ফারহানা আকতার এর কলাম –“ নতুন প্রজণ্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ –পর্ব- ৪১”

Home Page » সাহিত্য » ফারহানা আকতার এর কলাম –“ নতুন প্রজণ্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ –পর্ব- ৪১”
সোমবার, ৫ জুলাই ২০২১



 নতুন প্রজন্মের চোখে মুক্তিযুদ্ধ

২. ১৯৪৭- ভারত ভাগ (উপমহাদেশের বিভাজন ) :

ঢ. মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা :

মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার পটভ‚মি -
μিপস মিশন ব্যর্থ হলেও হাল ছেড়ে দেয়নি ব্রিটিশ সরকার। নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসেন ভাইসরয় লর্ড ওয়াভেল। তিনি ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সিমলায় একটি বৈঠকে মিলিত হন। কিন্তু এই বৈঠকও ব্যর্থ হয়। অবশেষে সিমলা বৈঠকের সূত্র ধরে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ভারত সচিব লর্ড পেথিক লরেন্স এর নেতত্বে একটি প্রতিনিধি দল ভারতে আসে। লরেন্স ছাড়া প্রতিনিধি দলের অন্য দুই সদস্য ছিলেন স্যার স্ট্যাফোর্ড μিপস ও এ.ভি. আলেকজান্ডার। এই মিশন কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতাদের সাথে আলোচনার পর ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে ভারতের প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্র সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করেন। ইতিহাসে একে মন্ত্রীমিশন পরিকল্পনা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে শেষে ১৯৪৫ সালে ইংল্যান্ডে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে শ্রমিক দল বিজয়ী হলে দলটির নেতা মি: এইলী প্রধানমন্ত্রী হন। প্রধানমন্ত্রী এটলী ভারতীয়দের স্বাধীনতার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। উপরন্তু নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থার একমাত্র পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনকে অব্যাহতভাবে চাপ দিচ্ছিল ভারতবর্ষকে স্বাধীনতা দানের জন্য। ক্ষমতা গ্রহন পরই এটলী ১৯৪৬ সালের জানুয়ারী মাসে ভারতে নির্বাচনের ঘোষণা দেন। একই সালে ভারত সচিব পেথিক লরেন্সের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল পাঠান ভারতে।

মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য -
মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার প্রস্তাবগুলো দুভাগে বিভক্ত ছিল ক. দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তাব এবং খ. স্বল্পমেয়াদি প্রস্তাব। নম্নিে এগুলো আলোচনা করা হলোÑ

(ক) দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য: দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্যসমূহ :

১। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠন: এ পরিকল্পনার ব্রিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলোর সমন্বয়ে ভারত ইউনিয়ন গঠনের প্রস্তাব করা হয়। বৈদেশিক বিষয়, প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ ও অর্থ ভারত ইউনিয়নের আত্ততাভুক্ত থাকবে।
২। প্রদেশের হাতে অধিক ক্ষমতা ন্যস্ত: শাসন সংμান্ত অন্যান্য বিষয় এবং অনুলিপিত বিষয়গুলো প্রদেশের হাতে ন্যস্ত থাকবে।
৩। প্রদেশগুলো তিনভাগে বিভক্তিকরণ: ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশসমূহ তিনটি ভাগে বা গ্র“পে বিভক্ত হবে যথা-
ক গ্র“প: এ ভাগে থাকবে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ছয়টি প্রদেশ বোম্বাই, মাদ্রাজ, যুক্তপ্রদশে, মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও উড়িষ্যা।
খ গ্র“প: এ ভাগে থাকবে উত্তর পশ্চিম ভারতের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ তিনটি প্রদেশ সিন্ধু, পাঞ্জাব ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ।
গ গ্র“প: এ ভাগে থাকবে পূর্ব ভারতের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দুটি প্রদেশ বাংলা ও আসাম।
৪। সংবিধান রচনা ও স্বায়ত্তশাসনের ক্ষমতা প্রদান: প্রত্যেক ভাগের প্রদেশগুলো নিজেদের শাসনতন্ত্র রচনা করতে পারবে এবং কেন্দ্রীয় বিষয়সমূহ ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রদেশগুলো পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করতে পারবে।
৫। গণপরিষদ গঠন: প্রত্যেক ভাগের প্রতিনিধি সমন্বয়ে গণপরিষদের গঠিত হবে। গণপরিষদ ভারত ইউনিয়নের সংবিধান রচনা করবে। গণপরিষদের সদস্য প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য কর্তৃক নির্বাচিত হবে। সভ্যগণ তিনটি ভাগে বিভক্ত

