আমাদের বেশির ভাগ বাবা মায়েরা কেন জানি না তাদের ইচ্ছেগুলো নিজের ছেলেমেয়েদের উপর চাপিয়ে দেয়। তোমাকে ডাক্তার হতে হবে, ইন্জিনিয়ার হতে হবে,বিসিএস ক্যাডার হতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। অবাক দৃষ্টিতে ছেলে বা মেয়েদের তাদের দিকে হা করে তাকানো ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।ছোটবেলা থেকেই মানে বয়স যখন পঁাচ কিংবা দশ কিংবা সন্তান জন্মের কয়েক মাস আগে থেকেই বেশির ভাগ বাবা মায়েদের চলে সন্তানদের ভবিষ্যত রচনার প্রস্তুতি।
তাদের ছেলে বা মেয়েকে বড় হয়ে এই হতে হবে, সেই হতে হবে আরো কত কি। বাবা মায়েরাই যেখানে স্বপ্নে বিভোর থাকে,সেখানো ছেলেমেয়দের স্বপ্নে বিভোর থাকার কোন মানেই হয় না।তাদের তো ২৪ ঘন্টার মধ্য ২০ ঘন্টাই পড়াশুনা নিয়ে থাকতে হবে।প্রত্যেক পরীক্ষায় ফার্স্ট হতে হবে। সেকেন্ড হওয়া চলবে না।সব সাবজেক্টে হাইয়েস্ট নাম্বার পেতে হবে।
অভিভাবকদের মধ্যেও অহর্নিশি প্রতিযোগিতা চলে। আপনার ছেলে ইংরেজিতে কত পেয়েছে? আবার কেউ বলে অংকে আমার মেয়ে সবার থেকে বেশি পেয়েছে।আপনার মেয়ে পায় নি তাই না?
কতই না হাস্যকর!
সবচেয়ে বড় হাস্যকর তখন বেশি মনে হয় যখন ছেলেমেয়েদের নিজস্ব ইচ্ছের বিরুদ্ধে বাঁধা সৃষ্টি করে।
বড় হয়ে কি হবো না না হবো, কোনটাতে নিজের ভালোলাগা, ভালোবাসা এসব নিয়ে ভাববার অধিকার কি নেই?নিজের ইচ্ছেগুলোকে পূর্ণতা দিতে গিয়ে ছেলেমেয়েরা বাবা মায়ের ইচ্ছেগুলো ত্যাগ করে তাহলে তারা সবার দৃষ্টিতে অবাধ্য বলে মনে হয়।
কোন ছেলে বা মেয়ে যদি স্কুল ফাঁকি দিয়ে ক্রিকেট খেলে সারাদিন যার ফলে তার পরীক্ষার রেজাল্ট যদি খারাপ হয় তাহলেতো আত্মীয় স্বজন,পাড়া প্রতিনবেশীরা ধীক্কার দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অথচ সেই ছেলে /মেয়ে যদি জাতীয় দলে খেলে সারা পৃথিবীতে নিজের নাম ও দেশের নাম ছড়িয়ে দেয় তাহলে তার জন্য গর্বের সীমা থাকে না।।
এটাও কত হাস্যকর, তাই না।
ছোটবেলায় কেউ যদি একটা ক্লাস বা একদিন পড়াশুনা না করে গিটার নিয়ে গান প্রাকটিস করে বা কোন গানের প্রোগ্রামে অংশ নেয় তাহলে বাবা মায়ের ধারণা ছেলের পড়াশুনা গোল্লায় গেছে।তাকে নিয়ে সব আশা ভরসা শেষ। সব টাকা জলে গেলো।মানুষের সামনে আর মুখই দেখানো যাবে না।আরো কত কি।
অথচ এই ছেলে যদি দেশসেরা শিল্পী হয় তাহলে সেই বাবা মায়েদের ই গর্বের সীমা থাকে না। তাহলে কেন তাকে ছোটবেলায় সাপোর্ট না দিয়ে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছে।
অনেক মানুষই আছেন আজ যারা লিজেন্ড,কি সঙ্গীতে,কি অভিনয়ে কি খেলাধুলায়, কি শিল্প সাহিত্যে তাদের ইচ্ছেগুলো পূরণের জন্য কতই না যুদ্ধ করেছেন। কেউ কেউ বাড়ি থেকে চলে পযর্ন্ত গিয়েছেন তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে।আর যারা নিয়মের বেড়াজাল ভেদ করতে পারে নি তারা তাদের অপূর্ণ ইচ্ছেগুলোকে সাথে নিয়ে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সারভাইভ করে যায়।।
কি এক বুক চাপা আর্তনাদ।নিজের ইচ্ছা পূরণ না হওয়ার অবর্ণনীয় আকুলতা আহত পাখির মত ডানা ঝাপটাতে থাকে।
ইচ্ছেরা তো মুক্ত বিহঙ্গের মতো কল্পনার রাজ্যে ডানা মেলে ছোটাছুটি করে। টিপ টিপ বৃষ্টির মতো যার কাল্পনিক ছোয়ার শরীর আর মনে শিহরণ জাগে।ইচ্ছেরা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো যা মনের কিনারে আছড়ে পড়ে। শরতের কাশফুলের মতো মনের উঠোনে শোভা বর্ধন করে। শুভ্র মেঘের মতো হদয়ের আকাশে ভেসে বেড়ায়।কাব্যিক চেতনায় মনের বাগানে ফুটে থাকা অজস্র ফুলের মাঝে লুকোচুরি খেলে। হয় তো ধরা দেয়, হয় তো ধরা দেয় না। তবুও বেঁচে থাকুক হাজারো মানুষের হাজারো ইচ্ছেরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:১০:২১ ৬৮৫ বার পঠিত # #আসক্তি #ইচ্ছে #জীবনের লক্ষ্য #বিখ্যাত #মাদক #লক্ষ্যস্থির #শখ #সৃজনশীল #হতাশা