১০.বাংলাদেশের স্বাধীনতা র্অজনে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের অবদান :
পাকিস্তানের জন্মের আগে থেকেই বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে নানা বিতর্কের জণ্ম হয়। কিন্তু ১৯৪৭ সালের পর রাষ্ট্রভাষাকে কেন্দ্র করে র্পূব বাংলার রাজনীতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। এর কেন্দ্রে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
পাকিস্তানে মুসলিম লীগের র্কাযকলাপে হতাশ হয়ে র্পূব পাকিস্তানের মুসলিম ছাত্র তরুণরা ততদিনে সংগঠিত হতে শুরু করে। র্পূব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠিত হয় ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারীতে ৷ আহবায়ক কমিটির মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানও ছিলেন। পাকিস্তানের গর্ভনর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ২৪শে র্মাচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমার্বতন অনুষ্ঠানে বলেন, ‘র্উদুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, অন্য কোন ভাষা নয়’। ইতিহাসবিদেরা বলেছেন, ‘ র্উদুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে মানুষ কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগের প্রতি আরো বেশি বিরূপ হয়ে পড়ে। এই আন্দোলনের প্রথম ধাপটি ছিল সরকারি দল মুসলিম লীগের বিরোধী দল হিসেবে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের আবর্ভিাব , যার নাম “আওয়ামী মুসলমি লীগ” ৷
নতুন দল গঠনের এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পাকিস্তানের রাজধানী করাচীতে বসবাসরত র্পূব বাংলার জনপ্রিয় নেতা হোসনে শহীদ সোহরাওযার্দী এবং যুবক শেখ মুজিবুর রহমান।
উনশি’শ উনপঞ্চাশ সালের ২৩শে জুন গঠিত হয় ‘র্পূব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলমি লীগ’। ‘আওয়ামী লীগ’ নামটি দিয়েছিলেন মাওলানা ভাসানী যার র্অথ জনগণের মুসলিম লীগ। মুসলিম লীগের অগ্রগণ্য অনকে নেতা নতুন দলে যোগ দেন। জেলে আটক থাকলেও শেখ মুজিব হলেন এই দলের যুগ্ম সম্পাদক। আওয়ামী মুসলিম লীগ পরচিালনার ব্যাপারে সোহরাওযার্দীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন শেখ মুজিব। সোহরাওযর়্াদী তাকে খুব স্নেহ করতেন ৷ র্পূব পাকিস্তানের রাজনীতিতে আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম একটি তাৎর্পযর্পূণ ঘটনা। পাঁচ দশক পরে এই দলটির রাজনৈতিক নেতৃত্বে পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে এসে জন্ম হয় বাংলাদেশের। ‘আওয়ামী মুসলমি লীগ’ এর প্রথম সভাপতি হন ‘মওলানা আব্দুল হামিদ ভাসানী’ । আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্মের মধ্য দিয়ে র্পূব পাকিস্তানে এক নতুন ধরনের রাজনীতির সূচনা ঘটে, উন্মেষ হয় র্ধমনিরপক্ষে ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির।
আওয়ামী মুসলমি লীগ গঠনের সময় ও পরে শেখ মুজিবুর রহমান র্দীঘ সময় কারাগারে আটক ছিলনে। যখন জলে থকেে বের হয়ে এলেন তখন মাওলানা ভাসানীসহ তার রাজনৈতিক সহর্কমীরা জেলে বন্দী। এসময় তিনি সোহরাওযর়্াদীকে সাথে নিয়ে র্পূব বাংলার জেলায় জেলায় ঘুরে সংগঠন গড়ে তুলেন।
শেখ মুজিবুর রহমান তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে লিখেছেন: “এই সময় প্রায় প্রত্যকেটা মহকুমায় ও জেলায় আওয়ামী লীগের সংগঠন গড়ে উঠছে। শহীদ সোহরাওর্য়াদী সাহেবের সভার পরে সমস্ত দেশে এক গণজাগরণ পড়ে গলে। জনসাধারণ মুসলিম লীগ ছেড়ে আওয়ামী লীগ দলে যোগদান করতে শুরু করছিল।”
পাকিস্তানের সূচনালগ্ন থেকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন শুরু হলওে তা উত্তাল হয়ে ওঠে ১৯৫২ সালে যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিন ঢাকায় এসে পল্টন ময়দানে এক জনসভায় ঘোষণা করেন যে, ‘ র্উদুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ‘।
এর প্রতিবাদে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। মাওলানা ভাসানীকে সভাপতি করে গঠিত হয় র্সবদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরষিদ ৷
আন্দোলন দমন করতে ২০শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। পরদিন ২১ ও ২২শে ফেব্রুয়ারি আইন অমান্য করে মিছিল বের করলে পুলিশ গুলি চালায় এবং তাতে বেশ কয়েকজন নিহিত হয় এবং এ ঘটনায় পশ্চিম পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার র্উদুর পাশাপাশি বাংলাকে র্পূব পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিত বাধ্য হন ৷
