বঙ্গনিউজঃ কমলাপুর রেলস্টেশনে প্রথমবারের মতো স্থাপিত হয়েছে স্বয়ংক্রিয় রেলকোচ ওয়াশিং প্ল্যান্ট। এখন থেকে পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে তিনটি ট্রেন (কমপক্ষে ৪২টি বগি)। এ লক্ষ্যে কমলাপুর ও রাজশাহীতে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি স্বয়ংক্রিয় রেল কোচ ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে।
এতে প্রতি বগি পরিচ্ছন্ন করতে ৬০ লিটার পানি খরচ হবে, যা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে লাগে ১৫০০ লিটার। অর্থাৎ ১৪৪০ লিটার পানি সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি তিনটি ট্রেন পরিষ্কারে সময় বাঁচবে ৭ ঘণ্টার বেশি। কারণ বর্তমানে একই সংখ্যক ট্রেনের জন্য সময় লাগে প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টা। ৮ নভেম্বর থেকে শুরু হবে এর কার্যক্রম। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
বর্তমানে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে (লিকুইড ডিটারজেন্ট) প্রতিদিন পরিচ্ছন্নতা কাজ করার নির্দেশনা আছে। কিন্তু এটি বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে। মাসে এক-দুই বার কোনো কোনো ট্রেন পরিষ্কার করা হয়। এতে ট্রেনের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশে মরিচা ধরাসহ যত্রতত্র পড়ে থাকে ময়লা-আর্বজনা। মলমূত্র আর ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে যাত্রীরা রীতিমতো অতিষ্ঠ। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যেই উল্লিখিত অত্যাধুনিক ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় রেল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে দেশে ৩৫৯টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। এরমধ্যে আন্তঃনগর ১০৪, মেইল-এক্সপ্রেস ও ডেমু ১২০ এবং লোকাল ১৩৫টি।
জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ওয়াশিং প্ল্যান্ট ছাড়া কোনো ট্রেনই যথাযথ পরিষ্কার রাখা সম্ভব নয়। এছাড়া ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে পরিষ্কার করা কতটুকুই বা সম্ভব। বর্তমান সরকার একের পর এক অত্যাধুনিক ইঞ্জিন-কোচ ক্রয় করছে। নতুন নতুন ট্রেন পরিচালনা করছে। শুধু আন্তঃনগর ট্রেন নয়, সব ট্রেনই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় কোচ ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। নামমাত্র সময়ের মধ্যে ট্রেনগুলো পরিষ্কার শেষে চকচক দেখাবে। গ্লাস পরিষ্কার হবে ঝকঝকে। যাত্রীরা পরিষ্কার দেখতে পাবেন ট্রেনের বাহিরের দৃশ্য। দেশের সব জেলা রেলওয়ে নেটওয়ার্কে আসছে-ট্রেনের সংখ্যা বাড়ছে। এরকম প্ল্যান্ট আরও বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ট্রেনের ভেতর-বাহির সব সময় পরিষ্কার থাকবে-যাতে যাত্রীরা স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন।
রেলওয়ের রোলিংস্টক দপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্ল্যান্ট দুটি কমলাপুর ও রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ওয়াশপিটে স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের শেষে দিকে নেওয়া এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে প্ল্যান্ট দুটিতে ট্রেন ঢুকিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে কোচ ওয়াশিং প্ল্যান্ট ছিল। স্বাধীনতার পর এই প্রথম দেশে এ দুটি প্ল্যান্ট স্থাপনের মধ্য দিয়ে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ট্রেনগুলো ওয়াশের আওতায় আসছে। ট্রেন পরিষ্কার করার জন্য প্রায় ২ ঘণ্টা সময় নির্ধারিত থাকে। কিন্তু, কোনো ট্রেন যখন শিডিউল বিপর্যয় হয় তখন সেই ট্রেন ওয়াশ করার কারণে আরও বিপর্যয় হয়।
রেলপথ সচিব সেলিম রেজা বলেন, ৮ নভেম্বর দুটি প্ল্যান্ট উদ্বোধন হবে। রেলে সেবারমান উন্নয়নের সঙ্গে দিন দিন অত্যাধুনিক কোচ-ইঞ্জিন ক্রয় করা হচ্ছে। ট্রেন পরিচালনায় সময় সাশ্রয়ে-এরকম প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। স্টেশনগুলোও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। প্রতিবারই একেকটি ট্রেন পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করবে। যাত্রীদের ভালো লাগবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ম্যানুয়াল পদ্ধাতিতে কাজ করলে শুধু সময়ই নয়, শ্রমিকও বেশি লাগে। পাশাপাশি প্রতিদিন পরিষ্কার করাও খুবই কঠিন। এর পরিচ্ছন্নতাও নিখুঁতভাবে করা সম্ভব হয় না।
রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিংস্টক) মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী বলেন, রেলকে আধুনিক ও শতভাগ যাত্রীবান্ধব করতে আমরা একের পর এক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছি। অত্যাধুনিক কোচ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব কোচ স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং প্ল্যান্ট ছাড়া যথাযথ পরিষ্কার করাও সম্ভব নয়। বর্তমান সরকারের আমলে আরও অত্যাধুনিক ইঞ্জিন-কোচ আনা হচ্ছে। বৈদ্যুতিক ট্রেন চালানোর উপযোগী নতুন রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে। বৈদ্যুতিক ও দ্রুতগতির ট্রেনও চালু করা হবে। এসব ট্রেন পরিষ্কার রাখতে স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং প্ল্যান্টের কোনো বিকল্প নেই। এসব প্ল্যান্ট আরও স্থাপন করা হবে। এতে যেমন ট্রেন ঝকঝক-চকচক থাকবে, তেমনি সময় ও পানি সাশ্রয় হবে। এতদিন ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হাত ও ব্রাশ দিয়ে ঘষে ঘষে ট্রেনের ভেতর ও বাহির পরিষ্কার করা হতো। আমেরিকার প্রযুক্তিতে স্থাপিত একেকটি ওয়াশিং প্ল্যান্টে এক থেকে তিনটি ট্রেনের বগি পরিষ্কার করা সম্ভব হবে। সময় লাগবে মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিট।
মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী আরও বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে রেলের একটি প্রকল্পের অধীনে ৩৬ কোটি টাকা খরচে এ প্ল্যান্ট দুটি স্থাপন করা হয়েছে। একেকটি ট্রেনের পুরো কোচগুলো প্ল্যান্টে প্রবেশ করবে-অটোমেটিক পদ্ধতিতে পরিষ্কার হয়ে বেরিয়ে আসবে। প্রথম ব্যবহৃত পানি বারবার রিসাইক্লিং করে ওয়াশ করা হবে প্রতিটি ট্রেন। নিয়মিত পরিষ্কার করা হলে ট্রেনে মরিচা ধরবে না-হারাবে না নিজ সৌন্দর্যও। ট্রেন যাত্রীদের প্রত্যাশা ছিল-ট্রেনের ভেতর-বাহির যেন সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। এ প্ল্যান্ট স্থাপনের মধ্য দিয়ে তা কার্যকর হবে।
বাংলাদেশ সময়: ৮:১৩:৩৫ ৬৭৪ বার পঠিত #এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে #ট্রেন পরিষ্কার #বাংলাদেশের ট্রেন