তোহা,বঙ্গ-নিউজ ডটকম:প্রথমে আকসুর কাছে একান্তে ক্রিকেট জুয়ায় জড়িয়ে পড়ার স্বীকারোক্তি দেন মোহাম্মদ আশরাফুল। এরপর গত ২৪ মে কালের কণ্ঠ স্পোর্টসে সেই স্বীকারোক্তির বিষয়টি ফাঁস হওয়ার দিন দশেক পর প্রকাশ্যে দোষ স্বীকার করেন বাংলাদেশের এ ক্রিকেট আইকন। সম্প্রতি কৃত অপকর্মের জন্য ঘোষিত যেকোনো দণ্ড মেনে নিতেও অনাপত্তির কথা জানিয়েছেন আশরাফুল। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর সাজার মেয়াদ জানানোর কথা রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার (আইসিসি) প্রধান নির্বাহী ডেভ রিচার্ডসনের। গতকাল বিকেলেই ঢাকায় পৌঁছেছেন ডেভ রিচার্ডসন। এ সফরে তাঁর সঙ্গী হিসেবে এসেছেন আরো চারজন- আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের (আকসু) ব্যবস্থাপক যোগেশ সিং, আইন বিভাগের প্রধান ইয়ান হিগিন্স, গণযোগাযোগ বিভাগের প্রধান সামিউল হাসান এবং আকসুর তদন্ত কর্মকর্তা অ্যালান পিকক। শেষোক্তজন শুরু থেকে বিপিএলে ম্যাচ পাতানো তদন্ত কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ধাপে ধাপে সে কার্যক্রম শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন নিয়ে কাল ঢাকায় এসেছেন আইসিসির এ পাঁচ কর্মকর্তা। গত দুই মাস ধরেই দেশের ক্রীড়াঙ্গন তোলপাড় মোহাম্মদ আশরাফুলের স্বীকারোক্তিকে ঘিরে। বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে যে স্বীকারোক্তিকালে তিনি শুধু নিজের কথাই নয়, বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের মালিক এবং বেশ কয়েকজন সহখেলোয়াড়ের নামও বলেন আশরাফুল। তবে পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে কারো নামই প্রকাশ্যে বলার চর্চা নেই আইসিসিতে। কিন্তু আকসুর পর সংবাদমাধ্যমেও স্বীকারোক্তি দেওয়ার ফলে মোহাম্মদ আশরাফুলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে বাধা নেই আইসিসির সামনে। কী সাজা হবে আশরাফুলের- এ প্রশ্ন ফিক্সিং বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ার দিন থেকেই। আইসিসির অ্যান্টি করাপশন কোড অনুযায়ী ম্যাচ পাতানোকে চিহ্নিত করা হয়েছে নিকৃষ্টতম অপরাধ হিসেবে, যে অপরাধের সাজা পাঁচ বছর থেকে ক্রিকেটে আজীবনের ‘ইনএলিজিবিলিটি’, নিষেধাজ্ঞা নয়। কারণ ক্রিকেট খেলিয়ে বেশির ভাগ দেশেই ক্রিকেট জুয়া প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। তাই এ ধরনের ‘অপরাধীর’ বিরুদ্ধে বড়জোর ‘অনুপযুক্ততা’ জারি করতে পারে আইসিসি কিংবা সংশ্লিষ্ট বোর্ড। আইসিসির অ্যান্টি করাপশন কোড অনুসরণে নিকৃষ্টতম অপরাধের পরও কম শাস্তি পেতে পারেন মোহাম্মদ আশরাফুল। কারণ তিনি স্বীকারোক্তি দেওয়ার পাশাপাশি আকসুর তদন্ত কার্যক্রমে পূর্ণ সহায়তা করেছেন। এ ছাড়া নিজের পাশাপাশি ক্রিকেট জুয়ায় অন্য খেলোয়াড় কিংবা কর্মকর্তা অথবা তৃতীয় কোনো পক্ষের সংশ্লিষ্টতার খবর