প্রত্যেক সভ্য ও মননশীল মানুষের অন্তরেই নিজের সম্বন্ধে একটা পরিশীলিত কাল্পনিক অবয়ব থাকে।
একেকজন একেকভাবে নিজেকে সেখানে প্রতিস্থাপন করতে পছন্দ করে।
প্রত্যেকেই মনে করে জীবন নামের এই নাট্যমঞ্চে একটি অনবদ্য ভূমিকায় অভিনয় করতেই বুঝি তার অবির্ভাব ঘটেছে এই পৃথিবীতে ।
তাই বলে জীবন কি জীবনের প্রথম ও শেষ কবিতার মতই সুখকর, স্মৃতিভাস্বর ও দ্যুতিময় ? প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা ? তবে যে পার্থিব সুখ-সমৃদ্ধি-স্বচ্ছন্দ এবং মোহ ও মায়ার এত প্রমত্ত অভিপ্রায়…! যুগ -যুগান্তর ধরে সৃষ্টি ও ধ্বংসের এই লুকচুরি খেলা…! সহস্র প্রহরের পর প্রহর ধরে কত ফুল ঝরে পড়ে! কত সুশোভিত স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটে, আবার অস্তরাগের আবীর মেখে তা আবার জ্বালাময়ী হয়ে ওঠে ! কত রবির উদয় ও অন্তের রেখা বিলীন হয়, কত হাসি- কান্নার লীলাখেলা সাঙ্গ হয় ! কত প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির স্নায়ুযুদ্ধ ঘটে চলে নীরবে আপন মনোভূমি তলে!
কত নিষ্পাপ ভ্রুনের শুভেচ্ছাবার্তায় হাস্যোজ্জ্বল হয় এই পৃথিবী, আবার তাদের নশ্বর দেহের রেনু মাটির মুকুলে মিলিয়ে যায়। অথচ তবুও জীবন চলে যায় নিরবধি। শান্ত… শীতল…স্নিগ্ধ এক গতিময়তায়…!
তবে জীবনের সত্যি এক আধ্যাত্নিক রুপও রয়েছে। নির্লিপ্ত… নির্বিকার… অনন্তের দিকে। সে সৃষ্টি -স্থিতি-ধ্বংস ও পুনরায় সৃষ্টির কথা বলে।
ভালোবাসা -আনন্দ ও বেদনার মর্মরগাথা পুনর্জাগরণের কথা বলে। চরম হতাশা, বঞ্চনা, আর পরাজয়ের স্তুতি শেষে পুনর্জন্মের কথা বলে। যা কিনা এক অদৃশ্য ইথারের বিশ্ব, যেখানে জাগতিক সকল কর্মযজ্ঞের চিন্তাতীত…ও কল্পনাতীত। এক সুধাময় অনন্ততীর্থ ।
জন্ম হতে জন্মান্তর আর মৃত্যু হতে মৃত্যুর অন্তর্নিহিতে এক অতৃপ্ত আত্মার আনন্দময় অভিযানই হচ্ছে মানব জীবন। আর মানুষ হচ্ছে এই পৃথিবীতে এক পথিক আত্মা। দুঃখ -সুখের মোড়ক উন্মোচন করতে করতেই পার হয়ে যায় স্বল্পায়ুর এই রহস্যময় পরিচ্ছেদ।
এই শতসহস্র যুগ…এই কল্পনাতীত দুরত্বের ক্রমবর্ধমান পরিধি…এই বিপুল চেতন-অবচেতন ভাবনা…এই যে দৈনন্দিন ঘটনার সমানুপাতিক অনুভূতিরাজি…সবটাই যেন এক বিচিত্র অ্যডভেঞ্চার, অপূর্ব রসের আস্বাদন। সবটাই যেন এক বৃহৎ গহন জীবনশিল্প।
দিগন্তরেখার ওপারের এক রহস্যময় কল্পলোকের উদরে নিমজ্জিত আমরা সবাই। তবুও আমাদের বাজেয়াপ্ত হয়ে যাওয়া সকল সুখ -সমৃদ্ধি ও ভালোবাসাটুকুও যেন বিলীনের অভিলাষী হতে, হতে আবারও বেঁচে ফেরার জানান দেয়। হৃদয়ের মননশীলতায় আগুন জ্বলে ওঠে। অনুতাপহীন- বিবেকহীন-উষ্ণতাহীন-প্রেমহীন নাতিশীতল শিরাসমষ্টি ও রক্তকনিকায় মৃত সত্তা পুনরুজ্জীবিত হয়…ব্যাপিত হয়…।আর মনও তখন এক ক্রিয়াপদের ভূমিকা পালন করে থাকে, শ্বাশত হই…চিরন্তন হই আমরা।
নির্বুদ্ধি প্রথম যৌবনের মতই তাই জীবন আমাদেরকে হাতছানি দেয় বারবার।আর তাইতো আমরা যা কিছু করতে পারিনা তাই করতে ইচ্ছে করে, আমরা কখনোই আকাশের ঝলকের আনন্দের মত আনন্দের কাছাকাছি আসতে পারিনা।আমাদের আন্তরিক হাসি কিছুটা ব্যথাপূর্ণ হয়।আমাদের মধুরতম গানগুলি জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক অনুভবের কথা বলে।
তবুও জীবনে বৈচিত্র্যের স্বাদ পাওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে বিচিত্র পথে, পথে চলা…
ট্রাজেডির মধ্যে নিজের স্বরুপ ও সত্তার স্বাদ না পেলে জীবন বিষাদময় হয়ে যায়।
Because unlike a skylark humans are without the ability to ever be enterly overflowing with happiness at all times.
আজমেরিনা শাহানী
লেখক, ভয়েস আর্টিস্ট এবং লাক্স ফটোজেনিক
বাংলাদেশ সময়: ২০:০০:৫৯ ৮৫০ বার পঠিত #অ্যাডভেঞ্চার #আজমেরীনা শাহানী #আবিষ্কার #গল্প #জীবনের গল্প #তরুন লেখক #নির্দেশনামুলক প্রবন্ধ #লাইফ #লাইফস্টাইল #সত্যিগল্প