পৃথিবীই আমাদের স্বর্গ হতে পারে ! - বাবলী খান

Home Page » সাহিত্য » পৃথিবীই আমাদের স্বর্গ হতে পারে ! - বাবলী খান
সোমবার, ২৪ মে ২০২১



পৃথিবীই আমাদের স্বর্গ হতে পারে
সবার জীবন ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই আমাদের গুরত্বপূর্ণ চার বন্ধুকে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে ,তাদেরকে সব সময় ভালবাসা ,আদর যত্ন এবং মমতার সাথে খুব কাছে রেখে গভীর সম্পর্ক রাখতে হবে ।
( ১ম ) ১ম বন্ধুটি হলো জীবনের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় আর সেই বন্ধুটির নাম হলো এন্ডোরফিনস। হাসপাতালের বিছানায় একাকী শুয়ে না থাকা পর্যন্ত তা অনুধাবন করা যায়না- সুস্বাস্থ্য জীবনে কত দরকার। সুস্বাস্থ্যের জন্য দিনে চব্বিশ ঘন্টায় কমপক্ষে আধঘন্টা সময় এই বন্ধুর জন্য ব্যয় করতে হয়। ব্যয়াম করলে শরীর এণ্ডোরফিনস ডিসচার্জ করে। শরীর ও মনে হাসি খুশী ভাব আসে। ভালো একটা বই পড়লে , ভালো মানুষের সাথে সুসম্পর্ক রাখলেও শরীরে জন্য অতি প্রয়োজনীয় এই বন্ধুটির সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। তাই, হঠাৎ করে একদিনে তা হবে না। এই বন্ধুটিকে প্রতিদিনই দরকার সাগে মন খারাপ থাকলে প্রিয়জন কাছে আসলে যেমন মন ভালো হয়ে যায়।
ঠিক তেমনি মন যখন খুব খারাপ হয়ে যায় একটু খালি জায়গায় দৌড়ে বা হেঁটে আসুন। এই এণ্ডোরফিনস নামক বন্ধুটি হবে তখন আপনার ভরসা হয়ে সাথে থাকবে।
(২য় )২ য় বন্ধু হলো সব চেয়ে বেশী প্রয়োজন হয় । এই দ্বিতীয় বন্ধুটির নাম হলো ডোপামিন। প্রথম বন্ধু আপনার শরীরকে লাইনে রাখে কিন্তু শরীর শুধু লাইনে রাখলে হয়না ,পাশাপাশি আপনাকে সৎ একটা জীবনও যাপন করতে হয়। কোটি কোটি টাকা থাকলেও অসৎ মানুষের চেহারা দেখলে বুঝবেন- কি যেন একটা অশান্তি ওদের মাঝে বিরাজ করে। কিন্তু সৎ মানুষের চেহারায় দেখবেন একটা অন্য রকমের দীপ্তি ছড়িয়ে আছে। যখনই সৎভাবে কোনো একটা কাজ আপনি করবেন তখন শরীরে ডোপামিন তৈরি হয়। আপনি পরিকল্পনা করলেন, আজকে
ঠিক সময়ে সরকারূ চাকরীস্হানে যাবেন এবং সিদ্ধান্ত কঠিণ ভাবে অফিসের সব কাজ ভালো ভাবে শেষ করবেন। এক টাকাও ঘুষ খাবেন না। ফাইল আটকে রাখবেন না। কোনো রকমের চিটিং করবেন না। কাউকে ফাঁকি দিবেন না। প্রতিদিন যখন এই টার্গেট আপনি পূর্ণ করবেন তখন শরীরে ডোপামিনের আগমন ঘটবে।বাগানের ফুলে যেমন প্রজাপতির উড়ার সময়ে দেখলে মন ভালো লাগে
