মাহমুদ উন নবী তালুকদার, বঙ্গনিউজ ডট কম:দুই আর দুই যোগে চার হয় , দুই আর দুই গুণে চার হয় এবং তিন আর এক যোগেও চার হয় । ফলাফল একটাই, নিয়ম শুধু একটু ভিন্ন । উপরুক্ত বিশেষ কোন গাণিতিক ফরমূলা না হলেও আমাদের দেশের রাজৗনতিকদের বেলায় এটা একটা ফরমূলা বলা যায় ৗবকি । বাংলাদেশের বৃহৎ রাজৗনতিক দলগুলো বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করে উদ্দ্যেশ্য একটাই ক্ষমতার মসনদ ধরা ।স্বাধীনতার পর যত সরকার এসেছে কিছু না কিছু তো দলের গন্ডীর মধ্যে থেকেও দেশের জন্য করেছে , কিন্তু প্রাপ্তির সুবাতাস আপামর জনতার দোর গোড়া পর্যন্ত থোড়াই গিয়েছে । স্বাধীনতার ৪২ বছর পর আজোও বাসন্তিদের দেখা যায়, ফুটপাতে আর ভাগাড়ে কংকালসার মানুষের আনাগোনা । তারপরও দেশ এখন অনেক উন্নত হয়েছে । আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বেড়েছে মানুষের জীবন যাত্রার মান, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ,সর্বোপরি শিক্ষা,শিল্প, সংস্কৃতিক জীবন মান সব দিক থেকে বাংলাদেশ প্রভুত উন্নতি সাধন করেছে । কিন্তু তবৃও ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এ অসহায় মানচিত্রের চাপা কান্না যেন প্রতিনিয়ত শুনতে পাই । হিংসার রাজনীতি, জাতি বিভক্তিকরন , পরান্নভোজিদের অপসংস্কৃতিতে অবগাহন, দেশের সম্পদ লুটপাট, সু-শাসনের অভাব ইত্যাদী বহুবিদ কারনে ।
দুই ,
কৃষি প্রধান বাংলাদেশের শিল্পের জয়-জয়কার , বিশেষ করে মোট রপ্তানী আয়ের ৭০ ভাগই আসে পোশাক শিল্প খাত হ’তে , তারপরে আসে ঔষধ, চামড়া, সফটওয়ার শিল্প হ’তে । সাম্প্রতিক সময় গূলোতে রাজৗনতিক অস্থিরতায় এ শিল্প খাতে মারাত্মক অশনি সংকেত লক্ষ্য করা যায় । বন্ধ হচ্ছে বিদেশী বিনিয়োগ । কয়েকদিন আগে কাতারের আমীর বাংলাদেশে পূর্ব পরিকল্পিত সফর বাতিল করেছেন । সম্ভাব্য শতকোটি ডলারের প্যাকেজ বিনিয়োগ বাতিল একটি বিপদ সংকেতই বলা যায় ।এ নিয়ে নানাজনে নানা রকম কথা বার্তা বললেও মূলত এটা যে রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্ট ফল তা বলাই বাহুল্য । উপরুস্ত বেশ কয়েক বছর যাবত জনশক্তি রপ্তানী খাতেও ব্যপক ধ্বস নেমেছে , কমেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ । মন্ত্রীবর্গ এসব নিয়ে যতই বাগাড়ম্বর করুক আসলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না ।
অস্তিত্ত্বের স্বার্থেই তাদের বাস্তবতা বুঝা উচিৎ ,নেয়া দরকার সময়োচিত পদক্ষেপ , আর এ জন্যে দরকার জাতীয় ঐক্যের আহবান এবং
তা কার্যকর রাখা । বরং তা না হয়ে তাদের অপার জেদের বলি হ্েচছ দেশ-জনতা ।
দীর্ঘ ৪২ বছরে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির সরকার (১৯৭২-৭৫ এবং ১৯৯৬-২০০১ সন পর্যন্ত) দু’বার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়ায় যেমন আম জনতার এখন প্রধান প্রশ্ন , ঠিক তেমনি আরো প্রশ্ন জাগে যখন দেখি জনগনের টাকায় লালিত পুলিশের গুলিতে অসংখ্য লোকের প্রান হানির বিচার না হওয়া , দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের প্রমান স্বাপেক্ষে বিচার না করে বরং অন্যের কাধে দোষ চাপিয়ে দায়মুক্ত থাকা । আরও প্রশ্ন জাগে যখন পদ্মা সেতুর দূর্নীতি, হলমার্ক কেলেংকারী,শেয়ার বাজার ধ্বংস, ডেসটিনির অপকর্ম ইত্যাদীর বিচার ও শ্বেতপত্র প্রকাশ না করা । বর্তমান সরকার প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় তথ্য অধিকার আইনের প্রচারনা চালায় কিন্তু জনগন উপরুক্ত অপকর্মের প্রকৃত তথ্য জানার পরিবর্তে আরো তথ্য বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে ।