ফাঁস করার পুরস্কার হিসেবেও রেয়াত পেতে পারেন আশরাফুল। আকসুর তদন্ত কার্যক্রমের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রমতে, ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক ম্যাচে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দেশি-বিদেশি খেলোয়াড় এবং কর্মকর্তারও ক্রিকেট জুয়ায় জড়িয়ে পড়ার কথা আকসুকে জানিয়েছেন আশরাফুল। কথিত আছে, তাঁর অভিযুক্তের তালিকায় বাংলাদেশের খেলোয়াড়ই রয়েছেন ১৭ জন! উল্লেখ্য, স্বীকারোক্তি এবং একই সঙ্গে তদন্ত কার্যক্রমে পূর্ণ সহায়তা ও অন্য অনেক ‘দোষীর’ নাম বলে দেওয়ার বিনিময়ে ক্রিকেটের নিকৃষ্টতম অপরাধ করা সত্ত্বেও স্রেফ অর্থদণ্ড দিয়েই ‘মুক্তি’ পেতে পারেন আশরাফুল। আইসিসির অ্যান্টি করাপশন কোডে এ রেয়াতের বিধান রয়েছে। অবশ্য একমাত্র আশরাফুল ছাড়া আর কেউ দোষ স্বীকার করেননি। তাই তাঁদের ভবিষ্যৎ আপাতত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড গঠিত অ্যান্টি করাপশন ট্রাইব্যুনালের ওপর ছেড়ে দিচ্ছে আইসিসি। অবশ্য ট্রাইব্যুনাল সেটি করবে আকসুর তৈরি চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই। জানা গেছে, ওই প্রতিবেদনে সবশেষ বিপিএলে অংশ নেওয়া একাধিক ক্রিকেটারের দিকে তীর ছোড়া আছে। স্বীকার না করলেও ক্রিকেট জুয়ায় অংশ নেওয়ার দায়ে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাপত্র আজ ঘোষণা করেও দিতে পারেন ডেভ রিচার্ডসন। সেটি না হলেও, অ্যান্টি করাপশন ট্রাইব্যুনালের সামনে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য বিস্তর যুক্তি দাঁড় করাতে হবে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের মালিককে। এদিকে আশরাফুলের স্বীকারোক্তির সূত্র ধরে সন্দেহভাজাজনের তালিকায় অগুনতি নামের ভিড়ে আছেন জাতীয় দলের সাবেক তিন তারকাও। সেসব অভিযোগের ব্যাপারে আইসিসির করণীয় কী, তা নিয়ে অন্ধকারে খোদ বিসিবিও। কেউ বলছেন বিষয়টি আইসিসি তদন্ত করে দেখবে। কারো দাবি এরই মধ্যে তদন্ত শুরু হয়ে গেছে; কিন্তু শেষ হতে সময় লাগবে। আবার অন্য একটি সূত্র বলছে, তদন্ত করে কিছুই পায়নি আইসিসি। স্বীকারোক্তি দেওয়ার ফলে আশরাফুলের প্রাপ্য শাস্তির মেয়াদকে ঘিরে যেমন আকর্ষণ আছে, তেমনি কৌতূহল আছে এ ব্যাপারে আইসিসির অনুসন্ধানেও। এদিকে কাল রাতেই ডেভ রিচার্ডসন চার্জশিট (নোটিস অব চার্জ) তুলে দিয়েছেন মোহাম্মদ আশরাফুলের হাতে। এর একটি অনুলিপি পেয়েছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরীও। এর পাশাপাশি তদন্ত রিপোর্টের গূঢ় রহস্যও তাঁকে অবহিত করেছেন আইসিসির প্রধান নির্বাহী। আর বিসিবির বর্তমান অন্তর্র্বতী কমিটির সদস্যরা বিষয়টি জানতে পারবেন আজ সকালের সভায়, যে সভার অন্যতম একটি এজেন্ডা অ্যান্টি করাপশন ট্রাইব্যুনাল গঠন। একজন সাবেক বিচারপতিকে প্রধান
বাংলাদেশ সময়: ১:৪৭:৩৮ ৪৭০ বার পঠিত