ঠিক তেমনি কেউ যদি ভালো কাজ করে বা অন্যকে অনুপ্রেরণা দিলেও শরীরে ডোপামিন আসে। স্ত্রী যখন স্বামীর পরিশ্রমকে উৎসাহ দেয়, স্বামী যখন ঘরে গিয়ে দিনের যাবতীয় নানা কাজের জন্য স্ত্রীর প্রশংসা করে তখন স্ত্রীর চেহারায় একটা সৌন্দর্য ফুটে উঠে ।আপনার কাজ যখন বস এ্যপ্রিশিয়েট করে কিংবা নিজের ছেলেমেয়েকে কোনো কিছু ভালো ভাবে শেষ করার জন্য আপনি বাহ্ কি সুন্দর হয়েছে বলেন তখন একটা বাড়তি আনন্দ, উৎসাহ তৈরি হয়। এর সবগুলোই হলো- শরীরের অকৃত্রিম বন্ধু ডোপামিনের কাজকারবার। ভালো কিছু অর্জন করুন-ভালো কাজে একজন আরেকজনকে উৎসাহ দিন আর শরীরের ডোপামিনের কলোনি গড়ে তুলুন।
৩য় ) তৃতীয় বন্ধুটি হলো সেরোটোনিন। এই বন্ধুটি হলো- কামিনী রায়ের কবিতার এই দুই লাইন
“আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী ‘পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।”
কারো কল্যাণের জন্য যাই করিনা কেন তাতে সেরোটোনিন নামক এই অদৃশ্য বন্ধুটির সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। পথের মাঝ থেকে একটা কাঁটা ফেলে দিলেন , কাউকে সুপরামর্শ দিলেন , বৃদ্ধ, মহিলা, রোগী , দূর্বল কাউকে বাসের সীটটা ছেড়ে দিলেন। দেখবেন মনে সুখ পাচ্ছেন। শরীরে এই সুখ এনে দেয় সেরোটোনিন নামক এই অদেখা বন্ধুটি। একাগ্রচিত্তে ধ্যান করলেও শরীরে প্রশান্তি আসে। লোক দেখানো না বরং আধ্যাত্মিক সম্পৃক্ততার তাগিদে কেউ যদি কারো ধর্ম বিশুদ্ধ পালন করে মনে অনেক প্রশান্তি আসে। এই প্রশান্তির যোগান দেয় ৩য় বন্ধু সেরোটোনিন।
(৪ র্থ)শেষ ৪র্থ বন্ধুটি হলো- অক্সিটোসিন। প্রিয়জনের সান্নিধ্যে আসলে কিংবা কোনো সুন্দর জায়গা ভ্রমন করলে শরীরে আনন্দ সুখ আসে। অনেকদিন দেখার পর পরষ্পর কোন আপনজনত্ আলিংন করলে এবং কারো সাথে হাত মিলালে,অনেক দিন পরে বন্ধুকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরলে বাবা-মায়ের পাশে বসে থাকল, এমনকি পরিবারের সবাইকে ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখলে দেহ মনে একটা আনন্দে ভরে যায় ।মনে প্রফুল্লতার ভাব আসে। কেউ যখন খুব কষ্টে থাকে তখন কোনো প্রিয়জন যদি বুকের সাথে তাকে জড়িয়ে ধরে রাখে তখন মনটা অনেক হালকা হয়ে আসে। মনকে হালকা করে দেয়া এই আনন্দময়ী বন্ধুটি হলো অক্সিটোসিন।
তাই, এন্ডোরফিনস নামক বন্ধুকে পেতে প্রতিদিন ব্যায়াম করা, ডোপামিনকে পেতে প্রতিদিন সৎভাবে জীবনযাপন করে ছোট ছোট কাজ সম্পাদনা করা, সেরোটোনিন কে পেতে পরোপকার করা- বিশুদ্ধ মনে নিজ নিজ ধর্ম পালন করা আর অক্সিটোসিন নামক অকৃত্তিম বন্ধুকে পেতে শিশুদের আদর করা , সুযোগ পেলেই বাবা-মায়ের পাশে বসে থাকা এবং আপনজনের সাথে সময় কাটানোর আর কোনোই বিকল্প নেই।
