২. ১৯৪৭-ভারত ভাগ (উপমহাদশেরে বভিাজন ) : ভারতবর্ষে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের দু’শো বছরের শাসনকাল ছিলো ভারতীয়দের সঙ্গে ইংরজেদরে বিদ্রোহ-সংগ্রামে ভরপুর। এ কারণে বলা হয়ে থাকে ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাস ভারতীয়দের বিক্ষিপ্ত, বিচ্ছিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস। ১৭৫৭ সালে সেনানায়ক ও ঘনিষ্ট আত্মীয়দের বিশ্বাস ঘাতকতার কারনে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন। এর ফলে ভারতের ভাগ্যাকাশে নেমে আসে দুর্যোগের মেঘ। কেননা,- তারপর থেকেই পর্যায়ক্রমে প্রবল বিক্রমে সমগ্র ভারতকে দখল করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী সরকার। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসন মূলতঃ দু’ভাগে বিভক্ত: প্রথম একশ বছর ভারতীয় উপমহাদেশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি দ্বারা শাসিত হয়েছে এবং পরবর্তী নব্বই বছর ব্রিটিশ রাজ ও পার্লামেন্ট দ্বারা শাসিত হয়েছে। সত্যিকার অর্থে , ব্রিটিশ শাসনের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতে সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক পরিবর্তনের সূচনা হয়। এসময়ই ভারতীয়রা জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নানাধরনের শাসনতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু করে।
উপমহাদেশে ইংরেজ-শাসন ও শোষনে মুক্তির পর এই অংশটিকে আমরা নিম্নোক্ত কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে আলোচনা করছি, যথাক্রমে :
ক.১৮৫৭ সালের ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম ও কম্পানি শাসনের অবসান,
খ.মহাসংগ্রামের ব্যর্থতার কারণ ও ফলাফল, ভারতীয় জাতীয় সংগ্রেস,
গ.বঙ্গভঙ্গ ১৯০৫, বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন,
ঘ.১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন ও লক্ষ্মো চুক্তি,
ঙ.১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন,
চ.খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন,
ছ.বেঙ্গল প্যাক্ট, সাইমন কমিশন ও নেহেরু রিপোর্ট,
জ.জন্নিাহর চৌদ্দ দফা ও দ্বি-জাতি তত্ত¡,
ঝ.১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের পটভূমি,
ঞ.১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন,
ট.১৯১৯ ও ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের তুলনামূলক আলোচনা,
ঠ.১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব ও পৃথক রাষ্ট্রের দাবি,
ড.ক্রীপস মিশন,
ঢ.মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা,
ণ.১৯৪৬ সালের নির্বাচন,
ত.অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ,
থ.মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও বাংলার নেতৃত্বের দ্ব›দ্ব,
দ.মাউন্টব্যাটেনের পরিকল্পনা ও র্যাডক্লিফ রোয়েদাদ,
ধ.১৯৪৭ সালের ভারত শাসন আইন ,
ন. ভারত-পাকিস্তান (র্পূব ও পশ্চিম পাকিস্তান) বিভাজন : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন
ক.১৮৫৭ সালের ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম ও কম্পানি শাসনের অবসান :
ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসে ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম এক অভূতপূর্ব ঘটনা।১৮৫৭ সালের মহাসংগ্রামের প্রকৃতি ও স্বরূপ সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ পরস্পরবিরোধী মত দিয়েছেন। ব্রিটিশ ঐতিহাসিকরা এই মহাসংগ্রামকে ‘সিপাহী বিদ্রোহ’ নামে অভিহিত করলেও ভারতীয় ঐতিহাসিকদের মতে এটি ভারতবর্ষের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম। ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ও কম্পানির সমকালীন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মতে ভারত জুড়ে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়া অভ্যুত্থান হলো ‘সিপাহী বিদ্রোহ’। পক্ষান্তরে কয়েকজন পশ্চিমা ঐতিহাসিক ও ভারতীয়দের মতে এটি ছিল ব্রিটিশ শাসন অবসানকল্পে পরিচালিত স্বাধীনতা সংগ্রাম। আবার অনেকে একে ভারতীয় সামন্ত শ্রেণীর প্রতিরোধ হিসাবেও আখ্যায়িত করেছেন। সত্যিকার অর্থে কোনপক্ষের বক্তব্যই যুক্তিহীন নয়। তবে বর্তমানে স্বাধীন ভারতবর্ষে জনগণ এ মহাসংগ্রামকে ‘ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ’ হিসাবেই বিবেচনা করছেন।
নানা কারণে এ মহাসংগ্রাম ব্যর্থ হলেও এর প্রভাব ছিল সুদূর প্রসারী। এর ফলেই ভারতে কম্পানি শাসনের অবসান ঘটে। ব্রিটিশ রাজ ও পার্লামেন্ট ভারতীয় উপমহাদেশর শাসনভার গ্রহণ করে। যদিও মহাসংগ্রাম দ্বারা ব্রিটিশ উপনিবেশরত বিলুপ্তি ঘটেনি তথাপি ব্রিটিশ রাজের ক্ষমতা গ্রহণের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। কেননা,- এর মধ্যদিয়েই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়মতান্ত্রিক পথ পায়, বিকাশ ঘটে ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসের (চলবে) ৷
তথ্যসূত্র : বুকস্ , ইন্টারনেট ৷
লেখক: ফারহানা আকতার, ডিরেক্টর এন্ড এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, ইন্টারন্যাশনাল রবীন্দ্র রিসার্চ ইনস্টিটিউট, কলামিস্ট, কথাসাহিত্যিক এবং সহ-সভাপতি, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ ৷
বাংলাদেশ সময়: ২১:১৭:১০ ৮৬৭ বার পঠিত