তিন ,
প্রশাসনে চলছে চরম অস্থির-অরাজকতা । সরকার একদিকে আর্ন্তজাতিক ট্রাইবুনালের নামে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির রায় ঘোষনা করেছে অন্যদিকে এ বিচার ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে তথাকথিত গনজাগরন মঞ্চ নামে এক আইন প্রতিপক্ষ বাহিনী তৈরি করেছে । দেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে যারা বিচার বিভাগকে অমান্য করে, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, দেশের সকল প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের নির্বাহী আদেশের আওয়ায় এনে বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশকে একটি হাসির খোরাকে পরিনত করতে চায় সরকার তাদের বিরোদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উপরুন্ত তাদেরকে বিশেষ বাহিনী দিয়ে রাস্ট্রিয় নিরাপত্তা দেয় আবার সেই বিশেষ বাহিনী দিয়েই বিরোধী দল/ মতের লোকদের নির্¤§ম ভাবে নির্যাতন করে । ফলশ্র”তিতে বেড়ে গেছে দেশব্যাপী চরম নৈরাজ্য, গুম, খুন, পুলিশের উপর আক্রমন , হরতাল-অবরোধের নামে জনগনের সম্পদ ধ্বংস ইত্যাদী । দুষ্টের দমন শিষ্টের লালনের পরিবর্তে এখন হচ্ছে উল্টো । উদাহরণ সরুপ বলা যায় ব্লগার রাজিব হায়দার তার কিছু আপত্তিকর ইসলাম বিরোধী মন্তব্যের জেরে খুন হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজিবের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিকে নির্মূলের ঘোষনা দেন যা অদ্যবধিও প্রমানিত হয়নি যে এতে জামায়াত-শিবির জড়িত কিনা পক্ষান্তরে সংখ্যলঘুদের ত্রান কর্তা হিসেবে (!) বিশ্বজিতের প্রকাশ্য ও নির্মম খুনি তথা ছাত্রলীগকে নিয়ে বিন্দু মাত্রও উচ্চ বাচ্য করলেন না। এমনকি বিশ্বজিতের পরিবারকে সান্তনা দেয়ার প্রয়োজনও মনে করলেন না । উপরুন্ত কতিপয় ইসলাম বিরোধী ব্লগারকে রাষ্ট্রিয় নিরাপত্তা দিয়ে সরকার যেমন সকল বিবাদমান ইসলামী দলকে একত্রিত করার সুেেযাগ করে দিয়েছে তেমনি বিশ্বজিতের খুনিদের বিচার না করা তথা সংখ্যলঘুদের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান না করায় সরকার সংখ্যালঘুদেরও বিরাগ ভাজন হচ্ছে ।
মোটকথা দেশের এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি উত্তরনের একমাত্র পথ হল দলীয় সংকীর্নতার উর্ধে উঠে রাজৗনতিক ঐক্য গড়া ।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশের উম্মত্ত যুদ্ধনীতিতে যখন পরাক্রমশালী আমেরিকার অর্থনীতি শয্যাশায়ী ,তার উত্তরসূরী প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামা শুধুমাত্র দেশের স্বার্থে দলীয় সংকীর্নতার উর্দ্ধে উঠে সেই সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রন করে তাকে পরামর্শকের আসনে অধিষ্ঠিত করেন ।শুধু মাত্র দেশের স্বার্থেই ভারতের কংগ্রেস সরকার সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে কাছে টানে মন্ত্রকের ভুমিকায় । তাহলে আমাদের নেতা-নেত্রীরা কেন পারেন না ক্ষণিকের জন্য দেশের স্বার্থে একত্রিত হও্রয়ার নজির স্থাপন করতে?
বাংলাদেশ সময়: ২৩:১১:৩৬ ৫৩১ বার পঠিত