বঙ্গনিউজঃ দেশে বুধবার ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৮৯২ জনের। এ সময় করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ৩ জন। শনাক্তের হার ৪ দশমিক ২০ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত আগের ২৪ ঘণ্টা (৫ ডিসেম্বর সকাল ৮টা) পর্যন্ত করোনাতে নতুন শনাক্তের চেয়ে ১১৭ জন বেশি। মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতর ৭৭৫ জন শনাক্তের তথ্য জানিয়েছিল।
এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর একদিনে শনাক্ত হয়েছিল ১ হাজার ১৭৮ জন। এরপর করোনায় একদিনে শনাক্ত ৯শ’র ঘরে যায়নি।
নতুন বছরের শুরু থেকেই করোনায় রোগী শনাক্তের হার বাড়ছে। জানুয়ারি মাসের প্রথম চার দিনে যথাক্রমে শনাক্ত হয়েছেন ৩৭০, ৫৫৭, ৬৭৪ ও ৭৭৫। আর শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ৪৩, ২ দশমিক ৯১, ৩ দশমিক ৩৭ ও ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ।
করোনার ডেলটা ধরনের দাপটে গত বছরের মাঝামাঝি দেশে করোনায় মৃত্যু, রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার বেড়েছিল। তবে আগস্টে দেশব্যাপী করোনার গণটিকা দেওয়ার পর সংক্রমণ কমতে থাকে। গত ডিসেম্বরের প্রথম কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা শনাক্ত ১ শতাংশের ঘরেই ছিল। কিছুদিন ধরে সংক্রমণে আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে করোনাতে নতুন শনাক্ত দ্বিগুণ হয়েছে।
গত ২৮ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৩৯৭ জনের আর শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ১০ শতাংশ। আর ৫ জানুয়ারি ৮৯২ জনের শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়ে বলা হয় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ২০ শতাংশ। অর্থাৎ সপ্তাহন্তরে শনাক্তের হার দ্বিগুণ। আর গত ৩ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, সপ্তাহ শেষে শনাক্ত বেড়েছে ৪৮ শতাংশ, মৃতের হার বেড়েছে ৪১ শতাংশ।
অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন জানান, গত সপ্তাহে (২৭ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে ২ জানুয়ারি ২০২২) পর্যন্ত নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ২১৩ জনের। তার আগের সপ্তাহে (২০ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর) শনাক্ত হয়েছিল ২ হাজার ১৭০ জনের। অর্থাৎ গত সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের তুলনায় ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ রোগী বেশি শনাক্ত হয়েছেন।
আর গত সপ্তাহে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৭ জন, তার আগের সপ্তাহে মারা গিয়েছিলেন ১২ জন। অর্থাৎ, গত সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের চেয়ে মৃত্যু বেড়েছে ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ।
রোগী বাড়ার কারণ হিসেবে দেশে ওমিক্রনের প্রভাব রয়েছে— সাধারণ মানুষের এমন একটি ভাবনা প্রচলিত। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এখনও ওমিক্রনের প্রভাব সেভাবে পরেনি। এখনও সেই বিধ্বংসী ডেল্টার প্রভাব রয়েছে দেশে, সেই সঙ্গে রয়েছে মানুষের স্বাস্থ্যবিধি না প্রবণতা।
