বঙ্গনিউজঃ ঢাকার যানজট মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে বহু প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল চলাচলের উড়ালপথের চার ভাগের তিন ভাগ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে জাপান থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছয়টি কোচ বিশিষ্ট চারটি ট্রেন দেশে পৌঁছেছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আরও পাঁচ সেট ট্রেন আসবে। মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) বলছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে প্রথম ধাপে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার মেট্রোরেল চালুর তোড়জোড় থাকলেও এখন বাধা করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় বর্তমান পরিস্থিতিতে রেল উদ্বোধন সম্ভব হচ্ছে না। করোনার কারণে কাজের গতি মন্থর হয়ে গেছে। প্রায় দুই মাস প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানি খবর পাওয়া না গেলেও এই প্রকল্পে কর্মরত ৬৬৮ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ পরিস্থিতিতে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বলছে, এ বছর নয়, আগামী বছরের ডিসেম্বরে মেট্রোরেল চলবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এমআরটি-৬ শেষ করার কথা ছিল ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। কিন্তু চলমান বৈশ্বিক মহামারির কারণে এখন সেই সময়সীমার ব্যত্যয় ঘটেছে। তবে প্রথমে যে সময়সীমা (২০২৪ সালের জুন) নেওয়া হয়েছিল, তার আগেই মেট্রোরেল প্রকল্প-৬-এর নির্মাণকাজ শেষ করার বিষয়ে আশাবাদী তিনি।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক বলেন, প্রকল্প অনুমোদনের সময়, বাংলাদেশের বহুল প্রতীক্ষিত প্রথম মেট্রোরেলের কাজ ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হতে চলেছে। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৪ সালের মধ্যে মেট্রোসেবা চালু করার কথা ছিল। সে হিসাব অনুযায়ী আমরা আরও দুই বছর এগিয়ে আছি। ২০২২ সালের মধ্যে সমস্ত ট্রেনসহ ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে মেট্রোরেল চালু করা হবে। দেশের চলমান করোনা পরিস্থিতি সত্ত্বেও প্রকল্পের কাজ এখন দ্রুত গতিতে চলছে। মেট্রোরেলের সামগ্রিক কাজের উন্নতি বর্তমানে ৬৮ শতাংশ। প্রাথমিক নির্মাণ পরিকল্পনা অনুসারে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের তৃতীয় পর্যায়ের ৮৭ দশমিক ৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, ছয়টি কোচ বিশিষ্ট চারটি ট্রেন ইতিমধ্যে জাপান থেকে বাংলাদেশে পৌঁছেছে এবং আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আরও পাঁচ সেট ট্রেন আসার কথা রয়েছে। দুই সেট ট্রেন ইতিমধ্যে মোংলা বন্দরে রয়েছে আরও দুই সেট আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে ঢাকায় আসবে। বাংলাদেশে এখন চারটি ট্রেন সেট রয়েছে। যদিও মেট্রোরেল প্রকল্পের একটি অংশের কাজ ২০১৯-২০ মেয়াদে শেষ হওয়ার কথা ছিল এবং পরে তা ২০২১ সাল পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে তা নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি।
এম এ এন সিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেল রুটের মূল দৈর্ঘ্য উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার হওয়ার কথা থাকলেও, বর্তমানে এটি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত আরও ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বাড়ানো হয়েছে। এ মেট্রোরেল রুটেই চলবে জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশির যৌথ উদ্যোগে তৈরি হওয়া ২৪টি আধুনিক মেট্রোরেল। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা জানান, মোট ১৪৪টি কোচ নিয়ে ২৪টি ট্রেন রাজধানীর আগারগাঁও, ফার্মগেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং মতিঝিল হয়ে উত্তরা থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার রুটে চলাচল করবে। এই রুটে মোট ১৭টি স্টেশন থাকার কথা রয়েছে। গত ২৩ এপ্রিল জাপান থেকে বাংলাদেশে প্রথম ট্রেন সেট আসার পর উত্তরার ডিএমটিসিএল ডিপোতে এ পর্যন্ত ১৯ ধরনের পরীক্ষা করা হয়েছে। দ্বিতীয় ট্রেন সেট জুনে ঢাকায় পৌঁছানোর পর একই ধরনের পরীক্ষা করা হয়।
প্রসঙ্গত যে, ট্রাফিক জ্যাম কমাতে স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানের অধীনে জাপানের সহায়তায় ঢাকায় কার্যকর ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম তৈরির লক্ষ্যে ২০১২ সালে আনুমানিক খরচ ২২ হাজার কোটি টাকা ধরে এমআরটি লাইন-৬-এর অনুমোদন দেয় সরকার। প্রকল্প ব্যয়ের ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা জোগান দিচ্ছে সরকার। এ প্রকল্পের সময়কাল ছিল ২০১২-২৪, কিন্তু সার্বিক অগ্রগতি দেখে সরকার নির্দেশ দিয়েছিল উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা ২০১৯ সালের মধ্যে এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল ২০২০ সালের মধ্যে চালু করা হবে। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ২০১৯ সালের মে মাসে কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এই প্রকল্পটি চালু করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ৬:৪৭:৩৫ ৯৮৫ বার পঠিত # #জাইকা #ট্র্যাফিক জ্যাম #মেট্রো #মেট্রোরেল #রেলওয়ে #স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান