আজমেরীনা শাহানীর ধারারাবাহিক বিচিত্র অ্যাডভেঞ্চার ” লাইফ ইজ আ অ্যাডভেঞ্চার” পর্ব - ‘চেতন-অবচেতন মন’

Home Page » সাহিত্য » আজমেরীনা শাহানীর ধারারাবাহিক বিচিত্র অ্যাডভেঞ্চার ” লাইফ ইজ আ অ্যাডভেঞ্চার” পর্ব - ‘চেতন-অবচেতন মন’
মঙ্গলবার, ২৯ জুন ২০২১



*চেতন-অবচেতন মন*

মানুষের দেহ ও মনকে একচ্ছত্র ভাবে নিয়ন্ত্রন করে মস্তিস্ক।মস্তিস্কই মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।এই মস্তিস্কের দুটি স্তর থাকে।একটি হলো conscious (চেতন) বা যৌক্তিক স্তর এবং অপরটি subconscious (অবচেতন) বা অযৌক্তিক স্তর।মানুষ সবসময় নিজের চেতন মন দিয়ে বিচার করে আর এই অভ্যাসগত বিচার মানুষের অবচেতন মনে চলে যায় এবং বিচার ধারার প্রকৃতির অনুরূপ পরিস্থিতি গড়ে তোলার কাজ করে।আর এই অবচেতন মন মানুষের ভাবনাগুলোর বিকাশ ও রচনাত্নক স্থান হয়।ইতিবাচক ও ভালো চিন্তা করলে মানুষের ভালো পরিনাম প্রাপ্তি আর নেতিবাচক বা খারাপ চিন্তা করলে খারাপ পরিনামের প্রাপ্তি হবে।কারন মানুষের অবচেতন মন একবার যখন কোন চিন্তা বা বিচার ধারাকে গ্রহন করে নেয়,তখন মস্তিস্কের কোশিকাগুলোয় সেটার ছাপ পড়ে যায়।তখন সে তৎক্ষনাত সেটার ওপরে কাজ করতে শুরু করে দেয়।তাই নেতিবাচক বিচার প্রয়োগ করা হলে ব্যর্থতা,কুন্ঠা,শঙ্কা আর দুঃখ-বেদনা উৎপন্ন হয়।আর ইতিবাচক চিন্তা করলে সেটা ফলপ্রসু,সফলতা,সমৃদ্ধির ও সৃজনাত্মক হয়।মানুষের জীবনের ভালো-মন্দ,সাফল্য-ব্যর্থতা,ভয়-শঙ্কা,সুখ-সমৃদ্ধি,সুস্বাস্থ্য ও সৃজনশীলতার বিকাশ প্রভৃতি সবটুকুই তাই মানুষের চিন্তাধারার উপর নির্ভর করে।আর এ সকল কার্যাদি সম্পাদনের জন্য অবচেতন মন সদা প্রস্তুত থাকে।কেননা অবচেতন মন কখনোই চেতন মনের মত তর্ক করে না।অবচেতন মন ভীষন কল্পনাবাদী আর পরামর্শশীল।এটা শারীরিক ইন্দ্রিয় গুলোর মাধ্যমে নয়,অভ্যান্তরীন জ্ঞান দ্বারা অনুভব করে…আর তাই মানুষের প্রদান করা নেতিবাচক চিন্তা ও ভুল তথ্যকেও সে সত্য বলে মেনে নেয় এবং সেটাকে সঠিক করে তোলার কাজ করে।তাই প্রতিটি মানুষেরই উচিত তাদের নিজেদের অবচেতন মনকে ইতিবাচক,ভালো,সৃজনাত্নক আর সদ্ভাবনাপূর্ন চিন্তাধারায় প্রসারিত করতে থাকা আর বারবার এই চিন্তা ধারার পুনরাবৃত্তি করতে থাকা।তাহলে অবচেতন মন এটাকে স্বীকার করে নেবে এবং প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সদ্ভাব,শান্তি আর সৃজনাত্নক পরিস্থিতি উৎপন্ন করবে ।মানুষের জন্ম হওয়ার পর থেকেই তার উপর নেতিবাচক পরমর্শের বর্ষন হতে শুরু করে।আর মস্তিস্কে এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ এর পরিনাম দুঃখ,ব্যর্থতা,কষ্ট,রোগ আর ধ্বংস হয়ে থাকে। ঈর্ষা,ভয়,চিন্তা আর মানসিক চাপ মানুষের তন্ত্রিকা আর গ্রন্থ্রি গুলোকে দুর্বল করে তোলে,যার ফলে সকল প্রকারের মানুষি আর শারীরিক রগ উৎপন্ন হয়।তাই নেতিবাচক চিন্তাধারা নয় বরং ভয়,অজ্ঞানতা আর অন্ধবিশ্বাসের পরিবর্তে শাশ্বত সত্য আর ইতিবাচক আত্ম-পরামর্শের প্রয়োগ করে নিজেদের পরিস্থিতি নতুন ভাবে তৈরি করতে পারি।প্রতিটি মানুষই নিজের অবচেতন মন দ্বারা সকল সমস্যার সমাধান খুজে নিতে পারে।ভালো ও সৎ চিন্তা করলে ভালো হবে,খারাপ চিন্তা করলে খারাপ হবে।মানুষ সেটাই হয় … যেটা সে সারাদিন ধরে চিন্তা করে।

