বঙ্গনিউজঃ করোনার দুর্যোগে টানা ১৫ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পুরো শিক্ষাব্যবস্থা। এই সময়ে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে ৪ কোটি শিক্ষার্থী। অন্যদিকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধুঁকছে আর্থিক সংকটে। এসএসসি ও এইচএসসি স্তরের ৪০ লাখ পরীক্ষার্থী ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আর চাকরির বয়স পার হওয়া নিয়েও শঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এমন পরিস্থিতিতে আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলন করবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, হয়তো এই সংবাদ সম্মেলন থেকেই আসতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা-না খোলার বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত।
এদিকে গত ২৩ মে পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সর্বশেষ সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি শেষ হচ্ছে ২৯ মে। মাত্র সাত দিনের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্তে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে কৌতূহল। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত রয়েছে অভিভাবকদের। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, বেশির ভাগ অভিভাবক স্কুল খোলার বিপক্ষে। যদিও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর জরিপ বলছে ভিন্ন কথা। সম্প্রতি পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ গবেষণা জরিপে দেখা যায়, করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের ৯৭ শতাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে চান। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শিখতে না পারার ঝুঁকিতে রয়েছে।
আবার সরকারের সিদ্ধান্ত আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেওয়া। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব এমন তথ্যই জানিয়েছেন। কিন্তু কতসংখ্যক শিক্ষার্থীকে দ্রুত সময়ে টিকার আওতায় আনা যাবে, এ প্রশ্ন রয়েই যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকা ১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার জন্য তাদের তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হলেও অনেক শিক্ষার্থী এখনো টিকার প্রথম ডোজই দেয়নি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে গত সোমবার দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধনও করেছেন তারা। এছাড়া অনলাইনের পরিবর্তে সরাসরি পরীক্ষা ও ক্লাসে অংশ নেওয়ারও দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, অনলাইন শিক্ষায় বৈষম্য হচ্ছে। যারা মফস্বলে থাকছেন, ইন্টারনেটের দুর্বলতার কারণে তারা কিছুই শিখতে পারছেন না।
করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় গত ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার চিন্তা ছিল। ঐ সময় শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে ছিলেন, ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির নিয়মিত ক্লাস হবে। অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে এক দিন করে আসবে। পুরো সপ্তাহের পড়া নিয়ে যাবে। মন্ত্রীর মতে, শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক। শ্রেণিকক্ষে তাদের গাদাগাদি করে বসতে হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসানো সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে আনার সুযোগ থাকবে না। একই সময়ে স্কুল খোলার জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবে, সেই আলোকে গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়। ঐ গাইডলাইন কতটা মানা হয়েছে, সে বিষয়ে তদারকির জন্য শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি ও গাইডলাইন মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঠদানের জন্য ফেব্রুয়ারি থেকেই প্রস্তুত রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার আর এসএসসি ও এইচএসসি শিক্ষার্থীদের অটোপাশ দেওয়া হবে না। পরীক্ষার আগে উভয় স্তরের শিক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ওপর ৬০ দিন ক্লাস হবে। তাই এখনো যদি এই স্তরের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু না হয়, তাহলে চলতি বছরে কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে সেই প্রশ্ন অভিভাবকদের। আবার কোভিড-সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী, করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে না এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা উচিত হবে না। গতকাল বুধবার করোনা সংক্রমণের হার ছিল ১০ শতাংশের কাছাকাছি।
বাংলাদেশ সময়: ১১:১৬:৪৩ ৭৮২ বার পঠিত # #শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান #শিক্ষার্থী #স্কুল-কলেজ