বঙ্গ-নিউজ ডটকম:‘এক চুলও নড়বো না’ বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন সে বিষয়ে জানতে চেয়েছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তারা মন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে জানতে চান, তাহলে কি বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ শেষ হয়ে গেল? জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আলোচনার দরজা বন্ধ হয়ে যায়নি। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বোঝাতে চেয়েছেন দেশ সংবিধান অনুযায়ী চলবে। সেখান থেকে এক চুলও নড়া হবে না। পৃথিবীর সকল দেশই সংবিধান অনুযায়ী চলে। ব্রিফিং শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে কূটনীতিকদের জিজ্ঞাসার জবাবে এখনও আলোচনার সুযোগ আছে এবং সংবিধানের মধ্যেই সেই সুযোগ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের আনক্লজ সভাকক্ষে সন্ধ্যায় ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান খানের গ্রেপ্তার, গার্মেন্ট সেক্টরের শ্রম পরিস্থিতি এবং আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে সরকারের অবস্থান তুলে ধরতে মন্ত্রীর এ ব্রিফিংয়ের আয়োজন হলেও কূটনীতিকদের মূল ফোকাস ছিল মানবাধিকার সংগঠক আদিলুর রহমানের গ্রেপ্তার ও রিমান্ড এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে। কানাডা, নরওয়ে, ইইউ ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বেশ ক’টি দেশের তরফে বিষয় দু’টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। চেষ্টা করা হয়েছে তাদের উদ্বেগ নিরসনের। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। আইন ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আদিলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকারের এ বক্তব্যে কূটনীতিকরা সন্তুষ্ট হয়েছেন কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা আমার কথা শুনেছেন। মনে হয়েছে সন্তুষ্ট হয়েছেন। বিএনপির সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সরকারের অবস্থানে কোন পরিবর্তন আসেনি। কিন্তু যারা জাতীয় শোক দিবসে কেক কেটে জন্মদিন পালন করেন তারা সংলাপে কতটা আন্তরিক তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তারপরও সরকার সংলাপে রাজি, আলোচনার দরজাও খোলা আছে। ব্রিফিং শেষে কোন কূটনীতিক আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বললেও এক রাষ্ট্রদূত ও দু’জন ডেপুটি হাইকমিশনার আলোচ্য বিষয়ে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার এক প্রভাবশালী দেশের উপ-হাইকমিশনার বলেন, আদিলুর রহমান, গার্মেন্ট ও নির্বাচন- এ তিন ইস্যুতে মন্ত্রী সরকারের অবস্থান তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, মন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ এখন গণতন্ত্রের যে ভিত রয়েছে আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার তা আরও মজবুত করতে চায়। সে লক্ষ্যেই সরকার কাজ করছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী সংবিধান থেকে এক চুলও না সরার কথা বলেছেন। পশ্চিমা বিশ্বের এক কূটনীতিক বলেন, মন্ত্রী আদিলুর রহমানের গ্রেপ্তার নিয়ে সরকারের দেয়া ‘এইড মেমোয়ের’-এর উদ্ধৃতি দিয়ে ঘটনাটির ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমাদের উদ্বেগ এখনও আছে। এশিয়ার একটি দেশের রাষ্ট্রদূত বলেন, নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী রোববার যা বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখানে তাই তুলে ধরেছেন বিস্তারিত। নাথিং নিউ। বেশির ভাগ ডেপুটি ও প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন: বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও দাতা সংস্থার প্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ব্রিফিংয়ে। ৬০ রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল মন্ত্র্ত্রণালয়ের প্রটোকল অনুবিভাগ। তাদের রেকর্ড মতে, ব্রিফিংয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য, ইইউ, ভারত, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্সসহ প্রায় ৩৫ রাষ্ট্রের ডেপুটি হাইকমিশনার বা চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এবং ইউএনডিপি, কানাডা, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল ও দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতসহ ৪৪ মিশনের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এক মিশনের একাধিক প্রতিনিধির উপস্থিতিতে মোট সংখ্যা ৬৪তে গিয়ে দাঁড়ায়। গত জুনের প্রথম সপ্তাহে তিন ভাগে কূটনীতিকদের ব্রিফিংসহ অতীতের সব ব্রিফিংয়ে রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের প্রাধান্য থাকলেও গতকাল ছিল এর ব্যতিক্রম। মন্ত্রীর ব্রিফিংয়ে ডেপুটি ও প্রতিনিধি প্রেরণের বিষয়টি কর্মকর্তাদের মাঝে আলোচনায় ছিল। রোববারের ব্রিফিংটি শেষ মুহূর্তে স্থগিত করায় গতকালের উপস্থিতিতে প্রভাব পড়েছে বলে কেউ কেউ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০:১২:২৪ ৩৮৬ বার পঠিত