বঙ্গ-নিউজ ডটকম: আগে থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে মাথা দিয়ে রেখেছে বিশ্বমোড়াল যুক্তরাষ্ট্র। এবার প্রথা ভেঙে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য করেছে এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তি চীন। এ ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে আরো অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থা মাথা ঘামাতে এগিয়ে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলোর এমন আগ্রহকে চলমান রাজনৈতিক মহাসঙ্কট থেকে মুক্তির প্রধান পথ ভাবছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা। দক্ষিণ এশিয়ায় সুবিধাজনক ভূরাজনৈতিক অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের রাজনীতিতে চীনের সরব হওয়াকে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভারত-নেপাল-মিয়ানমারের বেড়ে বঙ্গোপসাগর তীরের বাংলাদেশ কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে বলেও মত বিশেষজ্ঞদের। এ কারনেই বিশ্ব শক্তিগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। যু্ক্তরাষ্ট্রের পর বাংলাদেশ নিয়ে চীনের আগ্রহও এ ধারণার যথার্থতা জানান দেয়।
গত বুধবার রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জুনের কথাতে তাই তেমনই ইঙ্গিত মেলে। রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আলোচনার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির দুই নেত্রীকে মুখোমুখি বসার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান দু’জোটকে একই টেবিলে বসানোর জন্য আগে থেকেই কাজ করে যাওয়া মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনার পাশাপাশি তাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে লি জুনও এখন আলোচিত নাম।
লি জুন বলেন, দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে বন্ধু দেশ হিসেবে চীন দুই নেত্রীকে মুখোমুখি সংলাপে বসার আহ্বান জানাচ্ছে। একটি উন্নয়নশীল দেশের রাষ্ট্রদূত হিসাবে আমি জানি, যে কোনো দেশের উন্নতির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কতটা জরুরি।
একই দিন অন্য এক অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনাও দুই নেত্রীকে সংলাপে বসার আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বলেন, বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের পাশে থাকতে চায় চীন। এদেশের রাজনীতির আকাশে কাল মেঘের ঘনঘটা আঁচ করতে পেরেই এশিয়ার শক্তিশালী দেশটি এমন পরামর্শ দিয়েছে।
তবে চীনের এমন পরামর্শ অভিনব উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার কুটনীতিক পেশার ৩৫ বছরে কখনো চীনকে কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলতে দেখিনি। এখন তাদের এমন আগ্রহকে অতিগুরুত্বের সঙ্গে দেখা প্রয়োজন।
হুমায়ুন কবীর বলেন, নিজস্ব অবস্থান থেকে বিশেষ ছাড় দিয়ে সমস্যা মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে হবে দু’দলকেই। অতীব গুরুত্ব দিতে হবে বিদেশিদের আশঙ্কাকে।
তিনি বলেন, চীন বা যুক্তরাষ্ট্রই শেষ নয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আরো অনেকে এমন পরামর্শ দেবে। সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে। এটিই স্বাভাবিক। তাই সময় থাকতে নিজেদের সমস্যা নিজেদেরকেই সমাধান করতে হবে।
তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে চীনের অংশ নেওয়াকে দেশটির ‘ইতিবাচক পরিবর্তন’ হিসেবেই দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসীন।
তিনি বলেন, এশিয়া অঞ্চলের সুপার পাওয়ার চীন এখন আগের মত নেই। তারা তাদের কর্মকৌশলে পরিবর্তন এনেছে। দক্ষিণ এশিয়ার শক্তিশালী দেশ হিসেবে তারা বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে আগ্রহী হচ্ছে।
তবে এই আগ্রহ চীনের স্বার্থেই বলে মন্তব্য করেন এই বিশ্লেষক।
আমেনা মহসীন বলেন, বাংলাদেশে কোন সরকার আসবে সেটি চীনের মাথা ব্যথা নয়। ব্যবসায়িক বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। ব্যবসার জন্য রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। সেটি ভেবেই চীন বাংলাদেশর আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মাথা দিচ্ছে। এছাড়া ভারত মহাসাগর ও মিয়ানমার ইস্যুতেও চীনের জন্য বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:১১:১২ ৪১০ বার পঠিত