২.অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও গণতান্ত্রিক ধারার দল জাতীয় কংগ্রেস : অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও গণতান্ত্রিক ধারার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একটি জাতীয় রাজনৈতিক দল। এই দল সাধারণভাবে কংগ্রেস নামে পরিচিত। ১৯৪৭ এ ভারতবর্ষ অর্থাৎ ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের সময়ে ও পূর্ববর্তী সময়ে ভারতে এই রাজনৈতিক দলটির জণ্ম ও আধিপত্ব ছিল এবং মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষ বসু ও জওহরলাল নেহেরু ছিলেন এর কেন্দ্রবিন্দুতে ৷’জাতীয় কংগ্রেস’ দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলদুটির একটি (অপর দলটি হল ভারতীয় জনতা পার্টি)। এটি একটি ভারতবর্ষের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন।১৮৮৫ সালে থিওজোফিক্যাল সোসাইটির কিছু “অকাল্ট” সদস্য কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন।এঁরা হলেন অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম, দাদাভাই নওরোজি, দিনশ এদুলজি ওয়াচা, উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, মনমোহন ঘোষ, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে ও উইলিয়াম ওয়েডারবার্ন প্রমুখ। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে জাতীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব দান করেছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা অর্জন করলে, কংগ্রেস দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। সেই থেকে মূলত নেহেরু-গান্ধী পরিবারই কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দান করতে থাকেন।
• অপারেশন ব্লু স্টার : কংগ্রেস কর্তৃক চালিত এই সেনা অভিযান শিখ ধর্মাবলম্বিদের তীর্থস্থান হরমন্দির সাহিব দখলের জন্য পরিচালিত একটি সামরিক অভিযান। এতে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে এবং পরবর্তীতে এর প্রতিশোধ স্বরূপ ২জন শিখ দেহরক্ষীর দ্বারা তৎকালীন কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করা হয় ৷
• শিখ গণহত্যা (১৯৮৪) : ১৯৮৪ সালে কংগ্রেস সমর্থক কর্তৃক চার দিনের ব্যাপক হিংসাত্মক ঘটনায় প্রাণ হারান সহস্রাধিক শিখ। এই ঘটনা ঘটে মূলত দিল্লি ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে।
• পরিবারতন্ত্র : দলটিতে সাংগঠনিক কাঠামোতে প্রায় সবসময়ই নেহরু,গান্ধী পরিবার কেন্দ্রে ছিলেন। অন্য কাউকে সুযোগ দেওয়া হয়নি।ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে জয়ী ‘সুভাষ চন্দ্র বসু’ কেও নেহেরুর জন্য ও মহাত্মা গান্ধীর কারণে পদ ত্যাগ করতে হয়েছিল এটিও বেশ বিতর্কিত ৷
• দুর্নীতি : অন্যান্য দলের মতো কংগ্রেসও দুর্নীতির জন্য বেশ বিতর্কিত। ধারণা করা হয় ২০০৪-২০১৪ শাসনকালের বিতর্ক-দুর্নীতির কারণেই,২০১৪ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস এতো বড় ব্যবধানে বিজেপির কাছে পরাস্ত হয়।
এক অসম্প্রদায়িক চেতনার মাধমে কংগ্রেসের সুচনা হয় ৷পরে ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় তা দখল করে ও মুসলমানদের বিরোধী ও ক্ষতিকর বিধি প্রনয়ন করেন ৷যার ফলে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভক্তির একটি উল্লেখযোগ্য চেতার বিরাজমান করে পরে ১৯০৫ মুসলমান সম্প্রদায়রা আরেকটি দল গঠন করেন,যার নাম ছিল ‘পাকিস্তান মুসলীম লীগ’৷