দেশে এখন পর্যন্ত ১০ জন ওমিক্রনে শনাক্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর। আর সম্প্রতি রোগী বাড়ার মধ্যে ওমিক্রন ঠেকাতে আগামী দুই থেকে একদিনের মধ্যেই বিধিনিষেধ দিচ্ছে সরকার। গত ৩ জানুয়ারি ওমিক্রন প্রতিরোধে এক বিশেষ আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থল ও বিমানবন্দরগুলোতে ইতোমধ্যে স্ক্রিনিং বাড়ানো এবং মজবুত করা হয়েছে। সেখানে অ্যান্টিজেন পরীক্ষাও চালু হয়েছে। কোয়ারেন্টিনেও আরও তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা জোরদার, সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সংখ্যা যেন সীমিত করা, গণপরিবহণসহ সবজায়গায় মাস্ক বাধ্যতামূলক হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, সংক্রমণ বেড়ে গেলে লকডাউনের কথা চলে আসবে। কিন্তু লকডাউন যেন দিতে না হয় সেজন্য আগে থেকেই এসব ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই, দোকানপাট, বাস-ট্রেন-মসজিদে গেলেও মাস্ক পরতে হবে। সব জায়গায় মাস্ক পরতেই হবে, না পরলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করতে বলা হবে। সেইসঙ্গে টিকা না নিয়ে থাকলে রেস্টুরেন্টে খেতে পারবে না। সেখানে টিকার সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। যদি এটা না মানা হয় তবে ওই রেস্টুরেন্টকে জরিমানা করা হবে।’
আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওমিক্রন আসছে, কিন্তু সবই ওমিক্রন এটা বলা যাবে না। আইইডিসিআরের করা নভেম্বর মাসের করা মাসিক রিপোর্টে এখনও ডেল্টার প্রকোপ ছিল বেশি।’
‘তাহলে রোগী এভাবে বাড়ছে কেন’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, কেউ মাস্ক পরছে না। অথচ কী হারে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় সব অনুষ্ঠান হচ্ছে চারিদিকে, আরতো কিছুর দরকার নেই। এখন পর্যন্ত আমাদের হাতে যে তথ্য রয়েছে তাতে করে ডেল্টার রোগীই বেশি। তবে ওমিক্রন এসেছে, আর এই ভ্যারিয়েন্টে রোগী বাড়ছে একটা-দু’টা। মোটকথা, ওমিক্রনের সংখ্যা কম, ডেল্টার সংখ্যাই বেশি।’
দেশে রোগী বাড়ার কারণ ওমিক্রন কিনা প্রশ্নে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ‘আমরা কেউ সতর্কতাগুলো মানছি না- এটাই রোগী বাড়ার অন্যতম কারণ। ওমিক্রনতো আমাদের এখানে তেমনভাবে হয়নি, আমাদের এখানে এখনও ডেল্টার সংক্রমণই হয়েছে। এ যাবৎকালে পিকনিক, বিয়ে, সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানো- এসবের ফলাফলতো পেতে হবে— আর এটাই অন্যতম কারণ।
ইউরোপ আমেরিকা জুড়ে যে সংক্রমণ তাকে সবাই ওমিক্রন বলছে। ফ্রান্সে-স্পেনে যে সংক্রমণ হচ্ছে, তার মধ্যে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ওমিক্রন, বাকি ৭০ শতাংশই ডেল্টা। ইংল্যান্ডে লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, তার ৫০ শতাংশই ডেল্টা, বাকি ৫০ শতাংশ ওমিক্রন, আমেরিকাতেও তাই। এসব তথ্য উল্লেখ করে ডা. আলমগীর বলেন, ডেল্টাতেতো সিভিয়ারিটি (জটিলতা) বেশি হয়, হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বেশি। ফ্রান্সে যে ৯০০ থেকে ১ হাজারের মতো মানুষ প্রতিদিন মারা যাচ্ছে, তার সবইতো ডেল্টা।
দেশে এখনও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে এখনও ডেল্টাই প্রিডোমিনেন্ট, ওমিক্রনতো আসবে-এটা কোনও দেশ ঠেকাতে পারেনি। আমরাও পারবো না। কিন্তু এখনও দেশে ডেল্টাই রয়েছে। ওমিক্রনে এখন পর্যন্ত ১০ জন পাওয়া গেছে, ভবিষ্যতে হয়তো আরও পাওয়া যাবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানলে সব ভ্যারিয়েন্টকেই আটকানো যায়।’
স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণেই গত এক সপ্তাহ ধরেই রোগী বাড়ছে উল্লেখ করে ডা. আলমগীর বলেন, ‘পাঁচ শতাংশের নিচে থাকা অবস্থায় হয়তো সহনীয় পর্যায়ে থাকবে, তবে তারচেয়ে বাড়তে শুরু করলে…যেহেতু বলা হয় ওমিক্রন ডেল্টার চেয়ে তিন থেকে পাঁচগুণ বেশি সংক্রামক, তাহলে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকবে। সেই সঙ্গে হবে ডেল্টার সিভিয়ারাটি। আর এজন্য স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া কোনও উপায় নেই।’ তবে দেশে এখনও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবই চলছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:২৯:২৪ ৬১৮ বার পঠিত #ওমিক্রন #করোনাভাইরাস #ডেল্টা #স্বাস্থ্যমন্ত্রী