বঙ্গ-নিউজ ডটকম : নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে জনমত সংগঠিত করতে আগামী এক মাসে রাজধানী ঢাকাসহ আট জেলায় জনসভা করবেন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া।সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত থেকে সরকার ‘এক চুলও’ নড়বে না- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ঘোষণার পরদিন বিএনপির পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আগের রাতে ১৮ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এই কর্মসূচি চূড়ান্ত করেছেন তারা।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রথম জনসভা হবে ৭ সেপ্টেম্বর নরসিংদীতে। এরপর ১৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে, ১৬ সেপ্টেম্বর রংপুরে, ২২ সেপ্টেম্বর খুলনায়, ২৮ সেপ্টেম্বর বরিশালে ৫ অক্টোবর সিলেটে জনসভা করবে বিএনপি, যার প্রতিটিতেই খালেদা জিয়া বক্তব্য দেবেন।
কোরবানির ঈদের পরে ঢাকা ও চট্টগ্রামে জনসভাও করবেন খালেদা। ওই জনসভার তারিখ পরে ঘোষণা করা হবে বলে জানান ফখরুল।
নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিতে এ পর্যন্ত সরকারকে তিন দফা সময় বেধে দিয়েছেন খালেদা জিয়া। সর্বশেষ গত ৪ মে শাপলা চত্বরের জনসভা থেকে খালেদা জিয়া ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারকে দাবি মেনে নিতে বলেন।
নতুন কর্মসূচি ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রীর রোববারের সংবাদ সম্মেলনের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, “গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সংবিধানে যেভাবে আছে সেভাবেই নির্বাচন হবে। সেখান থেকে তিনি এক চুলও নড়বেন না। আমরা সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আওয়ামী লীগেরই দাবি ছিল। তা পরিবর্তনের জন্য জনগণের কোনো ম্যান্ডেট তারা নেয়নি।”
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “১৮ দলীয় জোট নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। বর্তমান সরকার কিংবা কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আমরা তাতে যাব না। দেশের জনগণ ওই নির্বাচন প্রতিহত করবে।’’
দেশের ৯০ ভাগ মানুষ নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন চান বলেও দাবি করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।
“আমরা মনে করি, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকার বাধ্য হবে আগামী জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে করতে। আর এ জন্য যে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক পরিবর্তন প্রয়োজন তা তারাই নিয়ে আসবেন, কারণ তারাই সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ।”
১৮ দলীয় জোটকে ‘গণতন্ত্রে বিশ্বাসী জোট’ অভিহিত করে ফখরুল বলেন, “আমরা শান্তি চাই। নিয়মাতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করতে চাই। সরকার দেশে যে রাজনৈতিক সঙ্কেটের সৃষ্টি করেছে, নির্দলীয় সরকার পূনর্ববহাল ছাড়া এর সমাধান হবে না।
“এ লক্ষ্যে আমরা আবার সরকারকে সময় দিচ্ছি। এজন্য আমরা জনগণের কাছে যেতে এই কর্মসূচি দিয়েছি।”
তিনি জানান, কর্মসূচির অংশ হিসাবে জোটের শরিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় নেতারা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে গণসংযোগ করবেন। বিএনপির ৫৬টি দল ৭৫টি রাজনৈতিক জেলা সফর করবেন।
সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই ৫৬ দলের নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
কর্মসূচি ঘোষণা করে সরকারের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, “আর সময় নষ্ট করবেন না। সংসদে নির্দলীয় সরকারের বিধান সন্নিবেশিত করে দেশের জনগণকে স্বস্তি দিন। তাদের মুক্তি দিন।”
আগে ‘কঠোর’ কর্মসূচি দেয়া হবে বললেও বিদেশিদের চাপে এখন ‘নরম’ কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, “বিদেশি চাপ আসবে কেন? আমরা এসব কিছুতে বিশ্বাস করি না। ১৮ দল একটি গণতান্ত্রিক জোট। আমরা দেশে অনিশ্চিত ও অস্থিতিশীল পরিবেশ চাই না বলে সরকারকে আরও সময় দিতে এই কর্মসূচি দিয়েছি।”
তিনি বলেন, এই কর্মসূচি চলাকালে সরকারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হবে। পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনে নতুন কর্মসূচিও দেয়া হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর সংসদের কার্যকাল শেষ হলে তারপর কি হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, “সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২৫ অক্টোবরের পর কী হবে - কেউ বলতে পারে না। সরকার বলেছে, তারা ২৫ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। বর্তমান সংবিধানে আছে-সংসদ বিলুপ্ত হবে না। আবার এই সংসদ রেখেই নির্বাচন হবে। এটা স্ববিরোধী।”
সরকার একটি ‘ঘোলাটে পরিস্থিতির’ সৃষ্টি করে দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
জোটের কর্মসূচির বাইরে ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, ৩ সেপ্টেম্বর দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘কারামুক্তি দিবস’ এবং ১১ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার ‘কারামুক্তি দিবস’ পালনের কর্মসূচির ঘোষণা করেন তিনি।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর ডা. রেদোয়ান উল্লাহ শাহেদী, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল লতিফ নেজামী, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, খেলাফত মজলিসের মাওলানা মজিবুর রহমান পেশোয়ারী, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির রেদোয়ান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির শফিউল আলম প্রধান,খন্দকার লুৎফুর রহমান, ইসলামি পার্টির আবদুল মবিন, লেবার পার্টি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ ভাসানীর শেখ আনোয়ারুল হক, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আলমগীর মজুদার, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাপ এর গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, জমিয়তে ওলামা ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন একরাম, ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনিও ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৪৪:২০ ৩২০ বার পঠিত