বঙ্গ-নিউজ ডটকম: নির্দলীয় সরকার ছাড়া এদেশে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বলেছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে দু’টি প্রধান রাজনৈতিক দলকে সমঝোতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিরপুরস্থ ইউনূস সেন্টারে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন। ড. ইউনূস বলেন, দেশে অশান্তির কালো মেঘ ঘনিয়ে আসছে। মানুষ এই অশান্তি চায় না। কারও কারও বা কোন দলের ইচ্ছার কারণে অশান্তি নেমে এলে দেশের মানুষ ক্ষমা করবে না। আগামী নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশে অবশ্যই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। তবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া এদেশে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই নির্দলীয় সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে দেশের রাজনীতিবিদদের প্রতি আকুল আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা একটা সমঝোতায় আসুন। আলাপ-আলোচনা করে একটা সমাধান বের করুন। কারণ সময় খুব কম। দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটা সমাধান বের করতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ পরিবর্তন না করায় নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, আশা করি এই সময়ে নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে আর কোন ধরনের পরিবর্তন আনবে না। যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। তিনি আশা প্রকাশ করে আরও বলেন, আগামীতে যারা ক্ষমতা আসবেন তারা দেশের মানুষ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে এবং নিজের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে সেই সুযোগ তৈরি করবেন। এছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতি কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না সেই অঙ্গীকারও করবেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশের অগ্রগতির তালিকা অনেক দীর্ঘ। সারা দুনিয়ার মানুষ আমাদের দেশের অগ্রগতি সম্পর্কে জানে। আমি আশা করি, আমাদের রাজনীতিবিদরা এই অগ্রগতি ধরে রাখবেন। দু’টি প্রধান দলকে সমঝোতায় বসানোর ক্ষেত্রে কোন উদ্যোগ নেবেন কিনা এ প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমি সমঝোতার উদ্যোগ নেয়ার কে? সমঝোতায় বসতে সবাই বলছে। বিদেশী কূটনীতিক ও রাষ্ট্রদূতরা বলছেন, এমন কি চীনা রাষ্ট্রদূতও বলেছেন। তবে সমঝোতার ব্যাপারে আমি কোন ধরনের ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছি না। ভবিষ্যতে রাজনীতিতে আসার কোন সম্ভাবনা আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি, রাজনীতিতে আসা কিংবা কোন রাজনৈতিক দল গঠন করার ইচ্ছা আমার নেই। আরেক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আগামীতে যারাই ক্ষমতায় আসুক তাদের ওয়াদা করতে হবে যে ক্ষমতায় আসার পর তারা লুটপাট, দুর্নীতি, গুম বা হত্যা করবে না। ভোটাররা তাদেরকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে যারা কথায় কথায় ধমক দেবে না। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতি সমর্থন জানানোয় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর যখন আক্রমণ আসে তখন এর শুরু থেকেই কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সমর্থন জানিয়ে আসছে। আজকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানিয়েছে। এজন্য তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে আমরা একমত হয়েছি, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আগামী সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্তৃত্ব ছাড়া হতে পারে না এবং তা কেউ মানবে না। তিনি বলেন, গ্রামে কোন খেলায় একজন নিরপেক্ষ লোককে রেফারি নিয়োগ করা হয়- যাকে উভয় দল মেনে নেয়। কিন্তু একটি জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি দলের প্রধান জোর করে রেফারি হবেন- এটা কেউ মেনে নেবে না। এমন জবরদস্তি হিটলারও করেছিল কিনা, আমার সন্দেহ হয়। সমঝোতা প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের সমালোচনা করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, একজন প্রধানমন্ত্রী কিভাবে বলেন- এক চুলও নড়বেন না। কোন রাজনৈতিক নেতা যখন এমন কথা বলেন, তখন তা স্বৈরতন্ত্রকেও হার মানায়। কাদের সিদ্দিকী বলেন, যেখানে সব সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসরকারিকরণ করা হচ্ছে সেখানে সফল এবং সুনামধন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সরকারিকরণ করার একটি অশুভ উদ্যোগ গ্রহণ করছে সরকার। এই অশুভ উদ্যোগ দেশের মানুষ মেনে নেবে না। আমরাও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতি নিঃস্বার্থভাবে আকুণ্ঠ সমর্থন জানাচ্ছি। তিনি বলেন, যার কাছে গ্রামীণ ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান নিরাপদ নয়, তার কাছে দেশ নিরাপদ থাকতে পারে না। এ রকম অপরিণামদর্শীর হাত থেকে দেশকে মুক্ত রাখা প্রয়োজন। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বলেন, তার দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূসের পাশে থাকবে এবং গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষতি হতে দেবে না। গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংসে সরকার যে পাঁয়তারা করছে, তা রুখে দিতে তারা বদ্ধপরিকর। এ সময় নাসরিন কাদের সিদ্দিকী, দলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলামসহ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১:২৬:৩৬ ৩৮৮ বার পঠিত