একটি মানসিক চিত্র হাজার শব্দের সমান হয়।মানুষ বিশ্বাস দ্বারা নিজেদের মনে যে চিত্র তৈরি করবে অবচেতন মন সেটাকে বাস্তবে পরিবর্তিত করে দিবে।তাই নিজেদের বিচার ধারার ওপর দৃষ্টি রাখুন।চিন্তাধারা ও মনোবৃত্তির পরিবর্তন করে নিজেদের শরীর ও মন কে বদলে দিন।উইলিয়াম জেমস বলেছিলেন যে উনবিংশ শতাব্দীর সবথেকে বড় আবিষ্কার হচ্ছে -‘বিশ্বাস দ্বারা প্রেরিত অবচেতন মনের শক্তি। ’
মানুষ নিজেদের অবচেতন মনের অদ্ভুদ শক্তি দ্বারা যেকোন পরাজয়ের উপরে বিজয় লাভ করতে পারে।তাই সব সময় নিজেকে এমনটা বলুন –
আমি আজ খুশীর নির্বাচন করবো …
সফলতার নির্বচন করবো …
সঠিক কাজের নির্বাচন করবো …
মানসিক শান্তি আর সুখ প্রপ্তির জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রেম,প্রকাশ,সত্য আর সৌন্দর্যকে বেশি করে ব্যক্ত করুন।প্রত্যেকদিন সৃষ্টিকর্তার কাজে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।নিজেদের চিন্তা ধারায় শান্তি,সুরক্ষা আর সমৃদ্ধির প্রর্থনা রাখুন।তাতেই আপনার মস্তিস্ক শান্তি, ও সমৃদ্ধি উৎপন্ন করে দেবে ।সুতরাং প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ও রাতে ঘুমাতে যাবার পূর্বে নিজেদের অবচেতন মনে এইরূপ ভাবনা পৌছে দিতে হবে -‘ আমি নিজের অবচেতন মনের অসীমিত সমৃদ্ধির সাথে একাকার হয়ে রয়েছি।আজ থেকে আমি আরো বেশি ভালো স্বভাবের হয়ে ওঠার চেষ্টা করবো।উন্নত মানসিকতা,দৃহ প্রত্যয় আর প্রখর বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হবো।আমার স্মৃতিশক্তি আরো উন্নত ও প্রখর হবে।আমি নিজের আশেপাশের সকল মানুষের জন্য একান্ত নির্ভরতার ও সদভাবনার কেন্দ্র হয়ে উঠবো এবং নিজের ভালো ব্যবহার ও সদগুনাবলীর দ্বারা অন্যের প্রিয় হয়ে উঠবো।এই সুখময় ও প্রসন্ন স্বভাব এবার থেকে আমার স্বাভাবিক ব্যবহার হয়ে উঠবে।’

মানুষের ভাবনা,বিচারধারা,শক্তি,প্রকাশ,প্রেম আর সৌন্দর্যের এই অভ্যন্তরীন জগতকে খুজে বের করা প্রতিটি মানুষের নিজেদেরই দায়িত্ব।অতএব কোন জিনিস সত্য হলে ,সৎ হলে,ন্যায়পূর্ন হলে,শুদ্ধ হলে এবং কোন জিনিস ভালো ও প্রিয় হলে আমাদের সর্বদাই সেই সব জিনিসের ব্যাপারে ইতিবাচক ও ভালো ভাবনা চিন্তা করতে হবে যাতে করে আমাদের অবচেতন মনের স্তরে সেটা পৌঁছে যায় এবং সে অনুযায়ী আমাদের জীবনধারা প্রবাহিত হয় ।
অতঃপর এভাবেই আমরা আমাদের জীবনের -
সুখ বেছে নিই…
প্রেম বেছে নিই…
স্বাস্থ্য বেছে নিই …
এবং
সমৃদ্ধি ও শান্তি বেছে নিই …।আর জীবনের বিচিত্র এডভেঞ্চার কে উপলব্ধি করি চেতন-অবচেতনের সান্নিধ্যে থেকে।

আজমেরীনা শাহানী

বাংলাদেশ সময়: ১৮:২০:১০   ৮০১ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সাহিত্য’র আরও খবর


সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন: স্বপন চক্রবর্তী
ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা “আমি তো গাঁয়ের মেয়ে ”
৫০ বছরের গৌরব নিয়ে জাবির বাংলা বিভাগ বিশাল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব আয়োজন করেছে
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা- ‘তোমার খোঁজে ‘
অতুলপ্রসাদ সেন: ৩য় (শেষ ) পর্ব-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন;পর্ব ২-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন-স্বপন চক্রবর্তী
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা ” যাবে দাদু ভাই ?”
বাদল দিনে- হাসান মিয়া
ইমাম শিকদারের কবিতা ‘ছোট্ট শিশু’

আর্কাইভ