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলো মুসলিম লীগ। ১৯৪৬ এর প্রাদেশিক নির্বাচনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে মুসলিম লীগ পূর্ব বাংলায় অভাবনীয় বিজয় লাভ করে। পূর্ব বাংলার জনগণ তখন মুসলিম লীগকে প্রাণের সংগঠন মনে করতো। কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম লীগ বাঙ্গালির অধিকার আদায়ে উদাসীন হয়ে পড়ে। বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবীতে মুসলিম লীগের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা পূর্ব বাংলার জনগোষ্ঠীকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। পূর্ব বাংলায় বাস্তবিক অর্থে মুসলিম লীগ বিরোধী একটি শক্তিশালী প্লাটফর্ম গড়ে ওঠে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ও মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন মুসলিম লীগ বিরোধী এই ফ্রন্টের মূল তিন নেতা। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর অনীহার কারণে পাকিস্তান ঘিরে বাঙ্গালিদের স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। ফলে পূর্ব বাংলায় (র্পূব পাকস্তিানে) দ্রুত বিদ্রোহ দেখা দেয়। এ সময় মুসলিম লীগ ও পশ্চিমা শাসক চক্রের বিরোধিতায় র্পূব বাংলায় বিভিন্ন ছাত্র-যুব-সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে ওঠে। এরপর ১৯৫২ সালরে ভাষা-আন্দোলনে ‘বাংলা’ কে রাষ্ট্রীয় ভাষার র্মযাদা দানের জন্য এরা পশ্চমি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয় লাভ করে ৷এদকিে ১৯৫৪ সালরে নির্বাচনে বিজয়ি হয়ে র্পূব পাকিস্তান যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠন করেছিল বটে কন্তিু এর কয়কে বছর পরইে উভয় পাকিস্তানে শুরু হয় ‘আইয়্বূ খাঁন’ এর স্বৌর শাসন ৷ একাধারে দশ বছর চলে সে শাসন৷ এরপর ‘র্পূব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ ১৯৭০ এর নির্বাচনে উভয় পাকস্তিানরে মধ্যে নিরংকুস সংখ্যাগরষ্ঠিতা লাভ করা সত্ত্বওে সে সময় পাকিস্তানের কেন্দ্রিয় সরকার র্অথাৎ পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করতে না দিয়ে বরং র্পূব পাকিস্তানের জনগণরে সঙ্গে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে এবং টানা নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষ, বঙ্গবন্ধু , জাতীয় চার নেতা , মুক্তিযুদ্ধের র্সবাধনিায়ক ও মুক্তিযুদ্ধের ১১ জন সেক্টর কমান্ডাররে নির্দেশনার মধ্যে দিয়ে ‘বাঙ্গালি জাতি হিসেবে আমরা র্অজন করি আমাদের নিজস্ব পরিচয় ও নিজস্ব একখণ্ড ভূমি বা দেশ যার নাম বাংলাদেশ ৷
পাকিস্তান (র্পূব ও পশ্চিম পাকিস্তান ) ন্যাশনাল কংগ্রেস : ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করলে পূর্ব বঙ্গের কংগ্রেস দলীয় নেতাকর্মীগণ পাকিস্তান ন্যাশনাল কংগ্রেস নামেই সংগঠিত হয়। ন্যাশনাল কংগ্রেস প্রথম থেকেই প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। দলের নেতাকর্মীগণের প্রায় সকলেই হিন্দু হওয়ায় পাকিস্তান সরকার দলটিকে ‘ভারতের গুপ্তচর’ বলে আখ্যায়িত করে। দলটির নেতা-কর্মীদের ওপর দমননীতি চালায়। ফলে ভাষা আন্দোলনে এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও ন্যাশনাল কংগ্রেস পাকিস্তানে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে পারেনি। দলের অনেক নেতাকর্মীই ধীরে ধীরে ভারতে চলে যান। প্রগতিশীল অনেকেই পরবর্তীতে ন্যাপ ও আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বের দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে গঠিত হয় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বা ন্যাপ। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৫৭ সালে নতুন এ দলটির আত্মপ্রকাশ !
৩. বিপ্লবী সাম্যবাদী ধারার কমিন্যুস্ট র্পাটি :
