বঙ্গনিউজঃ “নতুন প্রজণ্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ” আমার এই কলামটি আজ প্রায় একবছর হয়ে গেল নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে দৈনিক অনলাইন পত্রিকা ‘বঙ্গনিউজ.ডট.কম.’ এ এবং এ কারনে আমি সবসময়ই এর সম্পাদক থেকে শুরু করে এর সকল কলা-কুশলীর নিকট কৃতজ্ঞ ৷ লেখার শুরুতে আমি বুঝতে পারিনি যে লেখাটি শেষ পর্যন্ত এত বিশাল আকার ধারন করবে ৷লেখাটিতে ফিরে এলেই আমার কেবলই মনে হয় আমি ‘পিএইচডি এর মূল থিসিস পেপার লিখছি’ কারন,এই কলামটি লিখতে গিয়ে আমাকে বহু নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে, স্টাডি টেবিলে বসে থাকতে থাকতে ব্যাক-পেইন হয়েছে৷ অনেক সময় আমি যেভাবে জানতে চেয়েছি, সেভাবে পরিস্কার কোনো বর্ননা একটি বইতে পাওয়া যায়নি ৷ তাই বহু বই,পত্রিকা ও ইন্টারনেট খুঁজে খুঁজে আমাকে সঠিক তথ্যটি বের করতে হয়েছে এবং সেটাকে সহজ ভাষায় পাঠকদের সামনে উপস্হাপন করতে হয়েছে যাতে ৫ম শ্রেনীর স্টুডেন্ট থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাষ্টার্স, এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ের স্টুডেন্টরাও তাদের পড়াশুনা ও গবেষণায় এখান থেকে যথাযথ তথ্য সংগ্রহ করে নিতে পারে ৷ এছাড়া সব বয়সী সাধারন পাঠকদের কাছেও লেখাটি ভালো লাগবে যারা ইতিহাসকে জানতে ও পড়তে ভালোবাসেন ৷ তবে তাদের কাজগুলো যাতে সহজ হয় সেজন্য আমার একটি পরিকল্পনা রয়েছে এখানকার সবগুলো পর্ব মিলে একটি বই বের করার যেখানে যেখানে রেফারেন্সগুলো যথাযথভাবে দেয়া থাকবে ৷ মূলত: ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’, এ বিষয়টির সঙ্গে মূল ‘ভারতবর্ষের ইতিহাস’ টিও অতপ্রোতভাবে জড়িত আর এ কারনেই লেখাটি লিখতে লিখতে এত বিশাল আকার ধারন করে ফেললো৷ বাই দ্যা বাই, ভারতবর্ষ তথা বাংলাদেশের ইতিহাস আলোচনার এ পর্যায়ে ছিলাম-২৭ নং পয়েন্টটিতে এবং এই পয়েন্টটি পরিপূর্ন আলোচনার মাধ্যমে এ কলামটি পরিপূর্নভাবে শেষ হবে৷
“২৭. ভারত ভাগ (উপমহাদেশের বিভাজন ) -১৯৪৭–বর্তমান” এ পয়েন্টিকে আমরা মূলতঃ নিন্মোক্ত কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করে নিয়েছিলাম, যথাক্রমে : ১. ভারতে ব্রিটিশ সরকারের ‘ভাগ কর শাসন কর নীতি ও সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার’ , ২. ১৯৪৭-ভারত ভাগ (উপমহাদেশের বিভাজন ), ৩.বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে (১৯৪৭-১৯৭১) রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ৪.ভাষা আন্দোলন, ৫.১৯৫৪ সালের নির্বাচন ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ ,৬.সামরিক শাষন ও স্বাধিকার আন্দোলন (১৯৫৮-১৯৬৯), ৭.ছয়দফা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ,৮.সত্তরের (১৯৭০) নির্বাচন, ৯. মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১০.বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অবদান, ১১.স্বাধীন বাংলাদেশের অভু্্যদয়৷ এই পয়েন্ট বা বিষয়গুলোর মধ্যে আবার বেশীরভাগ পয়েন্টগুলোই এই কলামের প্রথমদিকে ও এখন আলোচিত হছ্ছে৷ আমার পাঠকরা যেনো লেখাটির ধারাবাহিকতায় পূর্ন মনোযোগ নিয়ে ফিরে আসতে পারেন, সে কারনেই একটু পেছন ফিরে তাকানো ৷ গত কয়েকটি পর্বে আমরা ছিলাম উপরোক্ত পয়েন্টগুলো হতে
“২নং পয়েন্টটিতে অর্থাৎ ২. ১৯৪৭-ভারত ভাগ (উপমহাদেশের বিভাজন )” ৷এই পয়েণ্টটিকে আবার নিম্নোক্ত কয়েকটি উপশাখায় বিভাজিত , যথাক্রমে :
ক.১৮৫৭ সালের ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম ও কম্পানি শাসনের অবসান,
খ.মহাসংগ্রামের ব্যর্থতার কারণ ও ফলাফল, ভারতীয় জাতীয় সংগ্রেস,
গ.বঙ্গভঙ্গ ১৯০৫, বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন,
ঘ.১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন ও লক্ষ্মো চুক্তি,
ঙ.১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন,
চ.খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন,
ছ.বেঙ্গল প্যাক্ট, সাইমন কমিশন ও নেহেরু রিপোর্ট,
জ.জিন্নাহর চৌদ্দ দফা ও দ্বি-জাতি তত্ত¡,
ঝ.১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের পটভূমি,
ঞ.১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন,
ট.১৯১৯ ও ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের তুলনামূলক আলোচনা,
