বঙ্গনিউজঃ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে শনাক্ত ও মৃত্যুতে দেশ নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে। সোমবার সর্বোচ্চ দৈনিক শনাক্ত ও মৃত্যুর পর গত চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন রেকর্ড হয়েছে। আগের দিনের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা একজন কম হলেও শনাক্ত ১০ হাজার অতিক্রম করেছে। গত ৮ মার্চ দেশে করোনার সংক্রমণের পর প্রথমবারের মতো এক দিনে ১১ হাজার ৫২৫ জন শনাক্ত হয়েছে।
আগের দিন সোমবার ৯ হাজার ৯৬৪ জন শনাক্ত হয়েছিল। গতকালের আগ পর্যন্ত এক দিনে এটিই ছিল এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের সংখ্যা। এর মধ্য দিয়ে দেশে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৯ লাখ ৬৬ হাজার ৪০৬ জনে পৌঁছাল। একই সঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ১৬৩ জন। সোমবার এ সংখ্যা ছিল ১৬৪। এখন পর্যন্ত এক দিনে এটিই সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা। গত চব্বিশ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এ পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়ে মোট
১৫ হাজার ৩৯২ জন প্রাণ হারালেন। শনাক্ত ও মৃত্যুর পাশাপাশি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হারও ভয় জাগাচ্ছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ৩১ দশমিক ৪৬ শতাংশ হারে রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত বছরের আগস্টের পর এক দিনে শনাক্তের হার এর চেয়ে বেশি হয়নি। সবমিলিয়ে দেশে মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ২২ শতাংশ। এর বিপরীতে চব্বিশ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিত পাঁচ হাজার ৪৩৩ জন রোগী সুস্থতার তালিকায় এলেন। এ পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত মোট ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তি বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, সরকারি হিসাবে সর্বশেষ দশ দিনে নতুন করে ৮৩ হাজার ২৬৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ এ সময়ে প্রতিদিন গড়ে রোগী পাওয়া গেছে ৮ হাজার ৩২৭ জন। এর মধ্যে গত ২৭ জুন ৫ হাজার ২৬৮ জন, ২৮ জুন ৮ হাজার ৩৬৩, ২৯ জুন ৭ হাজার ৬৬৬, ৩০ জুন ৮ হাজার ৮২২, ১ জুলাই ৮ হাজার ৩০১, ২ জুলাই ৮ হাজার ৪৮৩, ৩ জুলাই ৬ হাজার ২১৪, ৪ জুলাই ৮ হাজার ৬৬১, ৫ জুলাই ৯ হাজার ৯৬৪ এবং সর্বশেষ গতকাল আগের সব রেকর্ড ভেঙে ১১ হাজার ৫২৫ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হলো।
সরকারি হিসাবে, করোনার সংক্রমণে ১০ দিনে প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজার ৩৩৯ জন। এই সময়কালে প্রতিদিন গড়ে ১৩৪ রোগী মারা গেছেন। গত ২৫ জুন ১০৮ হলেও ২৬ তারিখে শতকের নিচে নেমে আসে দৈনিক মৃত্যুসংখ্যা। তবে ২৭ তারিখ থেকে আর তিন অঙ্কের নিচে নামেনি। গত ২৭ জুন ১১৯ জন, ২৮ জুন ১০৪, ২৯ জুন ১১২, ৩০ জুন ১১৫, ১ জুলাই ১৪৩, ২ জুলাই ১৩২, ৩ জুলাই ১৩৪, ৪ জুলাই ১৫৩, ৫ জুলাই রেকর্ড ১৬৪ এবং সর্বশেষ গতকাল ১৬৩ জনের মৃত্যু হলো।