এই ঘটনায় পাকিস্তানের রাজনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খায়।পাকিস্তান জাতীয়তাবাদ ছিল দ্বি-জাতি তত্বের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত।তার প্রধান উপাদান ছিল র্ধম। কিন্তু রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতির ক্ষেত্রেে ভাষাভিত্তিক র্অথাৎ বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। যার প্রধান উপাদান হল র্ধমনরিপক্ষেতা।
ভাষা আন্দোলনে হোসনে শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের চাইতে মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমানরে ভূমিকা ছিল বেশ গুরুত্বর্পূন এবং তারা একত্রে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের সময় সারা দেশে ঘুরে যুক্তফ্রন্টরে পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে কিশোর বয়সইে ১৯৩৬ সালে স্বদেশী আন্দোলন বা ভারতের বিপ্লবী নেতা সুভাষচন্দ্র বসুর অনুরাগী ছিলেন, সে কথা তিনিন নিেজইে তাঁর অসমাপ্ত আত্নজীবনীতে লিখেছেন।
“ইংরজেদের এদেশে থাকার অধিকার নেই। স্বাধীনতা আনতে হবে ৷ আমিও ভারতের সুভাষ বাবুর ভক্ত হতে শুরু করলাম। এই সভায় যোগদান করতে মাঝে মাঝে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর যাওয়া আসা করতাম। স্বদশেী আন্দোলনরে লোকরে সাথে মেলা মেশা করতাম” - লিখেছেন শেখ মুজিবুর রহমান ৷
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগের বছরই ১৯৪৬ সালে কোলকাতায় সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ডের জেরে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল র্পূব পাকস্তিানে ।সাম্প্রদায়িক সেই দাঙ্গার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান ।
পরে অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবোধকেই তিনি তাঁর রাজনৈতিক র্দশন হিসেবে নির্দিষ্ট করে আওয়ামী মুসলিম লীগের মাধ্যমে এগিযেছেন রাজনৈতিক বর্নাঢ্য জীবনে ৷
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির সূচনা হয়ছিল মুসলিম লীগ ও আওয়ামী মুসলীম লীগরে রাজনীতির মধ্য দিয়ে পরে তিনিই হয়ে উঠছিলেন অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবোধ এবং র্ধমনরিপক্ষে রাষ্ট্রের প্রবক্তা।
বাঙালি জাতীয়তাবোধ, র্ধমনরিপক্ষেতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র- এই র্দশনগুলোর সমন্বয়ে শখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের ৷
শেখ মুজিব তাঁর রাজনৈতিক র্দশন বাস্তবায়নের আন্দোলনে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। হোসনে শহীদ সোহরাওযর্দীর মৃত্যু হয় ১৯৬২ সাল।
১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের ছয়দফা প্রস্তাব তাঁর রাজনৈতিক চিন্তা বাস্তবায়নের বড় র্টানিং পয়েন্ট হিসেবে কাজ কর। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করনে, শেখ মুজিবকে তাঁর জীবনের চৌদ্দ বছরই কারাগারে কাটাতে হয়েছে। এরপরও রাজনৈতিক র্দশনের ক্ষেত্রে দৃঢ় অবস্থানে থেকে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের গোটা জাতিকে ‘বাংলাদেশ’ নামক একটি স্বাধীন ও র্সাবভৌম রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার চেতনায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। সেজন্যই সেই সময়ের অন্য সব নেতাকে ছাপিয়ে একমাত্র তিনিই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবিসংবাদিত নেতা হয়ে উঠছিলেন , তাঁরই বলিষ্ঠ নেতৃত্বে পশ্চিম পাকিস্তানের নানা অন্যায়-অতাচার-শোষনের বিরুদ্ধে র্পূব পাকিস্তানের জনগণের একাধারে টানা নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের পর আমরা র্অজন করি আমাদের সেই বহু আকাঙ্খিত স্বাধীনতা ৷ প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের । (চলবে) ৷তথ্যসূত্র : বুকস্ , ইন্টারনেট ৷
লেখক: ফারহানা আকতার, পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক, আর্ন্তজাতিক রবীন্দ্র গবষেনা ইনস্টটিউিট ৷ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, লেখক ও গবেষক ৷
বাংলাদেশ সময়: ২১:৫১:১৯ ১১৭৫ বার পঠিত #নতুন প্রজন্ম #মুক্তিযুদ্ধ #মুসলিম লীগ #রাজনৈতিক #রাষ্ট্রভাষা