তোমাদের উন্নত গর্বিত মস্তকের উপর
কোন লজ্জাহীনতায় ধারণ করো বলো
আমাদের নষ্ট মনুষ্য পরিচিতি।
যখন তোমাদেরই মত দেখতে
চোখে মুখে,
চুলে গোফে
হাতে, পায়ে একটি মানুষ
তোমাদেরই পায়ের নীচে
জুতো ব্রাশ করে
যখন জুতার ধুলোয় চলে তাঁর
দৈনিক দৈহিক পরিপাটি।
যখন আমাদের মাথার বালতিতে
সমাপ্তি পায়
তোমাদের পয়ঃনিষ্কাশন।
তখন কোন বুদ্ধিমত্তায়
তোমাদের সাথে জুড়ে দাও বলো
আমাদের নষ্ট মনুষ্য পরিচিতি।
যখন তোমারই প্রিয় শিশুর মত
ছোট্ট এক শিশুর জিহ্বায়
বাংলা বর্ণমালা শিখতে থাকে ভিক্ষার আবৃত্তি
যখন কোন এক বাড়ন্ত কিশোর
কলম চালানো বয়সে পকেটে চালাই ব্লেড
বাস, ট্রাম, ট্রেনে বসে
যখন পিতার বয়সী এক বৃদ্ধ
তোমার সুটকেস ঘাড়ে
কুঁজো পিঠে হেঁটে যায়
যেন সে কবেকার হালের বলদ,
তোমার ইশারায় চলে ডানে বামে।
যখন বুকের চঞ্চুর মতো শুকনো
এক মা, হাত ঘুসে মাতৃত্ব ঢালে
তোমার বাড়ীর বাসন, কোসনে
ঘর, মেঝে আর বাথরুমে।
যখন তোমার প্রিয় মেয়ের মত
এক অসহায় কুমারী
গোলাপের চেয়ে কম দামে
বিক্রি করে
তাঁর গোলাপি স্তনগুচ্ছ
যখন ডাক বাংলোয় অথবা
বনে বাদাড়ে মধ্য মাঠে
কুমারীর জরায়ুতে জড় হয় বাধ্যগত জারদ
তখন কোন মানবিক দায়িত্বে
গেয়ে উঠো বলো
সবার উপরে মানুষ সত্য
তাহার উপরে নাই।
যখন লজ্জাস্থান বস্ত্রহীন
কাঁদাজলে কালো
এক উলঙ্গ মানুষ
কাঁপা হাতে রুটি ভিক্ষা করে
পথে, ঘাটে, হোটেলে
তোমার বাড়ীর গেটে
যখন একটি মানুষ প্রতিদিন
মসজিদ, মন্দির, গীর্জায়
ইশ্বরের চোখে ধুলি দিয়ে
বদনা, জুতা, ঘড়ি, স্যান্ডেল
চুরি করে
যখন একটি মানুষ
ক্ষুধার জ্বলন্ত অঙ্গারে
আকার স্বভাব বদলায়
মানুষ থেকে চোর, চোর থেকে ডাকাত
ডাকাত থেকে বোমাবাজ
বোমাবাজ থেকে দুধর্ষ সন্ত্রাসী
অথবা হয়ে যায় আত্মঘাতী,
গৃহবাস ছেড়ে বেছে নেয়
বনবাস
পশুদের সাথে মিশতে মিশতে
সে হয়ে উঠে আরও বেশি পশু
তখন কোন দায়িত্বের সাথে
পৌরসভায় অথবা ইউপির নথিতে
লেখা হয় তাঁর নাগরিকত্বের সনদ।
যখন একটি মানুষের হৃদপিণ্ড
রক্ত শূন্য হয়েছে দেশ প্রেমে
যখন সে অথবা তাঁর বাবা অথবা
তাঁর দাদার রক্ত দৌড় দিয়ে
ছুঁটে গেছে বিপ্লবে বিপ্লবে,
রাজপথে, অভ্যুত্থানে, ৭১ এ যুদ্ধের ময়দানে
যখন এদেশের ভাষায়, স্বাধীনতায়
তাঁর ঋণ পুণ্যের পতাকা হয়ে উড়ে
অথচ সেই একটি মানুষ যখন
বস্ত্রহীন, অন্নহীন, চিকিৎসাহীন
মরে পড়ে থাকে
রাস্তায়, নর্দমায়, পুকুরের জলে।
যখন একটি মানুষ অবশিষ্ট জীবন
রেখে আসে, বিষের বোতলে,
ফাঁসের দড়িতে
এবং যখন একটি মানুষের ময়নাতদন্ত রিপোর্টে
লেখা হয় বেওয়ারিশ লাশ
তখন কোন ভাষা, কোন স্বাধীনতা
কোন পতাকার অংশীদারিত্ব দেবে তাঁকে
তখন কোন নষ্ট নর্দমার সংযোগে বেঁধে রাখবে তাঁকে
বাঙালির পরিচিতির সাথে।
যখন তোমার লাথি আর চাবুক থেকে জন্ম নেয়া
তাঁর প্রথম প্রতিবাদ
চলে যায় স্বাধীন বিচারে
যখন মৃত্যুদন্ড, দেশান্তর, দীপান্তর, জেল হাজত
লেখা হয় রায়ে
যখন একটি মানুষ নৌকাহীন, মাঝিহীন ভেসে যায়
জলে আর জলে
যখন একটি মানুষের দেহ
আর রক্তের ইতিহাস
হারিয়ে যায় হাঙ্গর, কুমির আর মাছেদের মুখে
তখন কোন লজ্জাহীনতায়
লিখবে সমাপ্তির ইতিহাস
ইতিহাসের পাতা ভরে।
কোন লজ্জাহীনতায় তোমাদের
উন্নত গর্বিত মস্তকের উপর ধারণ করবে বলো
আমাদের নষ্ট মনুষ্য পরিচিতি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:১৭:২৬ ১৩৮৮ বার পঠিত # #অরণ্য মজিদ #কবিতা #কাব্য #বাংলা #সাহিত্য