এই ১০ দিনে হুহু করে বেড়েছে সংক্রমণের হার। বেশির ভাগ দিনই আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে এই হার। গত ২৭ জুন সর্বনিম্ন ২১ দশমিক ৫৯ শতাংশ হারে রোগী পাওয়া গেছে। সেদিন সব মিলিয়ে দেশে শনাক্তের হার ছিল ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ, যেটি ১০ দিনের ব্যবধানে ১৪ দশমিক ২২ শতাংশ হয়েছে। পরে ২৮ জুন ২৩ দশমিক ৮৬, ২৯ জুন ২৩ দশমিক ৯৭, ৩০ জুন ২৫ দশমিক ১৩, ১ জুলাই ২৫ দশমিক ৯০, ২ জুলাই ২৮ দশমিক ২৭, ৩ জুলাই ২৭ দশমিক ৩৯, ৪ জুলাই ২৮ দশমিক ৯৯, ৫ জুলাই ২৯ দশমিক ৩০ এবং সর্বশেষ গতকাল আগের দিনের তুলনায় দুই শতাংশ বেড়ে ৩১ দশমিক ৪৬ শতাংশ হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরে পাওয়া গেছে দেশের মোট শনাক্তের ৩২ দশমিক ২৩ শতাংশ রোগী। মহানগরীতে প্রায় ১৩ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করে তিন হাজার ৭১৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ২৪ শতাংশ। এক দিনে আগের মতোই বিভাগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন ঢাকা বিভাগে পাঁচ হাজার ৯৭ জন। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। গতকাল সারাদেশে যতসংখ্যক রোগী পাওয়া গেছে, এর মধ্যে ৪৪ দশমিক ২৩ শতাংশ মিলেছে শুধুমাত্র ঢাকা বিভাগেই। অবশ্য নমুনা পরীক্ষার দিক থেকেও এগিয়ে আছে এই বিভাগ। গতকালের মোট পরীক্ষার ৪৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ পরীক্ষাই হয়েছে ঢাকায়।
শনাক্ত রোগীর সংখ্যার দিক থেকে দেখলে প্রায় সব বিভাগেই আগের দিনের তুলনায় রোগী বেড়েছে। তাদের মধ্যে খুলনা বিভাগে এক হাজার ৮৬৫, চট্টগ্রাম বিভাগে এক হাজার ৫৪০, রাজশাহী বিভাগে এক হাজার ২২৫, রংপুর বিভাগে ৬১৮, বরিশাল বিভাগে ৪৫৯, সিলেট বিভাগে ৩৮৭ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে পাওয়া গেছে ৩৩৪ করোনা রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো বিজ্ঞপ্তি বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, দেশের বিভাগগুলোর মধ্যে বর্তমানে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার বরিশাল বিভাগে। এই বিভাগে নমুনা পরীক্ষা করে ৫২ দশমিক ৫২ শতাংশ রোগী পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রংপুর ও খুলনা বিভাগে পাওয়া গেছে ৩৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে সিলেটে ৩৫ দশমিক ৪১, চট্টগ্রামে ৩১ দশমিক ৭৯, ময়মনসিংহে ২৩ দশমিক ৬৫ এবং রাজশাহীতে ২৩ দশমিক ২৯ শতাংশ হারে রোগী পাওয়া গেছে।
বিভাগওয়ারী তালিকায় মৃত্যুতে শীর্ষে রয়েছে খুলনা বিভাগ। গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনায় ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ঢাকা বিভাগে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৫ জন। এরপর পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ২৪ জন করে, রংপুরে ১১, বরিশালে ছয়, ময়মনসিংহে পাঁচ এবং সিলেটে মারা গেছেন দু’জন। বয়সভিত্তিক মৃত্যু হিসেবে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ৯১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২৯ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ২৭ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১১ এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে রয়েছেন পাঁচজন। তাদের মধ্যে ৯৮ পুরুষ এবং ৬৫ জন নারী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের ৬০৫টি পরীক্ষাগারে ৩৬ হাজার ৬৩১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এই সময়ে ৩৮ হাজার ৩৯টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬৭ লাখ ৯৪ হাজার ১৯৩টি। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। সুস্থতার হার ৮৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩২:৪২ ৫৮২ বার পঠিত # #কভিড১৯ #করোনা ভাইরাস #গোপালগঞ্জ #দিনাজপুর #নাটোর #বাঘেরহাট #বিশ্বস্বাস্থ্য