বঙ্গনিউজঃ জেলায় জেলায় করোনাভাইরাস ভয়াবহ রূপ নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে মানুষের মধ্যে। এমনকি করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে এসেও লাইনে দাঁড়াচ্ছেন গাদাগাদি করে। অনেক জায়গায় লকডাউন ঘোষণা করলেও তা চলছে ঢিলেঢালাভাবে। যে কারণে বাড়ছে সংক্রমণ, দীর্ঘ হচ্ছে করোনায় মৃত্যুর তালিকা। কোথাও কোথাও শনাক্তের হার ভয়াবহ ইঙ্গিত দিচ্ছে।রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জন করোনা পজিটিভ ছিলেন, বাকিদের উপসর্গ ছিল। একই সময়ে রাজশাহীর দুটি পিসিআর ল্যাবে জেলার ৩৪১টি নমুনা পরীক্ষায় ১৮৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৫৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যা আগের দিনের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি।সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নাটোর পৌরসভা কার্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। নাটোরে চলমান লকডাউনের পঞ্চম দিনে সংক্রমণ কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ছিল ৩৩ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ সময়ে ২২৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত ৬৬। নওগাঁয় গত ২৪ ঘণ্টায় দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে করোনায়। ২১৫ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে ৪৮ জন। চাঁপাইনবাবগঞ্জেও বাড়ছে করোনা রোগী।সাতক্ষীরা মেডিকেলে করোনা আক্রান্ত আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও তিনজনের। গত ২৪ ঘণ্টায় ৮২ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত ৫১ জন। শনাক্তের হার ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ। যশোরে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৪৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪২ শতাংশ। মারা গেছেন তিনজন। খুলনায় এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ গতকাল রোববার থেকে শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে জেলা প্রশাসনের কোনো নির্দেশনাই পালন করতে দেখা যায়নি নাগরিকদের। এদিকে, জেলায় করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজেরও মজুদ শেষ হয়ে গেছে। বাগেরহাটে নতুন করে আরও ৫৫ জন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন দু’জন। দিনাজপুরে গত ৪৮ ঘণ্টায় করোনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গোপালগঞ্জে মারা গেছেন একজন। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় এক দিনে শনাক্ত হয়েছে ১০ জন। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে মাগুরা শহরকে সোমবার সকাল থেকে লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। ঝিনাইদহে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ব্যাংক কর্মকর্তার। উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা নড়াইলে ২৪ ঘণ্টায় ৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত ৩৪। শনাক্তের হার ৫০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এ জেলার ১০টি গ্রামকে ‘হটস্পট’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ব্যুরো, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত :রাজশাহী: রাজশাহী মেডিকেলে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে রাজশাহীর দু’জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছয়, নাটোরের এক, নওগাঁর তিন এবং কুষ্টিয়ার একজন রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৪২ জন।বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভাগের আট জেলায় ৬৬৮ জনের করোনা পজিটিভ হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর ৩৬৮ জন। এদিকে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় চলমান লকডাউন কঠোরভাবেই চলছে। বন্ধ থাকছে দোকানপাট। বাস, ট্রেনসহ সব ধরনের যানবাহনও বন্ধ রয়েছে। শহরে মানুষের আনাগোনা কমেছে। চিকিৎসকরা আশা করছেন, অন্তত দুই সপ্তাহ এভাবে চললে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কমে আসবে।শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ): চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৭ জন শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে জেলায় সংক্রমণের হার কমে ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশে নেমে এসেছে। বর্তমানে ১১ দফা কঠোর বিধিনিষেধ বলবৎ থাকলেও তা সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না।নওগাঁ: এ জেলায় আক্রান্তের হার ২২ দশমিক ৩২ শতাংশ। জেলা সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ বলেন, জেলায় চলমান লকডাউনে যে ১৫টি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা কার্যকর না হলে সার্বিক পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করতে পারে। ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর এ মোর্শেদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলার পাঁচজন, রানীনগরের পাঁচ, মহাদেবপুরের চার, মান্দায় পাঁচ, বদলগাছীতে তিন, পত্নীতলায় চার, নিয়ামতপুরের ৯, সাপাহারের ১০ ও পোরশা উপজেলার তিনজন।
