বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আজন্মলালিত সোনার বাংলা গঠনের জন্য, কিংবা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন করে দেশবাসীর আকাশচুম্বী আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য তিনি কি ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অনুসরণ করবেন, কিভাবে তিনি কৃষি, শিল্প, শিক্ষা ও অন্যান্য সামাজিক সংস্কার সাধন করবেন সে বিষয়ে তাঁর নিজস্ব কোন কর্মপরিকল্পনা, কিংবা তাঁর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কোন ম্যানিফেস্টো ছিল না বলে তখনকার প্রতিপক্ষরা তাঁর বিরুদ্ধে নানাধরনের অপপ্রচার করেন । যেমন বলা হয়ে থাকে যে, বঙ্গবন্ধুর সরকার যে ব্যাপক জাতীয়করণ নীতি অবলম্বন করেন তা তিনি করেছিলেন বামপন্থী ও তৎকালীন সরকারবিরোধীদের চাপে ।আমার প্রজণ্মের কেউই ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর শাষনামল’ দেখে নি ৷ আমরা কিংবা আমাদের পরবর্তী প্রজণ্ম ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর শাষনামল’কে যতটুকুই জেনেছে তা বড়দের কাছ থেকে শুনে আর ইতিহাসের বই পড়ে পড়ে ৷ কিন্তু এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ন কথা আছে, সেটা হছ্ছে- আমাদের মধ্যে যারা বিকৃত ইতিহাসের বইগুলোই শুধু পড়েছে কিংবা ভুল কিছু জেনেছে তাদের চিন্তা-ধারা কিন্তু ধীরে ধীরে সেই পথেই এগিয়ে গিয়েছে ৷ ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর শাষনামল’কে ঘিরে আমার প্রজণ্ম ও আমার পরবর্তী প্রজণ্মের এই যে বহুমুখী জানা বহুমুখী বিশ্বাস তৈরী হয়েছে –তার জন্য কিন্তু অনেকাংশে শিক্ষাবিদ ও ইতিহাসবিদগণই দায়ী ৷তারা কেনো তখন থেকেই এ বিষয়গুলো নতুন প্রজণ্মের বাচ্চাদের সিলেবাসে সংযুক্ত করলেন না ও এ বিষয়গুলো নিয়ে বেশী বেশী বই লিখে রেখে গেলেন না বা আজও লিখছেন না ! সত্যিকার অর্থে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু মাত্র তিন বছর বা তার বেশী কিছু সময় পেয়েছিলেন দেশ পরিচালনার জন্য ৷ এবং তিনি যে দেশটি পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহন করেন, সে দেশটি ছিল একটি যুদ্ধ –বিধ্দস্ত দেশ ৷ এত অল্প সময়ে এইরকম একটি যুদ্ধ –বিধ্দস্ত দেশকে সব দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ন করে দেয়া ছিল একরকম স্বপ্নাতীত ব্যাপার ৷ কিন্তু তারপরো সেই সময়ে ‘বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক যেসব পদক্ষেপ’ বঙ্গবন্ধু নিয়েছিলেন তা পরবর্তীতে অন্য সরকারগুলো পরিবর্তন করার সাহস দেখাতে পারেনি ৷ মূলতঃ ‘বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক গৃহীত পদক্ষেপগুলো’ যে সরকারই বাস্তবায়িত করুক না কেন, পরব্রতীতে, কোনো সরকারেরই উচিত হবেনা সেই পদক্ষেপগুলো বাতিল করার যদি তিনি সত্যিকারের দেশপ্রেমিক রাষ্ট্র-প্রধান হয়ে থাকেন ৷ বঙ্গবন্ধু যেহেতু ড.কামাল হোসেনকে নিয়ে বাংলাদেশের সংবিধানেই লিখে দিয়েছিলেন যে, “বাংলাদেশ –রাষ্ট্র পরিচালিত হবে মূলতঃ চারটি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে, নীতিগুলো হছ্ছে : ১/ গনতণ্ত্র, ২/সমাজতন্ত্র ৩/জাতীয়তাবাদ, ৪/ ধর্ম-নিরপেক্ষতা”, তাই সেসময় সমাজতান্ত্রিক মতবাদে বিশ্বাসী রাজনৈতিক সংগঠনগুলো ভেবেছিল বঙ্গবন্ধু হয়তবা চীনের ‘মাও সে তুং’ এর মতো রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন ৷ কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটেনি ৷ বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন রাষ্ট্র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এবং বিভিন্ন রাষ্ট্র ঘুরে এসে তাঁর কাছে বাংলাদেশের জন্য যেটা ভালো মনে হতো, তিনি সেটাই করতেন৷তিনি অনেক বিষয়ে তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করতেন ৷ ‘বাংলাদেশ’ কে একটি আধুনিক , উন্নত রাষ্ট্ হিসেবে গড়ে তোলবার জন্য যে যে পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন ছিল, তিনি সে সবগুলো পদক্ষেপই গ্রহন করেছিলেন কিন্তু দেশ পরিচালনার জন্য তিনি যে স্বল্প সময় পেয়েছিলেন তাতে করে তিনি সেসব গৃহীত পদক্ষেপগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত করে যেতে পারেন নি ৷’বাংলাদেশ’ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান-ড.কামাল হোসেন কে সাথে নিয়ে যে চারটি মূলনীতির কথা সংবিধানে লিখে দিয়ে গেছেন তা কিন্তু আজও সংবিধানে লেখা আছে কিন্তু তাঁর পরবর্তী কালের রাষ্ট্রপ্রধানগণ সেই চারটি মূলনীতি ও বাংলাদেশের সংবিধানকে গাইডলাইন হিসেবে সম্মুখে রেখে কখনই রাষ্ট্র পরিচালনার কাজটি সুচারুরূপে সম্পাদন করেন নি ৷ বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের পরে আজ ৪৫ বছরেও আমাদের দেশে সংবিধানের বেশ কতগুলো মৌলিক নীতি-আদর্শ রয়েছে যা কখনো কোনো সরকারই ফলো করেননি ৷আমরা জানি, এ অবস্হার একদিন পরিবর্তন হবেই ৷ ‘বাংলাদেশ’ আজ আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী-শেখ হাসিনার হাত ধরে অনেক দূর এগিয়ে গেছে, এগিয়ে যাবে ৷ (চলবে) ৷ তথ্যসূত্র : বুকস্ , ইন্টারনেট ৷
লেখক: ফারহানা আকতার, পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক, র্আান্তজাতিক রবীন্দ্র গবেষনা ইনস্টিটিউট, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, লেখক ও গবেষক ৷
বাংলাদেশ সময়: ৩:৪৯:২৯ ১২২৮ বার পঠিত #নতুন প্রজন্ম #বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ #মুক্তিযুদ্ধ