ঠ.১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব ও পৃথক রাষ্ট্রের দাবি,
ড.ক্রীপস মিশন,
ঢ.মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা,
ণ.১৯৪৬ সালের নির্বাচন,
ত.অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ,
থ.মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও বাংলার নেতৃত্বের দ্ব›দ্ব,
দ.মাউন্টব্যাটেনের পরিকল্পনা ও র্যাডক্লিফ রোয়েদাদ,
ধ.১৯৪৭ সালের ভারত শাসন আইন ,
ন. ভারত-পাকিস্তান (র্পূব ও পশ্চিম পাকিস্তান) বিভাজন : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ৷
গত পর্বে আমরা আলোচনায় ছিলাম “ন. ভারত-পাকিস্তান (র্পূব ও পশ্চিম পাকিস্তান) বিভাজন - ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন” – এই অংশটিতে ৷আজ আমরা এরই বাকী অংশটুকু জেনে নেবো ৷
ন. ভারত-পাকিস্তান (র্পূব ও পশ্চিম পাকিস্তান) বিভাজন : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন : এ অংশে আমরা গত পর্বে জেনেছি ১৯৪০ থেকে ১৯৪৭ এর ভারতবর্ষ, বাঙ্গালি জাতিসত্ত্বা ও জাতীয়তাবোধ এবং বাংলাদেশী জাতিসত্ত্বা ও জাতীয়তাবোধের ইতিহাস ৷আজ আমরা ১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্ট ভারতবর্ষ বিভাজনের পূর্বে অর্থাৎ সে সময় ভারত ও পাকিস্তান (পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান)বিভাজনের পূর্বে ১৯৪৭ সালের ২০মে এই দুই দেশের হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সে চুক্তিটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেবো৷উভয়পক্ষে অর্থাৎ ভারতের পক্ষে শরৎচন্দ্র বসু ও পাকিস্তানের পক্ষে আবুল হাশিম এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন ৷এখানে সেই চুক্তির গুরুত্বপূর্ন কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো :
১. বাংলা (পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালি-মুসলমান ও ভারতের কলকাতাসহ আরও কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের বাঙ্গালি-হিন্দুদের নিয়ে গঠিত) হবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র এবং মুক্ত ও স্বাধীন দেশ হিসেবে অন্যান্য অংশের অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ভারত ও কেন্দ্রীয় পাকিস্তানের সঙ্গে এর সম্পর্ক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে৷
২.পার্লামেন্ট গঠনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এবং নতুন শাসনতন্ত্রে হিন্দু সম্প্রদায় চাকরিতে সামরিক ও পুলীশ বিভাগসহ সবক্ষেত্রে সমান অংশীদার হবে৷নিয়োগকর্তা হবে বাঙ্গালি৷
৩.স্বাধীন বাংলার সরকার কর্তৃক ঘোষণাকৃত এই যুক্তবাংলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে এবং একটি নতুন অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে ৷ নতুন মন্ত্রিসভায় হিন্দু-মুসলমানের সংখ্যা সমান হবে ৷কিন্তু “মূখ্যমন্ত্রী” পদটি বাদ দেওয়া হবে ৷আবার বলা হয়েছে এই মন্ত্রিসভা গঠিত হলেও কেন্দ্রীয় সরকার মূখ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্ধারন করবেন ৷
৪.ইউরোপীয়দের বাদ দিয়ে মুসলমান ও অমুসলমান পার্লমেন্ট সদস্যরা যথাক্রমে ১৬ ও ১৪ জন সদস্য নির্বাচন করবে এবং এটাই হবে ৩০ সদস্যের একটি কনস্টিটুয়েন্ট এসেম্বলী৷
এই চুক্তি প্রথমে কংগ্রেস মুসলীম লীগের প্রাদেশিক সংগঠন কর্তৃক অনুদিত হতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে পাকিস্তান মুসলীম লীগ ও কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চ পর্যায় কর্তৃক অনুমোদন লাভের পরে বাস্তবায়িত হতে হবে ৷ কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্ট তারিখে সম্পূর্ন ভারতবর্ষ অর্থাৎ এ উপমহাদেশ ভেঙ্গে “ভারত ও পাকিস্তান (পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান)” নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলে উপরোক্ত চুক্তিটি আর বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি৷ (চলবে)৷
তথ্যসূত্র : বুকস্ , ইন্টারনটে ৷
লেখক : ফারহানা আকতার, পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক, ইন্টারন্যাশনাল রবীন্দ্র রিচার্স ইনস্টিটিউট, কলামিস্ট, কথাসাহিত্যিক ৷
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৮:৩৮ ৯৯৩ বার পঠিত #ইতিহাস #উপমহাদেশের বিভাজন #নতুন প্রজণ্ম #মুক্তিযুদ্ধ