হয়ে গ্র“প পরিষদ গঠন করবেন এবং কি কি বিষয়ে গ্র“প সরকারের অধীনে থাকবে তা প্রত্যেক গ্র“প নির্দিষ্ট করবে।
৬। দশ বছর পর সংবিধানের শর্ত পরিবর্তনের ব্যবস্থা: কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক গ্র“পের শাসনতন্ত্রে এমন শর্ত থাকতে হবে যে দশ বছর পর যে কোনো প্রদেশ সংবিধানের শর্তাবলি পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
৭। সর্বভারতীয় গণপরিষদ গঠন: এ তিনটি গ্র“পের গণপরিষদ সদস্যদের সমন্বয়ে একটি সর্বভারতীয় গণপরিষদ গঠিত হবে।এ পরিষদের প্রধান কার্য হবে ভারত ইউনিয়নের জন্য একটি সংবিধান রচনা করা।
৮। গ্র“প থেকে বের হবার স্বাধীনতা: যে কোনো প্রদেশ ইচ্ছা করলে সংবিধান রচিত হবার পর গ্র“প হতে বের হয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারবে।
৯। দেশীয় রাজ্যে ব্রিটিশ রাজ্যের সার্বভৌমত্বের অবসান: ভারতীয় ইউনিয়ন গঠিত হলে দেশীয় রাজ্যসমূহের ওপর ব্রিটিশ রাজ্যের সার্বভৌমত্বের অবসান ঘটবে।
১০। ক্ষমতা বণ্টন: এ পরিকল্পনায় প্রস্তাবিত ভারতীয় ইউনিয়ন এবং ভারতীয় প্রদেশ ও দেশীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের বিধান করা হয়।

(খ) স্বল্পমেয়াদি প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য: স্বল্পমেয়াদি প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য Ñ

অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন: মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় সংবিধান রচিত ও প্রবর্তিত হবার পূর্ব পর্যন্ত ভারতের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত অন্তবর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালন করবে বলে উল্লেখ করা হয়।

মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার ব্যর্থতার কারণ -
মন্ত্রিমিশন সদস্যগণ অত্যন্ত আশাপ্রদ এবং তুষ্টচিত্রে ইংল্যান্ডে প্রত্যাবর্তন করে। মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগ উভয় রাজনৈতিক দল কর্তৃকই গৃহীত হয়। তবে কংগ্রেস শুধু এর দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তাব গ্রহণ করে, কিন্তু স্বল্পমেয়াদি প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে। পক্ষান্তরে মুসলিম লীগ গোটা পরিকল্পনাাটিকে গ্রহণ করে। মুসলিম লীগ মনে করেছিল যে, মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কথা আছে এবং তা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশসমূহের খ ও গ গ্র“প এর মধ্যে প্রতিভাত হয়ে ওঠে। সুতরাং মুসলমানগণ স্বভাবতই আশা করে যে,মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা সর্বশেষে স্বাধীন সার্বভৌম পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক হবে। গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়াভেল (খড়ৎফ ডধাবষষ) বলেন, “যে কোনো বৃহৎ দলকে অন্তবর্তী সরকার গঠনের অনুমতি প্রদান করা হবে।” কিন্তু মুসলিম লীগ সরকার গঠন করতে চাইলে ব্রিটিশ সরকার তাতে অনুমতি না দেওয়ায় মুসলমানরা এ পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে।
২৯ জুলাই ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশন মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন পত্যাহার করে এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য প্রত্যক্ষ সংগ্রামের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ইতোমধ্যে কংগ্রেসকে ২৪ আগষ্ট লর্ডওয়াভেল অন্তবর্তী সরকার গঠনের আহবান জানান। এর প্রতিবাদে মুসলিম লীগ ব্রিটিশ সরকারকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নত করে ১ সেপ্টেম্বরকে কালো দিবস বলে ঘোষণা করে। ফলে ভারতের বিভিনড়ব স্থানে দাঙ্গা বাধে। বস্তুত কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে কোনো সমঝোতা না হওয়ায় মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।

