বঙ্গনিউজঃ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও আফ্রিকাসহ সারা বিশ্বে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই ভ্যারিয়েন্ট। ভারত আপাতত সংক্রমণের সর্বোচ্চ চূড়া অতিক্রম করলেও সেদেশে প্রথম শনাক্ত করোনা ভাইরাসের নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি প্রতিবেশী বাংলাদেশসহ এশিয়া এবং বহু দেশকে বিপদগ্রস্ত করে তুলেছে। খবর বিবিসি ও সিএনবিসির।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক ড. টেড্রস আধানম গেব্রেইয়েসুস শনিবার বলেন, অন্তত ৯৮টি দেশে ভারতে প্রথম শনাক্ত করোনা ভাইরাসের ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ভ্যারিয়েন্টটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। দ্রুত এটির কাঠামোগত এবং চারিত্রিক রূপান্তর ঘটছে। নতুন এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি যেসব দেশে ভ্যাকসিন কার্যক্রম ভালো সেখানেও ছড়াচ্ছে।
ব্রিটেনে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার প্রধান কারণ ডেলটা। কিন্তু অক্সফোর্ডে রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক জেমস নেইস্মিথকে উদ্ধৃত করে লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা বলছে, পুরো ইউরোপ জুড়ে এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়বে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর পরিণতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন ঐ বিজ্ঞানী। উন্নয়নশীল বিশ্বে এত কম মানুষ ভ্যাকসিন পেয়েছে যে, তাদের সামনে চরম বিপদ অপেক্ষা করছে। ডেলটা যখন ব্যাপকভাবে ছড়াতে শুরু করবে, দ্রুত ঐসব দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বিপর্যয় তৈরি হবে, যদি না দ্রুত টিকা কর্মসূচির প্রসার না হয়। তিনি বলেন, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে, অক্সিজেনের অভাব দেখা দেবে এবং ডাক্তার নার্সরা আক্রান্ত হয়ে চিকিত্সার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়বে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আবার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিএনবিসি। ফ্রান্সে আক্রান্তের ২০, জার্মানিতে ৩৬ এবং ইতালিতে ১৭ ভাগই ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট। এছাড়া স্পেন, পর্তুগাল, রাশিয়া, পোলান্ড, সুইজারল্যান্ড এবং তুরস্কেও এই ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার ঘটেছে।
ডেলটার প্রকোপ এখন ইউরোপ ছড়িয়ে সুদূর যুক্তরাষ্ট্রেও পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রামক রোগবিষয়ক ইনস্টিটিউটের প্রধান এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উপদেষ্টা ড. অ্যান্থনি ফাউচি শনিবার মার্কিন এক টিভি সাক্ষাত্কারে ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, সারা দেশে না হলেও যেসব অঙ্গরাজ্য টিকা কর্মসূচিতে পিছিয়ে সেসব জায়গায় ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়তে পারে। বর্তমানে ডেলটার পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে এশিয়ার দেশগুলোকে, বিশেষ করে ভারতের প্রতিবেশীদের। মে মাসেই নেপাল, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায় নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয় নেপালে। মে মাস থেকে সেদেশে এত দ্রুতহারে সংক্রমণ বাড়তে থাকে যে, স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ চরমে পৌঁছে। আফগানিস্তানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়াজিদ মজরুহ বলেন, সারা দেশে সংক্রমণের ৬০ শতাংশই রাজধানী কাবুলে। তিনি বলেন, ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের কারণে এই অবস্থা। ডব্লিউএইচও বলেছে, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং মঙ্গোলিয়াতে সংক্রমণ বাড়ছে।
ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, গত তিন সপ্তাহে ৬০ শতাংশই সংক্রমিত হয়েছে ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট দিয়ে। রেডক্রস বলছে, হাসপাতালের বেড এবং অক্সিজেনের অভাব যেভাবে প্রকট হচ্ছে তাতে বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটিতে এখনো ৫ শতাংশ লোককেও পুরোপুরি ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়নি। থাই সরকার বলছে, সেদেশে সম্প্রতি সংক্রমণ বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট। রাজধানী ব্যাংকক ছাড়াও ফুকেতের মতো কিছু দ্বীপেও ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। থাইল্যান্ডে এখন পর্যন্ত মাত্র ৪ শতাংশ মানুষের টিকা দেওয়া গেছে। ডব্লিউএইচও ছাড়াও শীর্ষ বিজ্ঞানীরা সাবধান করছেন ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট এতটাই সংক্রামক যে, এ থকে বাঁচার আপাতত একটাই রাস্তা—দ্রুত টিকাদানের গতি বাড়ানো।
বাংলাদেশ সময়: ১২:০২:৩৮ ৯১৯ বার পঠিত # #করোনা ভাইরাস #ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট #বিশ্ব #বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা