বঙ্গনিউজঃ ঢাকা শহরে যাত্রীদের সামনে নতুন ভোগান্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিস’। এ সার্ভিসগুলো এখন রাজধানীর বিকল্প ‘ট্যাক্সি’ সার্ভিসে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এখান থেকে গাড়ি পেতে নানা ধরনের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। একদিকে ভাড়া বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। অন্যদিকে চালকদের স্বল্প দূরত্বে না যাওয়ার জন্য বিড়ম্বনা। এক দশক আগে ট্যাক্সিক্যাব এবং বর্তমানে সিএনজিচালিত অটোরিকশার বাজে অভিজ্ঞতা এখন রাইড শেয়ারিং সার্ভিসেও। অ্যাপে চালকদের গন্তব্য জানার সুযোগ না থাকলেও ফোন করে গন্তব্য জেনে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যেতে চাচ্ছেন না চালকরা। এমনকি চালকরা অস্বীকৃতি জানানোর পর যাত্রীদেরই কল কাটতে বাধ্য করছেন। ফলে তাদের জরিমানার শিকার হতে হচ্ছে। জরিমানার টাকা দিতে গিয়েও অ্যাপের জটিল নির্দেশনা অনুসরণের ক্ষেত্রে সমস্যার মুখে পড়ছেন যাত্রীরা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে ১৪টি রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নিবন্ধিত থাকার তথ্য রয়েছে। তবে ঢাকায় সাধারণত ‘উবার’ অ্যাপ থেকেই মানুষ গাড়ি পায়। এর বাইরে ‘ওভাই’ থেকে সব সময় না মিললেও মাঝেমধ্যে গাড়ি মিলছে। পাঠাও এবং সহজ থেকে মোটরসাইকেল মিললেও প্রাইভেট কার পাওয়া যায় না। ফলে রাজধানীতে একচেটিয়া ব্যবসায় আছে উবার।
ভোগান্তির নতুন মাত্রা :রাজধানীতে উবার ব্যবহার করে এবং সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে দেখা যায়, এ সার্ভিসের ভাড়া বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। যেমন- আগে উত্তরা থেকে ধানমন্ডি যেতে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়া আসত। এখন সেই ভাড়া ৭৫০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকা দেখায়। মতিঝিল থেকে বিমানবন্দরে যেতে ভাড়া দেখাত ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এখন সেই ভাড়া দেখায় ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা।
স্বল্প দূরত্বের ক্ষেত্রে ভাড়া বেড়েছে আরও বেশি।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকালে অফিস যাওয়ার সময়, বিকেলে অফিস থেকে ফেরার সময় এবং কোনোরকম বৃষ্টি হলেই ‘বাড়তি চাহিদার কারণে ভাড়া একটু বেশি’ নোটিশ দিয়ে উবারের ভাড়া হয়ে যায় আকাশচুম্বী। সকাল ৮টায় খিলক্ষেত থেকে তেজগাঁও এলাকায় যাওয়ার জন্য উবারের ভাড়া দেখানো হয় ৬৫০ টাকা। বিকেল ৫টায় মতিঝিল থেকে বিমানবন্দরের যাওয়ার ভাড়া দেখানো হয় ১০২০ টাকা। বৃষ্টির ফোঁটা পড়লেই ভাড়া সাধারণ সময়ের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি হয়ে যায়।
বিআরটিএর রাইড শেয়ারিং নীতিমালায় বলা হয়েছে, ২০১০ সালের ট্যাক্সিক্যাব নীতিমালা অনুযায়ী রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের ভাড়া নির্ধারিত হবে। ওই নীতিমালা অনুযায়ী, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্যাক্সিক্যাবের জন্য প্রথম দুই কিলোমিটারের জন্য ৬০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের জন্য ১৫ টাকা হারে ভাড়া নির্ধারিত হবে। এক-চতুর্থাংশ কিলোমিটার বা অংশের ক্ষেত্রে তিন টাকা ৭৫ পয়সা হারে ভাড়া নির্ধারিত হবে। আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছাড়া বা ইকোনমি ক্যাবের জন্য প্রথম দুই কিলোমিটারের জন্য ৫০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের জন্য ১২ টাকা হারে ভাড়া নির্ধারিত হবে। আর এক-চতুর্থাংশ কিলোমিটার বা অংশের ক্ষেত্রে তিন টাকা হারে ভাড়া নির্ধারিত হবে।
