বঙ্গনিউজঃ টানা ২-৩ সপ্তাহ একই মাস্ক পরলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনার মধ্যে ভারতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের প্রকোপ নিয়ে দেশটির শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা এমন সতর্কবার্তাই উচ্চারণ করেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ব্যবহৃত মাস্ক পরিষ্কার না করে বারবার পরলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস নিয়ে সবাইকে সচেতন ও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের (এইমস) স্নায়ুবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. পি শরৎচন্দ্র দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোয় জানিয়েছেন, ছত্রাক জাতীয় মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণের পিছনে বড় কারণ অপরিচ্ছন্নতা।
ডা. পি শরৎচন্দ্রের মতে, ‘অনেকেই ২-৩ সপ্তাহের বেশি সময় না ধুয়ে একই মাস্ক ব্যবহার করে যান। যেখান থেকে ছড়াতে পারে এই সংক্রমণ।’ এ সংক্রমণ এড়াতে নিয়মিত মাস্ক পরিবর্তন কিংবা ব্যবহৃত মাস্ক সাবান-জীবাণুনাশক দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ভারতীয় চিকিৎসক ডা. সুরেশ সিং নারুকা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এক মাস্ক পরা তো বটেই, তার পাশাপাশি বাতাস চলাচল করে না এমন ঘরে বসবাসও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের পেছনে বড় কারণ হতে পারে। তবে এর পাশাপাশি করোনায় আক্রান্তদের অনিয়ন্ত্রিত স্টেরয়েড ব্যবহারকেও তিনি অনেকাংশে দায়ী করেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলার সংখ্যা ৩৫টি। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, সাতক্ষীরা, পঞ্চগড়সহ বেশ কয়েকটি জেলার মানুষ তাদের জন্য নিকটবর্তী হওয়ায় ভারতে বেশি পরিমাণে যাওয়া-আসা করে থাকে। ফলে এই মানুষদের ভারতের ডাবল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। ভারতের ভ্যারিয়েন্টটি এক থেকে বিশজন, বিশজন থেকে চারশজন পর্যন্ত আক্রান্ত করে থাকে।
এই অবস্থায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়াবহতা রোধ করতে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করতে হবে- যাতে করে সীমান্তবর্তী জেলার মানুষ পার্শ্ববর্তী জেলাসহ ঢাকা শহর ও অন্যান্য শহরে না যেতে পারে এবং ওইসব জেলায় যাতে অন্য জেলার মানুষ প্রবেশ করতে না পারে।’
উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘বর্তমানে ভারতে এই ফাঙ্গাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এই জীবাণু বা ফাঙ্গাস বা ছত্রাক প্রাণীদের বিষ্ঠায়, বাসি খাবার, বাসি ফল, ফ্রিজে দীর্ঘদিন ধরে রাখা সংরক্ষিত খাদ্য সামগ্রী, অপরিষ্কার মাস্ক, অক্সিজেন ও আইসিইউর হিউমিডিফায়ারের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে। যারা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে ভুগছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদির ধরে ভুগছেন, ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী, অতিরিক্ত ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, অত্যাধিক স্টেরয়েড নেয়া রোগী, কিডনি বা অন্য অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা রোগী এবং চরম অপুষ্টিজনিত রোগীদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।’
উপাচার্য বলেন, ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের রাইনো-অরবিটাল-সেরিব্রাল ধরনটি নাক দিয়ে ঢুকে চোখ ও মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে। তাই এই জীবাণুটি আমাদেরকে যাতে আক্রান্ত না করে সেজন্য এখনই আমাদের সবাইকে অধিকতর সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।’
অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত রোগীদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য বিএসএমএমইউয়ে চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ, কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগ, নাক কান ও গলা বিভাগ, ভাইরোলজি বিভাগ, অ্যানেসথেসিয়া (আইসিইউ) বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। যে বোর্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেবেন।’ তিনি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে জনগণকে কোনো ধরনের গুজবে কান না দিয়ে বা আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৪১:০৯ ৪৬৫ বার পঠিত