বঙ্গ-নিউজ ডটকম: প্রয়াত বরেণ্য লোকসঙ্গীত শিল্পী আবদুর রহমান বয়াতির ঋণ পরিশোধ ও পরিবারকে সাহায্য করার জন্য শিল্পী কল্যাণ তহবিল ও প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ তহবিল থেকে সাহায্য করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. রণজিত বিশ্বাস।
তিনি আরও বলেন, আবদুর রহমান বয়াতি একজন অসামান্য বাউল শিল্পী ছিলেন। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এ বাউল শিল্পীর শূন্যস্থান কখনো পূরণ হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে তিনি বাউল শিল্পীর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আবদুর রহমান বয়াতিকে মঙ্গলবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়েছে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তার মরদেহে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।
এখান থেকে তার মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর বাদ যোহর জানাজা শেষে মরদেহ শিল্পীর ভাড়া বাসা যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে পরে তাকে তার জন্মস্থান সূত্রাপুরের পঞ্চায়েত কবরস্থানে দাফন করা হবে।শ্রদ্ধা জানানো শেষে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরুদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, আবদুর রহমান বয়াতির মতো শিল্পী আর কখনো আসবেন না। তিনি বাউল গানের মূল ধারা ধরে রেখে বিশ্বের কাছে বাউল গানকে পরিচিত করেছেন।
সাংস্কৃতিক জগতে আগ্রাসন চলছে এমন ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই শিল্পী বেঁচে থাকতে কেউ সাহায্য তো দূরের কথা, দেখতে পর্যন্ত আসেননি। এই গুণী শিল্পী সামাজিকভাবে অবহেলার শিকার হয়েছেন।
কোনো শিল্পী যেন বেঁচে থাকতে এ ধরনের অবহেলার শিকার না হন সেজন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান নাসিরুদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, আবদুর রহমান বয়াতির জীবনাবসানে লোক সঙ্গীতের একটি অধ্যায় শেষ হলো। তার গান নাগরিক সমাজে পরিচিত ছিল। তার গানের ধারার মধ্যে লোক সঙ্গীতের মূল স্রোত উঠে এসেছে। রাষ্ট্রীয় পুরস্কার না পাওয়ার ব্যর্থতা নিয়ে এ শিল্পীতে চলে যেতে হলো।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান বলেন, শিল্পীদের রাজনৈতিক ভাগে ভাগ করা উচিত নয়। অসুস্থ হওয়ার পর সরকার ও বিরোধী দল কেউ তার খোঁজ নেয়নি। প্রত্যেকের উচিত গুণী শিল্পীদের বেঁচে থাকার সময় তাদের সম্মান জানানো ও খোঁজ নেওয়া।
শহীদ মিনারে উপস্থিত বয়াতির ছেলে আলম বয়াতি বলেন, এদেশের মানুষ আমার বাবাকে অনেক ভালোবাসেন। ভেদাভেদ ভুলে সবাই পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমার বাবা বঙ্গবন্ধু থেকে শুরু করে বিশ্বের সবার কাছে সম্মান পেয়েছেন। গানের মধ্য দিয়ে সবার অন্তরে তার বাবাকে বাঁচিয়ে রাখার আহ্বান জানান তিনি।
শহীদ মিনারে আবদুর রহমান বয়াতির মরদেহে শ্রদ্ধা জানান সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সচিব ড. রণজিত বিশ্বাস, শিল্পকলা একাডেমির পক্ষে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, টেলিভিশন শিল্পী সংস্থা, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বিএনপি চেয়ারপার্সনের পক্ষে আমান উল্লাহ আমান, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটি, জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, বিজিএমইএসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। উল্লেখ্য, সোমবার সকাল সাড়ে সাতটায় রাজধানীর সাত মসজিদ রোডের জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।শিল্পী আবদুর রহমান বয়াতির প্রায় পাঁচশ’ একক অ্যালবাম রয়েছে। ১৯৩৯ সালে ঢাকার সূত্রাপুর থানার দয়াগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আবদুর রহমান বয়াতি ছিলেন একাধারে গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক এবং শিল্পী। তার বিখ্যাত গান ‘একটি চাবি মাইরা, দিল ছাইড়া, জনম ভরে চলিতেছে; মন আমার দেহঘড়ি, সন্ধান করি, কোন মেস্তুরি বানাইয়াছে’ আজও শহরে ও গ্রামে গেয়ে চলেন সাধারণ মানুষ।তার গানের কথায় দেহতত্ত্ব ছাড়াও মাটি ও মানুষের কথা উঠে এসেছে। গান গেয়ে তিনি দেশ-বিদেশের শ্রোতাদের মাতিয়ে রেখেছিলেন।
শুধু তাই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সিনিয়র তাকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান। সেখানে জমকালো অনুষ্ঠানে গান গেয়ে ব্যাপক প্রশংসা পান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:২৫:৪৪ ৫৮৯ বার পঠিত