বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান :
বাংলাদেশ’ রাষ্ট্রটা একদিনে বা একটি ভাষণে বা একটি ঘোষণায় তৈরি হয়নি টানা ২৪ বছর পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন-শোষনের পর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্তে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে র্দীঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের পর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে র্পূব পাকিস্তান সর্ম্পূন স্বাধীনতা লাভ করে বিশ্বের মনচিত্রে ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষকরা মনে করেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তাঁর জীবনের চৌদ্দ বছরই কারাগারে কাটাতে হয়েছে৷ এরপরও রাজনৈতিক র্দশনের ক্ষেত্রে দৃঢ় অবস্থানে থেকে তিনি গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরছিলেন। সেজন্যই সেই সময়ের অন্য সব নেতাকে ছাপিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা হয়ছিলেন তিনি এবং প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ এবং ১৯৭১ সালের ৭ই র্মাচ যখন তিনি বাঙ্গালিদের উদ্দেশ্যে র্পূব পাকিস্তানের (র্বতমান বাংলাদেশ) স্বাধীনতা ও র্সাবভৌমত্ব নিয়ে ভাষণ দিছ্ছিলেন, তখনই জাতি –র্ধম-র্বণ-গোত্র নির্বিশেষে সকল বাঙ্গালিরা তুমুল করতালির মাধ্যমে সেদিন থেকে তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন । শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে ওঠেন বাঙ্গালিদের অতি আপনজন ‘বঙ্গবন্ধু’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু’ থেকে ‘বাংলাদেশের স্হপতি’ ৷”
১৯৭১ সালের ২৫ র্মাচ রাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতির ওপর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আক্রমণ শুরুর পরই বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডির বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় । বাঙালি যখন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে, বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। বাঙালিদের চূড়ান্ত বিজয় র্অজিত হওয়ার পর বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। পরাজিত পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী আর্ন্তজাতিক চাপে শেষ র্পযন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পরিবারের সকল সদস্যদের গৃহবন্দী থেকে মুক্তি দেয় হয় । বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে র্দীঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে বিজয় র্অজন করে। মুক্তিযুদ্ধের র্সবাধিনায়ক র্সবকালের র্সবশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে থেকে মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসার মাধ্যমে সে বিজয় র্পূণতা লাভ করে৷
পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন ও নয়াদিল্লি হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তারিখে দেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই দিনের অপরাহ্ণে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমানটি যখন তেজগাঁও বিমনবন্দরের রানওয়ে র্স্পশ করে, তখন অগণিত জনতা মুর্হুমুহু র্হষধ্বনি ও গগনবিদরী জয় বাংলা স্লোগানে স্বাগত জানান প্রিয় নেতাকে। বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চলে যান সোহরাওর্য়াদী উদ্যানে (তৎকালীন রেসর্কোস ময়দান)। সেখানে লাখো মানুষের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের জন্য দেশবাসীকে অভিনন্দন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার কাজে সবাইকে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী তারিখে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলার নতুন র্সূযালোকে র্সূযের মতো চীর ভাস্বর-উজ্জ্বল মহান নেতা ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফির আসেন তাঁর প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে। স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবগেে আপ্লুত হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নামলো তাঁর দু’চোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনতিে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ বাতাস। জনগণনন্দিত শেখ মুজিবুর রহমান সোহরাওর্য়াদী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তাঁর ঐতহাসিক ধ্রুপদি বক্তৃতায় বলেন, ‘যে মাটিক আমি এত ভালবাসি , যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি ফিরে যেতে পারবো কিনা । আজ আমি বাংলার মাটিতে ফিরে এসেছি, বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনেদের কাছে ৷ বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’
যুদ্ধবধ্বিস্ত ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যার্বতন সদ্য স্বাধীন বাঙালি জাতির কাছে ছিল একটি বড় প্রেরণা। র্দীঘ সংগ্রাম, ত্যাগ -তীতিক্ষা, আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় র্অজনের পর বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে বাঙালি জাতি যখন কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখি তখন পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশ প্রত্যার্বতন করেন র্সবকালের র্সবশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই বাঙ্গালি অত্যন্ত সশ্রদ্ধ চিত্তে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারীকে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যার্বতন দিবস উপলক্ষে পালন করে আসছে বাঙ্গালিরা ৷
এদিকে বাংলাদেশের স্হপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতর্বাষকী উদযাপনের লক্ষ্যে গত বছরের ১৭ র্মাচ থেকে এ বছরের ২৬ র্মাচ র্পযন্ত সময়কে বাংলাদেশ সরকার ‘মুজিব র্বষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। গত বছর স্বদেশ প্রত্যার্বতন দিবস থেকেই শুরু হয় মুজিব র্বষের ক্ষণগণনা । শুধু সরকার নয়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের ঘোষণা দেয় জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ও (ইউনসেকো)। কিন্তু কোভডি-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে মুজিব র্বষের জন্য নেওয়া র্কমসূচিগুলো নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি ৷ এ কারণে সরকার মুজিব র্বষের সময়সীমা আগামী ১৬ ডিসম্বের র্পযন্ত বাড়িয়েছে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতহাসিক স্বদেশ প্রত্যার্বতন দিবস। ১৯৭২ সালের এই দিনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠ থেকে মুক্তি লাভ করে তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন-র্সাবভৌম বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
মুজিব বর্ষে রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী ও দেশের স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তীর একটা যুগসন্ধিক্ষণ হচ্ছে ২০২১ সাল। এই যুগসন্ধিক্ষণে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে নিরলস প্রয়াস চালাতে হবে” ।
এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, “জাতীর পিতা যে অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্মুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য র্কাযকরী ভূমিকা রাখব, ইনশা আল্লাহ” । (চলবে ) তথ্যসূত্র : বুকস্ , ইন্টারনেট ৷
ফারহানা আকতার
লেখক: ফারহানা আকতার, পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র গবেষনা ইনস্টিটিউট ৷ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, লেখক ও গবেষক ৷
বাংলাদেশ সময়: ১৪:০৪:৫১ ১১১৯ বার পঠিত # #ক্ষুধা-দারিদ্র্মুক্ত #প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার #বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববি #বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ #লেখক ও গবেষক #৷ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক #‘মুজিব র্বষ