুষকে হত্যা করেছে। নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ১৩০০। ওদিকে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের মিত্র রাশিয়া অভিযোগ করেছে, এ সব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বিদ্রোহীরা। এমন অবস্থায় সিএনএনকে শুক্রবার একটি সাক্ষাৎকার দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনও নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা। গত বছর তিনি সতর্ক করেছিলেন সিরিয়া রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারে ‘রেড লাইন’ বা চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করতে পারে। তাতে যুক্তরাষ্ট্র চরম জবাব দেবে। এবার যদি সেই অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। তবে কি হবে সেই পদক্ষেপ সে সম্পর্কে তিনি পরিষ্কার করেন নি। ওদিকে বার্তা সংস্থা এএফপি লিখেছে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সিরিয়া ইস্যুতে সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত বেছেও নিতে পারেন। তিনি তেমন সিদ্ধান্ত বেছে নিলে সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে পেন্টাগন তার অবস্থান শক্তিশালী করবে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ওবামা যদি দামেস্কে শাসকগোষ্ঠীকে আক্রমণের নির্দেশ দেন তাহলে সে নির্দেশ পালন করতে মার্কিন কমান্ডাররা প্রস্তুত। ওদিকে যে ইরানকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে জানেন সেই ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করায় বিপুল সংখ্যক মানুষ নিহত হয়েছে। সেখানে যাতে আর এ অস্ত্র ব্যবহার করা না হয় তা প্রতিরোধে তিনি আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। তবে কে এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলেন নি। এর আগে তেহরান এমন অস্ত্র ব্যবহারের দায়ে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের অভিযুক্ত করেছিল। প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের কারণে সিরিয়ায় নিরপরাধ অনেক মানুষ শহীদ হয়েছেন। অনেকে হয়েছেন আহত। এটা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানাই। ওদিকে পশ্চিমা গোয়েন্দারা প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পেয়েছে যে, সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এমন তথ্য সংগ্রহে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৫০:০১ ৪০৮ বার পঠিত