সংশ্নিষ্ট একটি সূত্র জানায়, উবার ট্যাক্সিক্যাব নীতিমালা অনুযায়ী ভাড়া নেয় না, নেওয়া সম্ভবও নয়। কারণ ট্যাক্সিক্যাবে মিটারে ভাড়ার হার দেখানো হয় এবং দূরত্ব অনুযায়ী গন্তব্য শেষে ভাড়া নির্ধারিত হয়। কিন্তু রাইড শেয়ারিংয়ে যাত্রীকে প্রথমে একটি সম্ভাব্য ভাড়া দেখানো হয়। পরে সময়ের তারতম্যের কারণে ভাড়া বাড়ে। এ ছাড়া চাহিদা অনুযায়ী গাড়ির সংখ্যা কম থাকলে ভাড়া বাড়ে।
সূত্রটির ভাষ্য, এক উবারেই তিন ধরনের প্রাইভেট গাড়ি আছে। উবারএক্স, উবার প্রিমিয়াম এবং উবার এক্সএল। তিন ধরনের গাড়ির ক্ষেত্রে তিন ধররের ভাড়া দেখানো হয়। উবার এক্সে যদি ৩৫০ টাকা ভাড়া হয়, তাহলে উবার প্রিমিয়ামে ভাড়া হয় ৪১০ টাকা, উবারএক্সএল সার্ভিসের ভাড়া দেখানো হয় ৬২০ টাকা। সেখানে কীভাবে ট্যাক্সিক্যাব নীতিমালা অনুসরণ করা হবে? বরং রাইড শেয়ারিংয়ের জন্য স্বতন্ত্র ভাড়ার হার নির্ধারিত হলে সেটা যুক্তিযুক্ত হতো। সেখানে সম্ভাব্য ভাড়া কীভাবে নির্ধারিত হবে, কোন কোন পরিস্থিতিতে কোন কোন উপাদানের ভিত্তিতে ভাড়ার হার কতটা পরিবর্তিত হবে, তা সুনর্দিষ্ট থাকলে যাত্রীদের এভাবে অস্বাভাবিক ভাড়ার মুখোমুখি হতে হতো না।
কয়েকজন যাত্রী জানান, বর্তমানে উবারের অ্যাপ ব্যবহার করে গাড়ি ডাকার পর চালক ফোন করে গন্তব্য এবং কীভাবে ভাড়া পরিশোধ করা হবে জানতে চান। গন্তব্য পছন্দ না হলে এবং ক্যাশ টাকায় ভাড়া না দিলে চালক যেতে চান না। এসব ভোগান্তির কথা উবারে অভিযোগও করা যায় না। ঢাকায় তাদের কোনো কল সেন্টার বা গ্রাহক সেবাকেন্দ্র নেই।
উবারের বক্তব্য :সমকালের প্রশ্নের জবাবে উবারের পক্ষ থেকে ই-মেইল বার্তায় জানানো হয়, উবারের প্রতিটি ট্রিপের আগে যে সম্ভাব্য ভাড়া দেওয়া হয়, সেটি একটি বিশেষ অ্যালগরিদমের মাধ্যমে দূরত্ব ও আনুমানিক সময় বিবেচনা করে নির্ধারণ করা হয়। মাঝে মাঝে চাহিদা বেশি থাকে এবং চাহিদার চাইতে জোগান (একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সে সময়ে চালকের সংখ্যা) কম হয়। তখন আমাদের অ্যালগরিদম পরিচালিত ‘ডায়নামিক প্রাইসিং’ বা ‘সার্জ’ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করা শুরু করে। এ কারণে কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় কিছু সময়ের জন্য ভাড়া বেড়ে যেতে পারে।
এতে আরও বলা হয়, উবার ব্যবহারকারীদের যেসব নিয়ম মেনে চলতে হবে, তা উবারের কমিউনিটি গাইডলাইনে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া আছে। যাত্রীরা নিজেদের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে চালকদের রেটিং করেন। পাশাপাশি, উবার তাদের ট্রিপ গ্রহণ ও বাতিল করার হারের ওপরও নজর রাখে। অনেক সময় চালকরা অপ্রত্যাশিত কোনো কারণে ট্রিপ বাতিল করতে বাধ্য হন। তারপরও, উবার তাদের ট্রিপ বাতিল করার হারটি কমিয়ে আনতে উৎসাহিত করে।
উবারের ভাষ্য, ঘন ঘন অথবা অযৌক্তিক কারণে ট্রিপ বাতিলের ক্ষেত্রে টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য উবার অ্যাপে সহজ ব্যবস্থা রয়েছে। যদি কোনো যাত্রী মনে করেন যে ট্রিপ বাতিলের পরে তার কাছ থেকে অন্যায়ভাবে টাকা নেওয়া হয়েছে, তাহলে তিনি তার অ্যাপের ট্রিপ হিস্ট্রিতে গিয়ে সাহায্য চাইতে পারেন।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান যা বললেন :বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সমকালকে বলেন, রাইড শেয়ারিংয়ের ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে বিআরটিএতে কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত আসেনি। কিংবা রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও কোনো অভিযোগ করা হয়নি। তবে নীতিমালার বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় গ্রহণযোগ্য নয়।
রাইড শেয়ারিংয়ের ভাড়ার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৪৪:১৬ ৭১৯ বার পঠিত # #উবার #ভাড়া বেড়েছে #ভোগান্তি #রাইড শেয়ারিং সার্ভিস