নাটোর: নাটোর ও সিংড়া পৌর এলাকায় সাত দিনের বিশেষ লকডাউনের পঞ্চম দিনেও শক্ত অবস্থানে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনের একাধিক মোবাইল টিমও মাঠে রয়েছে। এদিকে, সদর হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া অক্সিজেন সিলিন্ডার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল।নাটোর পৌরসভা কার্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণার পর মেয়র উমা চৌধুরী জলি জানান, পৌরসভায় কর্মরত ৪৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া বড়াইগ্রামে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আশাদুজ্জামানসহ ১৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন।সাতক্ষীরা: গতকাল রোববার সাতক্ষীরায় ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে লকডাউন। জেলা শহরে পুলিশ মোড়ে মোড়ে ব্যারিকেড দিলেও মানুষ নানা অজুহাতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। আর গ্রামের মানুষের মধ্যে লকডাউন মানার তেমন কোনো লক্ষণই নেই। স্বাস্থ্যবিধিও উপেক্ষিত তাদের কাছে। এদিকে, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কতিপয় চিকিৎসক করোনা রোগীদের নিয়ে বাণিজ্য করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা করোনা রোগীদের ১৫ হাজার টাকা দামের একটি ইনজেকশন দিতে বলছেন, যেটি সাধারণত বাত রোগীদের দেওয়া হয়ে থাকে।
যশোর: করোনার উপসর্গের রোগীর চাপ বেড়েছে যশোর জেনারেল হাসপাতালে। ৮০ শয্যার করোনা ওয়ার্ডে বর্তমানে ৬৩ জন ভর্তি রয়েছেন। এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় এ হাসপাতালে মারা গেছেন তিনজন। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৪৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এখানে মে মাসের তুলনায় জুনে শনাক্তের হার অনেক বেশি। যশোর ও নওয়াপাড়া পৌরসভায় লকডাউন চললেও মানুষের চলাচল আগের মতোই রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধিও মানা হচ্ছে না ঠিকমতো।খুলনা: রোববার সকাল ১১টায় খুলনা করোনা হাসপাতালের সামনে শতাধিক মানুষকে লাইনে দাঁড়ানো দেখা গেছে। তাদের অধিকাংশেরই শরীরে করোনার উপসর্গ। তারা এসেছেন পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে। কিন্তু নেই ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব। এ চিত্র প্রতিদিনের বলে জানালেন টিকিট কাউন্টারের কর্মীরা। প্রায় এক ঘণ্টা হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান করে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্স, রিকশা ও ইজিবাইকে করে করোনা পজিটিভ রোগী আসছেন হাসপাতালে। করোনার নমুনা দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের পাশ দিয়ে হাসপাতালের ভেতরে যাচ্ছেন তারা। আবার লাইনে দাঁড়ানো দু-একজন মাস্ক থুতনিতে লাগিয়ে পান খাচ্ছেন। এ ব্যাপারে খুলনা করোনা হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, আগে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন নমুনা দিতে আসতেন। এখন গড়ে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ জন নমুনা দিতে আসেন। তাদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে অনুরোধ করা হলেও শোনেন না।
বাগেরহাট: এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১০৭ জনে। মৃত্যু হয়েছে ৫৭ জনের। গতকাল বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমায়ুন কবির জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১১০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৫০ শতাংশ। তবে মোংলায় সংক্রমণের হার ৫৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
দিনাজপুর: গত ৪৮ ঘণ্টায় দিনাজপুরে মারা যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে তিনজন দিনাজপুর সদরের এবং দু’জন বিরামপুর উপজেলার। সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুস জানান, পরিস্থিতি বিবেচনায় পদক্ষেপ নিতে সন্ধ্যায় জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে।
গোপালগঞ্জে: গত ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় ৪৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মাগুরা শহরকে সোমবার সকাল থেকে লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। এ জেলায় রোববার আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৭ জন। ঝিনাইদহের শৈলকূপায় র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ১০ জনের মধ্যে সাতজন শনাক্ত হয়েছেন। নড়াইল সদরের চারটি ইউনিয়নের পাশাপাশি ১০টি গ্রামে ১ জুন থেকে এ পর্যন্ত ৩৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ অঞ্চল এখন জেলার ‘হটস্পট’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সেগুলো হলো- পাচুড়িয়া, গোবরা, কলোড়া, মুশুড়িয়া, রাম নগরচর, আগদিয়ার চর, শিমুলিয়া, সিঙ্গাশোলপুর, বিছালী ও বীড়গ্রাম। সিভিল সার্জন নাসিমা আক্তার বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক লকডাউন দেওয়া হচ্ছে। তার পরও নিয়ন্ত্রণে না এলে সর্বাত্মক লকডাউন দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:২৬:১৪ ৬৩৩ বার পঠিত # #কভিড১৯ #করোনা ভাইরাস #গোপালগঞ্জ #দিনাজপুর #নাটোর #বাঘেরহাট #বিশ্বস্বাস্থ্য