দিবাকর দে, ১৯৭৫ সালের ৩০ শে জুন ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার বনবাংলা গ্রামের একটি মধ্যবিত্ত সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন । মা গৌরী রানী দে একজন গৃহিণী এবং বাবা হিমাংশু কুমার দে ছিলেন প্রতিমা শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি মঞ্চনাটকে অভিনয়, গান, হারমোনিয়াম ও তবলা বাজানো ইত্যাদি প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। দিবাকর স্কুল জীবন থেকেই মঞ্চনাটকে অভিনয়, গল্প-উপন্যাস, পত্রিকা ও ম্যাগাজিন পড়তেন। সেই সূত্রে লেখালেখির হাতে খড়ি। জাতীয় দৈনিক এবং স্থানীয় পত্রিকাতে তাঁর কিছু লেখা প্রকাশিত হয়। তিনি ১৯৯০ সালে বনবাংলা এফ রহমান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন এবং ১৯৯৪ সালে ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইলেক্ট্রিক্যাল) পাস করেন। এর পর চলচ্চিত্রে অভিনয়ের নেশায় চলে আসেন ঢাকাতে এবং ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি পাস কোর্সে।
১৯৯৬ সালে পার্শ্ব নায়ক হিসেবে ইসমাইল হোসেনের “ফতোয়াবাজ” চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করলেও ছবিটির শেষ পর্যন্ত অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কারণ পরিচালক ডিভি লটারিতে আমেরিকা চলে যাওয়ার কারণে। প্রথম ছবিতেই এরকম হওয়ার কারণে তিনি আবারও পড়ালেখায় মন দেন এবং ১৯৯৭ সালে টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ট্রিপল ই(ইইই) তে ১০ টি আসনের বিপরীতে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেন এবং ভর্তি হন। প্রথম সেমিস্টার যখন শেষ পর্যায়ে তখন চাকরি হয় ওয়্যারলেস টেলিকমিউনিকেশন প্রযুক্তি “সেবা টেলিকম” প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে। পরিবারের কথা চিন্তা করে চট্টগ্রামে চাকরিতে চলে যান “উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে”। কিন্তু অভিনয়ের নেশা তার ভেতরে সুপ্ত থাকে। তাই ২০০৩ সালে বিটিভিতে এনলিস্টেড হওয়ার পরও চাকরির কারণে ঢাকা তে আসতে পারেননি এবং বিটিভিতে অভিনয়ও করতে পারেননি। ঢাকা তে বদলি হয়ে আসার জন্য তিনি অনেক চেষ্টায় পরও ব্যার্থ হন। এরপর তিনি ২০০৫ সালে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বাংলালিংক (জিএসএম) টেলিকম কোম্পানিতে জয়েন করেন। ২০০৬ সালে বিএসসি ইন ইলেকট্রনিক্স এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হন সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এ। ২০১৩ সালে মার্কেটিং এ এমবিএ কমপ্লিট করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নিয়ন্ত্রণাধীন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে। এরপরে পদোন্নতি ও বদলির সুবাদে ময়মনসিংহ থেকে ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে বাংলালিংকে সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ঢাকার মিরপুরে বদলি হন। কিন্তু মাথায় চলচ্চিত্রের ভূত এখনো যায়নি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন এবং ২০১৭ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রশিক্ষণ কোর্সে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা এবং ভারতের হায়দ্রাবাদে রামুজি ফিল্মসিটি হতে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও সাউন্ড ডিজাইনের উপর প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন।। ২০১৬ সালের নভেম্বরে বাংলালিংক থেকে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক নিয়ে টেরিটরী ম্যানেজার হিসেবে ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত চাকরি করেন। এরপর করোনা মহামারী এবং বাবার মৃত্যুর ফলে কেটে যায় কিছু সময়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সিলেটে জোনাল ম্যানেজার হিসেবে ঢালী কনস্ট্রাকশন লিমিটেডে জয়েন করেন ।জয়েন করলেও পরিবারের অসুবিধা এবং মায়ের ব্রেন স্ট্রোক অসুস্থতার জন্য চাকরি ছেড়ে ২০২১ সালের মে তে আবার ঢাকায় চলে আসেন। ডিসেম্বর ২০২১ এ ঢাকাতে কৃষ্টাল ফিউচার লিমিটেড নামে একটি কোম্পানিতে প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
বর্তমানে তিনি ঢাকাতে একটি মেডিসিন শপ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মের ব্যবসা করেন। চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে বিসিটিআই প্রযোজিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র “স্বপ্নকুঁড়ি”, “মিরপুর জল্লাদখানা” এবং যৌথ পরিচালনায় “সংকোচ” ও “বাড়িওয়ালা বনাম ভাড়াটিয়া” নির্মাণ করেন। এছাড়াও একটি যৌথ প্রযোজনায় টিভি নাটক “রক্ত ছায়া” নির্মাণ করেন। বিটিভি সহ কয়েকটি টিভি নাটকেও অভিনয় করেন।
আর্তনাদ কাব্য গ্রন্থটি বর্তমান সময়ের বাস্তবতার নিরিখে একটি কাহিনীনির্ভর কবিতার বই।