বঙ্গনিউজঃ বাংলাদেশি বাবা ও জাপানি মায়ের দুই শিশুকে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিবর্তে রাজধানীর গুলশানে একটি বাসায় একসঙ্গে আগামী ১৫ দিন বসবাস করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
পাশাপাশি ঢাকার সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক পদের একজনকে বিষয়টি তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিএমপি কমিশনারকে তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।
এর আগে দুই শিশুর সঙ্গে আদালতের খাস কামরায় বিচারকরা একান্তে কথা বলেন। শিশুদের মতামত শোনেন।
আদালতে বাবা শরীফ এমরানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। অন্যদিকে রিটকারী জাপানি নারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
গত ১৯ আগস্ট বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই জাপানি শিশু কন্যা জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে হেবিয়ার্স কর্পাস আবেদন করেন তাদের মা জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো। রিটে দুই কন্যা সন্তানকে নিজের জিম্মায় নেওয়ার নির্দেশনা চান ওই নারী।
পরে ওইদিনই দুই জাপানি শিশু এবং তাদের বাবা শরীফ ইমরানকে এক মাসের জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি দুই শিশুকে আগামী ৩১ আগস্ট আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপর গত ২২ আগস্ট দুই শিশুকে খুঁজে বের করে হেফাজতে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরদিন সকালে বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন দুই শিশুর বাবার পক্ষে আইনজীবী ফাওজিয়া করিম। পরে শুনানি নিয়ে দুই শিশুকে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকার তেজগাঁওয়ে পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে উন্নত পরিবেশে রাখার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এই সময়ের মধ্যে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জাপানি মা এবং বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাংলাদেশি বাবা শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার দুই শিশুকে হোটেলের রাখার নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করা হয়।
২০০৮ সালে বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) ও জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো (৪৬) জাপানের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বিয়ের পর টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। তারা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিলেন।
চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান ও এরিকোর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্ত এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর এক দিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুল বাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। পরে দুই শিশুকে ঢাকা নিয়ে আসেন তাদের বাবা। এ অবস্থায় দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:১৯:২৯ ৯৪১ বার পঠিত #জাপানী শিশু #বাবা #বিচারক #ভার্চুয়াল আদালত #ভিকটিম সাপোর্ট #মা #হাইকোর্ট