ভারতের কমিন্যুস্ট র্পাটি : ভারতরে কমিন্যুস্ট র্পাটি (সিপি আই) হল ভারতের একটি অন্যতম প্রধান রাজনতৈকি দল। এটি কমিন্যুস্ট র্পাটি ভারতীয় শাখা। ভারতের কমিন্যুস্ট র্পাটি কবে প্রতিষ্ঠিত হয়, তা নিয়ে ভারতরে কমিন্যুস্ট আন্দোলনে দুটি মত প্রচলতি আছে । সিপি আই ১৯২৫ সালরে ২৬ ডিসেম্বর তারিখে দলের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে ঘোষণা করছে, কিন্তু সিপিআই ভেঙ্গে গঠিত দল ভারতরে কমউিনস্টি র্পাটি (র্মাক্সবাদী) (সপিআিইএম) মনে করে সিপিআই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯২০ সালে ১৯৪২ সালরে জুলাই মাসে সিপি আই আইনি স্বীকৃতি লাভ করে , অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনযি়ন কংগ্রেসের উপর কমউিনস্টিদের র্কতৃত্ব বৃদ্ধি পায়। একই সময় কমউিনস্টিরা তাদের ভারত ছাড়ো আন্দোলনরে বিরোধিতা সর্ম্পকে রাজনতৈকিভাবে সচতেন ছিলেন । ১৯৪৬ সালে সিপি আই একক শক্তিতে প্রাদশেকি আইনসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে । ১৫৮৫টি আসনের মধ্যে ১০৮টি আসনে লড়ে তারা আটটি আসন পায়। সিপি আই-এর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল ৬৬৬,৭২৩। উল্লেখ্য , ভারতরে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৮৬% এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি । বাংলায় তিনটি আসনে জয় লাভ করে তিনটি আসনইে জয় লাভ করে সিপি আই র্প্রাথী সোমনাথ লাহডি়ী গণপরষিদে নর্বিাচতি হন। ১৯৪৬ সালে সিপি আই তেভাগা আন্দোলন নামে বাংলায় সামন্ত্রতন্ত্ররে বিরুদ্ধে একটি জঙ্গি আন্দোলন শুরু করে । ১৯৬২সালে চীন ভারত যে যুদ্ধ হয়,সেই যুদ্ধরে পক্ষে ও বিপক্ষে তৎকালীন সি পি আইএর ভেতর অর্ন্তদ্বন্দ্ব শুরু হয়।১৯৬৪সালের কংগ্রেসে তার বহি প্রকাশ হয়।ফল দ্বিধা বিভক্ত হয়ে সি পি আই(এম) নাম নিয়ে নূতন স্ংগঠন গড়া হয় ও সি পি আই কে সংশোধন বাদী আখ্যায়তি করে, র্বতমানে এ দলটি প্রায় বিলুপ্তির পথে ৷
পাকিস্তান (র্পূব ও পশ্চিম –উভয় পাকস্তিান) কম্যুনিস্ট পার্টি : ভারত-পাকস্তিান বিভাজনের পরে ১৯৪৮ সালের ভারতীয় কম্যুনিস্ট পার্টি কলকাতা সম্মেলনে ভারতের উত্তর প্রদেশের কমরেড সাজ্জাদকে সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ করে পাকিস্তান কম্যুনিস্ট পার্টি গঠিত হয়েছিল। পাকিস্তান কম্যুনিস্ট পার্টির ভূমিকা পাকিস্তান সরকারকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। কেননা, তাদের শ্লোগান ছিল পাকিস্তানের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরোধী। যেমন : ‘ইয়ে আজাদী ঝুটা হ্যায়, লাখো ইনসান ভুখা হ্যায়।’ স্বাধীনতা পরবর্তীকালে কম্যুনিস্ট পার্টি মূলতঃ বেয়াইনি ভাবে সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তনের পথে বেছে নেয়। তারা বিভিন্ন মুখী রণকৌশল গ্রহণ করে। কমরেড মনি সিংহের নেতৃত্বে ময়মনসিংহের হাজং এলাকায়, খুলনা ডুমুরিয়া এলাকায় এবং যশোরের নড়াইল এলাকায় কৃষক অভ্যুত্থান ঘটানোর প্রচেষ্টা চলে। কেন্দ্রিয় পাকিস্তান সরকার অত্যন্ত নির্মমভাবে পুলিশী দমন-পীড়নের মাধ্যমে এসব আন্দোলন ব্যর্থ করে দেয়। পার্টির সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার ফলে অল্পদিনের মধ্যে পাকিস্তানে দলটির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে। ফলে ১৯৫১-১৯৫২ সালের দিকে কম্যুনিস্ট পার্টি সহিংস বিপ−বের পথ পরিত্যাগ করে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে দলটি ৪টি আসনে জয়যুক্ত হয়। ১৯৫৪ সালের ২৩ জুলাই পাকিস্তান সরকার কম্যুনিষ্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এর ফলে কম্যুনিষ্ট পার্টির ত্যাগী নেতৃবৃন্দ আত্মগোপনের পথ বেছে নেন। অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। অবশ্য পরর্বতীকালে এই র্পাটি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ও স্বাধীন বাংলাদশেে বাসদ (বাংলাদশে সমাজতান্ত্রকি দল), জাসদ (জাতীয় সমাজতান্ত্রকি দল)ও ওয়ার্কাস র্পাটি ইত্যাদি বভিন্নি নামে অত্যন্ত শান্তিপূর্ন উপায়ে এদেশে তাদের রাজনতৈকি র্কমকান্ড চালয়িে যাচ্ছে (চলবে)
তথ্যসূত্র : বুকস্ , ইন্টারনটে ৷
লেখক : ফারহানা আকতার, পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক, ইন্টারন্যাশনাল রবীন্দ্র রিসার্চ ইনস্টটিউিট।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪২:২৭ ১১৮১ বার পঠিত #ইতিহাস #উপমহাদেশের বিভাজন #নতুন প্রজণ্ম #মুক্তিযুদ্ধ