বঙ্গনিউজঃ গত কয়েক দশকের এগিয়ে চলার গতি থেকে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়—স্বাধীনতার পাঁচ দশকে যেভাবে বাংলাদেশ এগিয়েছে, সে গতিতেই এগোতে থাকবে। গত ৫০ বছরের অর্জন বাংলাদেশ হারাবে না, এমন বিশ্বাস সবার। এ প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনকে অনেকেই জানিয়েছেন তাদের চিন্তা-ভাবনা।
আগামী ৫০ বছরে অর্থনীতি, খোলাধুলা, শিল্প সাহিত্য, অবকাঠামোতে দেশের জোরালো উন্নয়ন ঘটবে। দেশের বাইরে বাড়বে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদা। বাড়বে মাথাপিছু আয়। সবার জন্য নিশ্চিত হবে স্বাস্থ্যসেবা। বাড়বে গড় আয়ু। কমবে আয়ের বৈষম্য।
বিশ্লেষকদের মতে, এ সময় শিক্ষার হারও পৌঁছে যাবে একশ ভাগে। তবে এ সবই নির্ভর করছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর।
গবেষণা বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৬তম শীর্ষ অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। প্রাত্যহিক জীবনে তার প্রতিফলন হিসেবে বড় চাওয়া হবে— আয়ের ব্যবধান কমানো। বৈষম্য যত বাড়বে, ততই দুর্বল হতে থাকবে অর্থনীতি। নীতিনির্ধারকদের বিষয়গুলো মাথায় রেখে জনবান্ধব অর্থনীতি প্রণয়নে নজর দিতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
পরিসংখানে জানা গেছে—গত ৫০ বছরের বাংলাদেশ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান পোক্ত করছে। গত ১০ বছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ৬ শতাংশের বেশি। করোনা মহামারিতেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আশা করা হচ্ছে আগামী ৫০ বছরে জিডিপির এই হার ডাবল ডিজিটে দাঁড়াবে।
সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮১ সালে উৎপাদন খাতের অবদান ছিল ১৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২০ শতাংশ। পুরো শিল্প খাতের অংশ জিডিপির প্রায় ৩৫ শতাংশ। এ সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ২০৩১ সাল নাগাদ উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। কাজেই লক্ষ্য ঠিক থাকলে ৫০ বছর পর বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশ।
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশকে বলা হতো ‘বাস্কেট কেস’ তথা তলাবিহীন ঝুড়ি। সেই দেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে দেশের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৮৮ ডলার, যা ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। এখন আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। অর্থনীতির আকার ৪০৯ বিলিয়ন ডলার (৩৫ লাখ কোটি টাকার বেশি) ছাড়িয়েছে। এ হার ঠিক থাকলে পাঁচ দশকে এ সব সূচকই হবে দ্বিগুণ।
চলমান উন্নয়ন, ট্যালেন্ট হান্ট ও চর্চা অব্যাহত থাকলে খেলাধুলায়ও আসবে দারুণ সফলতা। এ সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সামনে বিশ্বকাপ জয় করা অসম্ভব কিছু নয়। ফুটবলেও বাড়বে দক্ষতা ও স্বীকৃতি।
তৈরি আছে ভিত
নিজেদের টাকায় বানানো পদ্মা সেতু এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। ঢাকার মেট্রোরেল ও চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। সম্প্রতি পায়রা সেতুর উদ্বোধন হয়েছে, যা দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। এসব বিবেচনায় আগামী ৫০ বছরে এসব অঞ্চলে থাকবে শিল্পের সমারোহ। ইতোমধ্যে কয়েকটি অঞ্চলে উৎপাদনও শুরু হয়েছে।
গত বছর যুক্তরাজ্যের দ্য ইকোনমিস্ট ৬৬টি সবল অর্থনীতির তালিকা প্রকাশ করেছিল। যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) অনেক সূচক অর্জন করে বিশ্ববাসীর নজর কাড়ে বাংলাদেশ।
এমডিজিতে দারিদ্র্যের হার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি কমাতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। এমডিজি অর্জনে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কারও এসেছে ঘরে। তাই আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশ চলমান টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের চূড়ায় অবস্থান করবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ জানিয়েছেন, ‘উন্নয়নের নতুন স্তরে যাওয়ার পথে বাংলাদেশের জন্য বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটলে বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার সুবিধা কমে যাবে। এ কারণে আগামী পাঁচ বছরের উত্তরণকালীন প্রস্তুতি বাংলাদেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
টেকসই উত্তরণে এসডিজি, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বয় করে উত্তরণের শক্তিশালী কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় বাজার ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো, রফতানি বহুমুখীকরণ, কর্মসংস্থান বাড়ানো, অবকাঠামোর উন্নয়ন, দুর্নীতি কমানো, মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার প্রসারসহ অনেক বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়ার সুপারিশও উঠে আসছে বিভিন্ন আলোচনায়। বাংলাদেশকে উন্নয়নের পরবর্তী পর্যায়ে যেতে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। বছরে ২২ লাখ মানুষ শ্রমশক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। তাদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করাও আগামী দিনের বড় চ্যালেঞ্জ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘সবই নির্ভর করছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর। পরবর্তী ৫০ বছরে উন্নত বাংলাদেশ হবে। এর ভিত রচিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এটাকে ধরে রেখে আগামী পথচলার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা জরুরি।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে যুক্তরাজ্য সরকারের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) দক্ষিণ এশিয়া, জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথ বিষয়ক মন্ত্রী লর্ড তারিক আহমেদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন রূপে স্থাপন ও নবায়নের জন্য বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উপযুক্ত সময়। বর্তমানে উভয় দেশই পরস্পরের স্বার্থ রক্ষায় সমান অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। আমি নিশ্চিত এই অংশীদারিত্ব আগামী ৫০ বছরে বিকশিত হতে থাকবে।’
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, ‘পরবর্তী ৫০ বছরের বাংলাদেশ হবে উন্নত বিশ্বের একটি শক্তিশালী দেশ। বর্তমান সরকার এর ভিত গড়ে দিয়েছে। এখন প্রয়োজন ভিতটাকে শক্তিশালী করার কাজগুলো এগিয়ে নেওয়া।’
ড. শামসুল আলম জানিয়েছেন, পরবর্তী ৫০ বছরে বাংলাদেশকে শক্তিশালী করতে প্রয়োজন হবে দেশপ্রেম। দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:২৬:২৪ ৩২৯ বার পঠিত #অবকাঠামো #অর্থনীতি #খোলাধুলা #মাথাপিছু আয় #শিল্প-সাহিত্য