এদকিে ১৯১৪ সালে অবভিক্ত বাংলার প্রখ্যাত রাজনীতবিদি শরেে বাংলা আবুল কাশমে ফজলুল হক তখন একই সঙ্গে মুসলমি লীগ ও কংগ্রসে দলরে নতো হয়ে উঠনে। ১৯১৮ সালে তনিি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রসেরে সক্রেটোরি জনোরলে নর্বিাচতি হন।
এ. ক.ে ফজলুক হক খলোফত আন্দোলনওে অংশগ্রহণ করনে। প্রথম বশ্বিযুদ্দরে পর খলোফত আন্দোলনরে সূত্রপাত ঘট।ে এ. ক.ে ফজলুক হক নখিলি ভারত খলোফত কমটিরি সম্পাদক হসিবেে দায়ত্বি পালন করনে।

১৯২২ সালে মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নলিে এ. ক.ে ফজলুক হক খুলনা উপনর্বিাচনে প্রতদ্বিন্দ্বতিা করনে এবং নর্বিাচতি হন। ১৯২৪ সালে খুলনা অঞ্চল থকে তনিি পুনরায় আইন পরষিদরে সদস্য নর্বিাচতি হন এবং এ সময় বাংলার গর্ভনর ছলিনে লটিন, তনিি ফজলুল হককে বাংলার শক্ষিা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী নযি়োগ করনে। ১৯৩৫ সালে এ. ক.ে ফজলুক হক কলকাতা মউিনসিপ্যিাল করপোরশেনরে মযে়র নর্বিাচতি হন।

ময়মনসংিহে বঙ্গীয় প্রজা সমতিরি সম্মলেন অনুষ্ঠতি হয় ১৯৩৫ সাল।ে বদ্রিোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচতি সঙ্গীত এবং মরমী শল্পিী আব্বাসউদ্দনিরে গানরে মধ্যে দযি়ে এ সম্মলেন শুরু হয়ছেলি। এই প্রজা সমতিরি মধ্য দযি়ইে পরর্বতীতে কৃষক-প্রজা র্পাটরি সূত্রপাত ঘট।ে ১৯৩৭ সালরে র্মাচে বঙ্গীয় আইন পরষিদরে নর্বিাচনে কৃষক প্রজা র্পাটরি পক্ষ থকেে পটুয়াখালী নর্বিাচনী এলাকা থকেে এ. ক.ে ফজলুল হক ও মুসলমি লীগরে মনোনীত পটুয়াখালীর জমদিার ও ঢাকার নবাব পরবিাররে সদস্য খাজা নাজমিুদ্দনি প্রতদ্বিন্দ্বতিা করনে। মুসলমি লীগ র্প্রাথী খাজা নাজমিুদ্দনিরে নর্বিাচনী প্রতীক ছলি “হারকিনে” আর শরেে বাংলা আবুল কাশমে ফজলুল হক সাহবেরে কৃষক প্রজা র্পাটরি প্রতীক ছলি “লাঙ্গল”। নর্বিাচনে মুসলমি লীগরে সাথে সমঝোতায় গযি়ে এ. ক.ে ফজলুক হক ১১ সদস্য বশিষ্টি যুক্ত মন্ত্রপিরষিদ গঠন করনে। বাংলার প্রধানমন্ত্রী হসিবেে দায়ত্বি গ্রহণ করনে শরেে বাংলা আবুল কাশমে ফজলুল হক।
শরেে বাংলা আবুল কাশমে ফজলুল হক ছলিনে অবভিক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী হসিবেে এ. ক.ে ফজলুক হক বহু র্কমসূচি হাতে নযি়ছেলিনে। শক্ষিা ক্ষত্রেইে জোর দযি়ছেলিনে বশে।ি তার আমলে দরদ্রি কৃষকরে উপরে কর র্ধায না করে সারা বাংলায় প্রাথমকি শক্ষিা প্রর্বতন করা হয়। তার আমলে ১৯৩৮ সালরে ১৮ আগস্ট বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধনী পাস হয় এবং জমদিারদরে লাগামহীন অত্যাচার চরিদনিরে জন্য বন্ধ হয়। ১৯৩৯ সালরে “বঙ্গীয় চাকুরি নযি়োগবধি”ি প্রর্বতন করে মন্ত্রী পরষিদ মুসলমানদরে জন্য শতকরা ৫০ ভাগ চাকুরি নর্দিষ্টি রাখার ব্যবস্থা কর।ে ১৯৪১ সালরে ১২ ডসিম্বের শরেে বাংলা আবুল কাশমে ফজলুল হক দ্বতিীয়বাররে মত মন্ত্রপিরষিদ গঠন করনে।

