বিএনপি কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে ১৮ দলীয় জোটের টানা ৩৬ ঘণ্টা হরতালের দ্বিতীয় দিন শুরু হয়েছে ঝটিকা মিছিল বিক্ষিপ্ত গাড়ি ভাংচুর ও হাতবোমা বিস্ফোরণের মধ্যে দিয়ে।বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও মিরপুরে গাড়ি ভাংচুর করেছে হরতাল সমর্থকরা। হাতবোমা ফাটিয়ে টায়ারে আগুন দিয়ে চেষ্টা হয়েছে সড়ক অবরোধের।
বিএনপি নেতাকর্মীরা নারায়ণগঞ্জ শহরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিক্ষিপ্ত বোমাবাজির খবর এসেছে সিলেট থেকেও।
সকাল সাড়ে ৬টার দিকে যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড় এলাকায় শিবির কর্মীরা মিছিল নিয়ে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে এবং হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটায়।
পরে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় দুই জনকে আটক করা হয় বলে যাত্রাবাড়ী থানার এসআই এমরানুল ইসলাম জানান।
হরতালের সমর্থনে মিছিল হয়েছে মুগদা এলাকাতেও। আগারগাঁও আইডিবি ভবন এলাকায় ফাটানো হয়েছে কয়েকটি হাতবোমা।
ছাত্রদল কর্মীরা সকালে মিরপুর মাজার রোডে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে। এ সময় পোশাক শ্রমিকদের বহনকারী একটি বাস ভাংচুর করে তারা। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় মিছিল করে স্বেচ্ছাসেবক দল।
এছাড়া প্রশিকা ভবনের সামনে শিবির কর্মীরা টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে। পুলিশ ধাওয়া দিলে পিকেটাররা কয়েকটি ককটেল ফাটিয়ে চলে যায়।
পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ কমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “হরতালকারীরা অলিগলি থেকে বেরিয়ে এসে বিচ্ছিন্নভাবে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে।”
অন্যান্য হরতালের দিনের মতো সকাল থেকেই রাজধানীতে রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল করছে। গণ পরিবহনের সংখ্যাও হরতালের প্রথম দিন বুধবারের তুলনায় কিছুটা বেশি।
হরতালের কারণে গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ থেকে দূর পাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। তবে ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
৩৬ ঘন্টার এই হরতালের প্রথম দিনটি কাটে বিক্ষিপ্ত বোমাবাজি ও ভাংচুরের মধ্য দিয়ে।
বুধবার ঢাকায় অন্তত দুটি বাসে আগুন দেয়া হয়। বাস ও ট্রাকে আগুনের ঘটনা ঘটে চট্টগ্রাম ও গাজীপুরেও।
বাসে আগুনের জন্য পুলিশ হরতালকারীদের দায়ী করলেও বিএনপি পাল্টা অভিযোগ তুলেছে সরকারি দলের বিরুদ্ধে।
হরতালকারীদের হামলায় বরিশালে এক পুলিশ সদস্য আহত হন। যশোরে পিকেটারদের ধাওয়ায় যাত্রীবাহী একটি বাস দ্রুত চলতে গিয়ে সড়কের পাশে দোকানে ঢুকে পড়লে নিহত হন একজন। গাজীপুরে একই ধরনের ঘটনায় অটোরিকশা উল্টে আহত হন চারজন।
বুধবার ঢাকা, চট্টগ্রামসহ প্রায় সারাদেশেই বিক্ষিপ্ত বোমাবাজি হয়। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে একটি রিকশায় তল্লাশি চালিয়ে গ্রেনেডসদৃশ শক্তিশালী বোমা পেয়ে তা নিস্ক্রিয় করে পুলিশ।
হরতাল শুরুর আগে মঙ্গলবার রাতে ময়মনসিংহে ট্রেনের বগিতে আগুন দেয়ার পর বুধবার সকাল থেকে কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীদের তল্লাশি করে স্টেশনে ঢোকানো হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বুধবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, হরতালে রাজধানীসহ সারাদেশে প্রায় ৪০০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলায় আহত হয়েছে ৬ শতাধিক।
গত ১১ মার্চ নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ১৮ দলের সমাবেশের শেষ দিকে হঠাৎ কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এর পরপরই বিএনপি কর্মীরা পুলিশের দিকে ঢিল ছুড়তে থাকে এবং সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়।
এর এক ঘণ্টার মাথায় বিএনপি কার্যালয় থেকে দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় দশটি হাতবোমা।
আটক নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে এর আগে ১৮ ও ১৯ মার্চও ৩৬ ঘণ্টা হরতাল করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল।
এরপরও নেতাকর্মীরা মুক্তি না পাওয়ায় গত রোববার সংবাদ সম্মেলন করে বুধ-বৃহস্পতি এই হরতালের ঘোষণা দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বাংলাদেশ সময়: ৯:২৯:৫৬ ৪৮৯ বার পঠিত