বঙ্গনিউজঃ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর তৃতীয় দিনে নিখোঁজ শ্রমিকদের উদ্ধার অভিযান চলছে রূপগঞ্জের কর্ণগোপে হাসেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায়।শনিবার সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্থ ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে তল্লাশি করছেন। এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা ভবনের পাঁচতলায় উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।ঘটনাস্থলে উপস্থিতি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জিল্লুর রহমান বলেন, ‘‘আজকে (শনিবার) সকালে কোনো লাশ পাইনি আমরা। আমরা আজ সন্ধ্যার দিকে হয়ত উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করব।’হাশেম ফুডস কারখানার পঞ্চম তলার গেইট ভেঙ্গে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ছবি-মেহেদী হাসান সজীবভবনটির ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্থ ভবনটি থেকে পলেস্তরা খসে পড়ছে। ছয়তলা ভবনের পাঁচতলায় পশ্চিম কোণে আগুন জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলেছেন, ভবনের ধ্বংসস্তুপ থেকে ওই আগুন জ্বলছে। সেই আগুন নিভিয়ে তারা উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।দুর্ঘটনায় নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা ভিড় করছেন কারখানার সামনে। পুলিশ সদস্য বা ফায়ার সার্ভিসের কর্মী যাকেই পাচ্ছেন, স্বজনরা প্রিয়জনের ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘হ্যারে দেখছেন।বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার পর ওই কারখানায় আগুন লাগে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও গতকাল ভোর ৬টার দিকে কারখানার চারতলায় আবারও আগুন বাড়তে থাকে। নেভাতে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট। তাদের চেষ্টায় ২১ ঘণ্টা পর গতকাল দুপুরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।অগ্নিকাণ্ডের প্রথম দিন তিন জন শ্রমিক মারা যান। পরের দিন শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ভবনটির প্রথম থেকে ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত তল্লাশি করে ৪৯ জনের মরদেহ পান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন জানিয়েছেন, ছয়তলা ভবনের ছাদে ওঠার জন্য দুটি সিঁড়ি রয়েছে, যার একটির ছাদের দরজা বন্ধ ছিল। অন্য সিঁড়ি দিয়ে ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলেন কিছু কর্মী। সেখান থেকে ২৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিরাও যদি ছাদে উঠতে পারতেন, তাদেরও বাঁচানো যেত। চতুর্থ তলা থেকে ছাদে যাওয়ার সিঁড়ি তালাবদ্ধ ছিল। আর নিচের দিকে সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ে ছিল আগুন। তারা নিচে নামতে পারেননি, আবার সিঁড়ির দরজায় তালা থাকায় ছাদেও উঠতে পারেননি।তিনি আরও জানান, উদ্ধার হওয়া লাশগুলো এমনভাবে পুড়ে গেছে যে ডিএনএ টেস্ট ছাড়া তাদের পরিচয় শনাক্ত করার কোনো উপায় নেই।ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, আগুন লাগার প্রকৃত কারণ এখনও জানা যায়নি। তদন্ত কমিটি এটা বের করবে।সিআইডি বলছে, দাঁত ও হাড়ের মাধ্যমে ডিএনএ পরীক্ষা করে লাশ শনাক্ত করতে অন্তত ২১ দিন লাগবে। শুক্রবার রাতে ৪৮টি লাশের ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে সম্পন্ন হয়। এ ছাড়া ডিএনএ পরীক্ষার জন্য মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ২৬ স্বজনের ডিএনএ স্যাম্পলও নিয়েছে সিআইডি।ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তের পর মরদেহ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে অনেক শিশু শ্রমিক আছে। আগুনের ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন। পৃথক কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। ।কারখানায় আগুনে প্রাণ ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। শুক্রবার পৃথক বার্তায় তারা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন।দায় নিতে নারাজ চেয়ারম্যানঅগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অর্ধশতাধিক শ্রমিকের প্রাণহানি হলেও দায় নিতে নারাজ সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাসেম। তিনি বলছেন, এটা নিছক একটি দুর্ঘটনা।তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘জীবনে বড় ভুল করেছি ইন্ডাস্ট্রি করে। ইন্ডাস্ট্রি করলে শ্রমিক থাকবে। শ্রমিক থাকলে কাজ হবে। কাজ হলে আগুন লাগতেই পারে। এর দায় কি আমার? আমি তো আর গিয়ে আগুন লাগিয়ে দিইনি। অথবা আমার কোনো ম্যানেজার আগুন লাগায়নি। নিচের তলায় কার্টন রাখা ছিল এবং বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থ ছিল। নিচের তলার কার্টন থেকে আগুন ছড়াতে পারে। যারা মারা গেছেন, তারা তো আমারই ছেলেমেয়ে। আমি খুব ভেঙে পড়েছি। সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আমার ছেলেমেয়েদের পাশে থাকতে। এটি একটি দুর্ঘটনা।’কারখানায় পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ছিল বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩৬:৫৫ ৭২৭ বার পঠিত # #অগ্নিকাণ্ড #অভিযান #উদ্ধার #জেনারেল জিল্লুর রহমান #ফায়ার সার্ভিস #রূপগঞ্জ