১৯৪০ সালরে ২৩ র্মাচ লাহোরে অনুষ্ঠতি মুসলমি লীগরে অধবিশেনে মুহাম্মদ আলী জন্নিাহ এর সভাপতত্বিে মুসলমি লীগরে পক্ষ হতে ঐতহিাসকি লাহোর প্রস্তাবরে প্রারম্ভকি খসড়া তরৈি করনে পাঞ্জাবরে মুখ্যমন্ত্রী সকিান্দার হায়াত খান এবং প্রস্তাবটি উপস্থাপন করনে এ. ক.ে ফজলুল হক। ঐতহিাসকি লাহোর প্রস্তাব হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদশেে বসবাসকারী মুসলমিদরে জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্ররে দাবি জানযি়ে উত্থাপতি প্রস্তাবনা।১৯৪৬ সালরে ২৬ র্মাচ বঙ্গীয় আইন পরষিদরে নর্বিাচনে বরশিাল অঞ্চল ও খুলনার বাগরেহাট অঞ্চল থকেে র্প্রাথী হয়ে এ. ক.ে ফজলুল হক নর্বিাচতি হন। কন্তিু, দলীয় ভাবে পরাজতি হলে অবভিক্ত বাংলার আরকে প্রখ্যাত নতো হোসনে শহীদ সোহরাওযর়্াদী মন্ত্রসিভা গঠন করনে ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হসিবেে দায়ত্বি গ্রহণ করনে। এই নর্বিাচনরে পর দলীয় নতোর্কমীদরে চাপে এ. ক.ে ফজলুল হক মুসলমি লীগে যোগ দনে।

অপরদকি,ে
১৯৪৫ সালরে μীপস মিশন ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড এটলী ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং শাসনতান্ত্রিক সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে একটি ক্যাবিনেট মিশন পাটন। এই মিশন যে পরিকল্পনার প্রস্তাব পেশ করে তাতে ভারতীয়দের কাছে ব্রিটিশ সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে কোন কার্পণ্য ছিলোনা। তবে ভারতে হিন্দু মুসলমান স¤প্রদায়ের পরস্পর বিরোধী স্বার্থের সমন্বয় করতে মিশন ব্যর্থ হয়।

ণ.১৯৪৬ সালের নির্বাচন :

১৯৪৬ সালের নির্বাচনের ফলাফল
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান এবং বৃটেনে শ্রমিক দল ক্ষমতায় আসায় ভারতবর্ষে শাসনতান্ত্রিক সষ্কট নিরসনের এক সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়। ১৯৪৫ সালের নভেম্বরে ভারতে কেন্দ্রিয় আইনসভার নির্বাচন অনুষ্টিত হয়। নির্বাচনে মুসলিম লীগ পাকিস্তান দাবি কে প্রধান কর্মসূচী হিসাবে গ্রহণ করে অভূতপূর্ব সাফল্য পায়। প্রায় সব মুসলিম আসনে মুসলিম লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। পরের বছর ১৯৪৬ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হয় প্রাদেশিক আইন সভার নির্বাচন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী -এর নেতৃত্ব ও অক্লান্ত পরিশ্রমে সারা ভারতে একমাত্র বাংলা প্রদেশে মুসলিম লীগ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে মুসলিম লীগকে হারিয়ে দেয় সীমান্ত গান্ধী আব্দুল গফফার খানের লালকোর্তা দল। বিজয়ী হয়। অন্যদিকে খিজির হায়াতে খানের ইউনিয়নিষ্ট পার্টি মুসলিম লীগকে পরাজিত করে মন্ত্রীসভা গঠন করে। প্রাদেশিক নির্বাচনে বাংলা ও সিন্ধুতে পাকিস্তান দাবি মুসলিম জনগণের অকুষ্ঠ সমর্থন লাভ করে। এই দুই প্রদেশে মুসলিম লীগ সরকার গঠন করে। বাকী প্রদেশগুলোতে সর্বভারতীয় কংগ্রেস নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ১৯৪৬ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক পরিষদের ১১৯টি মুসলিম আসনের মধ্যে মুসলিম লীগ ১১৩টি আসন লাভ করে। সমগ্র ভারতের প্রদেশগুলোতে নির্বাচনে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের দলগত অবস্থান ছিলো নম্নিরূপ -

