বঙ্গনিউজঃ বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সদস্য ও তাদের পরিবারের মালিকানাধীন ও নেতৃত্বাধীন ব্যাংকে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির কোনো হিসাব রাখা যাবে না। এমন একটি নির্দেশনা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিনকে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ২০ অক্টোবরের মধ্যে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সদস্য ও তাদের পরিবারের মালিকানাধীন ও নেতৃত্বাধীন ব্যাংক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় হিসাব এবং তহবিল সরিয়ে নিতে হবে।
ইউজিসি থেকে ৬ অক্টোবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যদের পারিবারিক অংশীদারিত্ব রয়েছে বা ট্রাস্টিরা পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন এমন ব্যাংকে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হিসাব ও সংরক্ষিত তহবিল ১০ কার্যদিবসের মধ্যে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাতের প্রশ্ন উত্থাপিত হবে না এমন কোনো ব্যাংকে হিসাব ও তহবিল স্থানান্তর করতে হবে।
চিঠিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের নির্দেশনা অমান্য করে বিশ্ববিদ্যালয়টি এমন একটি ব্যাংকের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ লেনদেন পরিচালনা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যাতে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের এক জন সদস্যের পারিবারিক অংশীদারিত্ব রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টি চলমান বিভিন্ন হিসাব এবং সংরক্ষিত তহবিল বিশ্ববিদ্যালয়টি বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্যদের পারিবারিক অংশীদারিত্ব রয়েছে এমন ব্যাংকে পরিচালিত হচ্ছে, যা সুস্পষ্টভাবে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। ইউজিসির এই নোটিশের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর অনুমোদন রয়েছে বিষয়টি তুলে ধরা হয় ইউজিসির পক্ষ থেকে।
বর্তমানে এনএসইউর তহবিলে জমা রয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। দেশের এক ডজনেরও বেশি বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মেয়াদি আমানত হিসেবে এ অর্থ জমা রাখা হয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা রয়েছে সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডে। ব্যাংকটির বসুন্ধরা শাখায় মেয়াদি আমানত হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪৭ কোটি টাকা জমা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ সাউথইস্ট ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক। সাউথইস্ট ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের বড় অংশই এনএসইউর ট্রাস্টি।
অন্যদিকে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, নিয়ম ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে ৪০৮ কোটি টাকা নিজেদের মালিকাধীন ব্যাংকে এফডিআর করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সম্মতির ওপর ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থের ৪৩ ভাগের বেশি টাকা নিজেদের মালিকানাধীন সাউথইস্ট ব্যাংকে জমা রেখেছে। মানবাধিকারকর্মী ড. সুফী সাগর শামস গতকাল শনিবার রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি ও জঙ্গি মদতের নানা অভিযোগ তুলে ধরে দোষীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। লিখিত বক্তব্যে ড. সুফী সাগর সামস বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর জীবন। এতো বেশি অনিয়মের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মানও ক্রমেই নিম্নমুখী।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়টির শীর্ষ ব্যক্তিদের কম মূল্যের জমি বেশি দামে ক্রয়, ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির বিনিময়ে কমিশন, ছাত্রদের টিউশন ফি থেকে অবৈধভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের ৯ সদস্যের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয়, ১ লাখ টাকা করে সিটিং এলাউন্স, অনলাইনে মিটিং করেও সমপরিমাণ এলাউন্স গ্রহণ, নিয়ম ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ডের ৪০৮ কোটি টাকা নিজেদের মালিকানাধীন ব্যাংকে এফডিআর, মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনা অমান্য করে কয়েক গুণ শিক্ষার্থী ভর্তিসহ নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম ও জঙ্গি মদত বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জমেছে অভিযোগের পাহাড়। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ট্রাস্টি ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আজিম উদ্দিন আহমেদ ও এম এ কাসেমের হাতে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই জিম্মি হয়ে আছে বলে জানানো হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অমান্য করে আটটি কমিটির বিপরীতে ২৫টি কমিটি গঠন করে অতিরিক্ত সিটিং এলাউন্স আদায় করে। এ সব কমিটির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সব ক্ষমতা নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করে রেখেছে তারা।
নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, একেকটি ব্যাংকের হাজার হাজার শেয়ারহোল্ডার থাকে। এখন আমাদের ট্রাস্টি ও পরিবারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক নেই এমন ব্যাংক বের করাও তো সহজ কাজ নয়। তার পরও সরকার আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেয়, আমরা সেভাবে কাজ করব।
বাংলাদেশ সময়: ৫:২৮:৪৬ ৪৩৪ বার পঠিত #ইউজিসি #নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় #বোর্ড অব ট্রাস্টিজ #ব্যাংক হিসাব