প্রদেশ কংগ্রেস সংখ্যা মুসলিম লীগ
আসাম ৫৮ ১০৮ ৩১
বাংলা ৮৬ ২৮০ ১১৩
বিহার ৯৮ ১২৫ ৩৪
মধ্যপ্রদেশ ৯২ ১১২ ১৩
বোম্বাই (মুম্বাই) ১২৫ ১৭৫ ৩০
মাদ্রাজ ১৬৫ ২১৫ ২৯
উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ৩০ ৫০ ১৭
উড়িষ্যা ৪৭ ৬০ ২৭
পাঞ্জাব ৫১ ১৭৫ ৭৫
সিন্ধু ১৮ ৬০ ২৭
যুক্তপ্রদেশ ১৫৩ ২২৮ ৫৪

প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলিম লীগ ৪৯২টি মুসলিম আসনের মধ্যে ৪২৮টি আসন লাভ করে। ১৫৮৫টি সাধারণ আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৯৩০টি আসন লাভ করে। পাকিস্তান দাবিকে মুসলিম স¤প্রদায়ের মধ্যে -ছাড়িয়ে দিয়ে মুসলিম লীগ নির্বাচনে বিশেষতঃ বাংলা প্রদেশে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করে। এই নির্বাচনী ফলাফলের পর পাকিস্তান দাবী আরো জোরালো হয়ে ওঠে।

বাংলায় মুসলিম লীগ মন্ত্রীসভা -
প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলিম লীগ অভূরত পূর্ব সাফল্য অর্জন করলে স্বতন্ত্র দলের সহযোগিতায় বাংলা প্রদেশে গণতন্ত্রের মানস পুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে ১৯৪৬ সালের ২৪ এপ্রিল ৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। পাক-ভারত উপ-মহাদেশে সোহারাওয়ার্দী ছিলেন এক ঈর্ষনীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তার অসাধারণ রাজনৈতিক কৌশল ও সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে বাংলায় মুসলিম লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। তারই নেতৃত্বে ১৯৪৬ সালে বাংলার মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। তিনি অবিভক্ত বাংলার শেষ মুখ্যমন্ত্রী হিসাব দায়িত্ব পালন করেন। অবিভক্ত বাংলাকে নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করেছিলেন তিনি বাংলায় মুসলিম লীগের বিজয়ে ভারতের পূর্বাঞ্চলে স্বাধীন-সার্বভৌম মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে সোহরাওয়ার্দী ৭ জন মুসলিম লীগ সদস্য এবং একজন তফসীলি হিন্দু সদস্যসহ মোট ৮ সদস্যের একটি মন্ত্রিসভা গঠন করেন। এ মন্ত্রিসভার সদস্যগণ হলেন (১) সোহরাওয়ার্দী, (২) আহম্মদ হোসাইন, (৩) খান বাহাদুর আব্দুল গোফরান, (৪) খান বাহাদুর মোহাম্মদ আলী, (৫) খান বাহাদুর মোয়াজ্জেমুদ্দিন হোসাইন, (৬) খান বাহাদুর এ,এফ,এম আব্দুর রহমান, (৭) শামসুদ্দিন আহমদ ও (৮) যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল।

১৯৪৬ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে বাংলা প্রদেশে মুসলিম লীগের বিজয় ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মূলতঃ এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবি, জনগণের ম্যান্ডেট পেয়ে এরধরনের রাজনৈতিক বৈধতা লাভ করে। বাংলার মুসলিম লীগের বিজয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাকিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। (চলবে) ৷

—————————————————————————

ফারহানা আকতার

তথ্যসূত্র : বুকস্ , ইন্টারনেট ৷
লেখক: ফারহানা আকতার, ডিরেক্টর এন্ড এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, ইন্টারন্যাশনাল রবীন্দ্র রিসার্চ ইনস্টিটিউট, কলামিস্ট, কথাসাহিত্যিক এবং সহ-সভাপতি, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ ৷

লেখকের অন্যান্য বই

বাংলাদেশ সময়: ১৫:১০:০৩   ৭১৩ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সাহিত্য’র আরও খবর


সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন: স্বপন চক্রবর্তী
ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা “আমি তো গাঁয়ের মেয়ে ”
৫০ বছরের গৌরব নিয়ে জাবির বাংলা বিভাগ বিশাল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব আয়োজন করেছে
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা- ‘তোমার খোঁজে ‘
অতুলপ্রসাদ সেন: ৩য় (শেষ ) পর্ব-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন;পর্ব ২-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন-স্বপন চক্রবর্তী
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা ” যাবে দাদু ভাই ?”
বাদল দিনে- হাসান মিয়া
ইমাম শিকদারের কবিতা ‘ছোট্ট শিশু’

আর্কাইভ