প্রতিটি পরিবারেরই উচিত শিশুরা যেন এই চারবন্ধুকে সাথে নিয়ে বড় হতে পারে-সেই দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখা। একাডেমিক পড়ালেখার চেয়ে শিশুদের জন্য আরো বেশী দরকার এই চার বন্ধুর সাথে সারাজীবন এই বন্ধুত্ব কঠিণ ভাবে আকড়িয়ে থাকা ।
মোবাইল, ভিডিও গ্যেমে-ডিজিটাল ফ্রেমে ঘরে বন্দি হয়ে না থেকে শিশুদের উচিত ঘরের বাইরে প্রকৃতির ফ্রেমে নজর দেয়া। শারীরিক নানা রকমের খেলাধূলায় সম্পৃক্ত করা। এটা হলো- এণ্ডারফিনস। প্রতিটি ভালো কাজে শিশুদের উৎসাহিত করা- শিশুদের যে কোনো ছোট অর্জনকেও অনুপ্রেরণা দেয়া ,এটা হলো- ডোপামিন। সহপাঠির সাথে প্রতিযোগিতা না করে তাদের সহযোগিতা করা । খাবার ভাগ করে খাওয়া- একসাথে বসে একটা অংকের সমাধান করা- স্কুলের টেবিল -চেয়ার সাজিয়ে রাখা- বৃষ্টিতে ভেজা কোনো সহপাঠিকে নিজ ছাতার নীচে নিয়ে আসা। এইসব ছোট ছোট পরোপকারই হলো- সেরোটোনিন। আর কাজে যত ব্যস্ততাই থাকুক-জীবন যত পেরেশানই থাকুক ঘরে গিয়ে প্রশস্ত হৃদয়ে শিশুকে বুকে জড়িয়ে ধরা- বৃদ্ধ বাবা-মায়ের খোঁজ খবর নেয়া- অল্প সময়ের জন্যও সুযোগ পেলে তাদের পাশে বসা থাকাই হলো নিজের-শিশুর-পিতামাতার সবার অকৃত্রিম বন্ধু অক্সিটোসিন।
মন ও শারিরীক সুস্থতা এবং মন থাকলে পৃথিবীর ভালো সব কিছুই ভালো লাগে ।মন ও শরিরীক অসুস্থ হলে তো পৃথিবীটাই অসহ্য মনে হয় । সবার জীবনটা হোক আনন্দের এবং পৃথিবীটা হোক আমাদের কাছে একটি স্বর্গ ।
এই করোনাকালীন সময়ে সবাই স্বাস্হ সচেতন থাকুন । নিজেকে ভালবাসুন এবং পরিবারের প্রতি যত্নশীল হোন ।
সবার জন্য রইল আমার অশেষ ভালবাসা , শুভ কামনা এবং দোয়া । পরিবার এবং সমাজের সবাইকে নিয়ে অনেক সুন্দর পরিবেশে থাকুন ,ভালো থাকুন । আল্লাহ আমাদের সার্বিক মংগল করুন । আমিন

বাবলী খান

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪৫:১৩   ৫৮৮ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সাহিত্য’র আরও খবর


সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন: স্বপন চক্রবর্তী
ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা “আমি তো গাঁয়ের মেয়ে ”
৫০ বছরের গৌরব নিয়ে জাবির বাংলা বিভাগ বিশাল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব আয়োজন করেছে
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা- ‘তোমার খোঁজে ‘
অতুলপ্রসাদ সেন: ৩য় (শেষ ) পর্ব-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন;পর্ব ২-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন-স্বপন চক্রবর্তী
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা ” যাবে দাদু ভাই ?”
বাদল দিনে- হাসান মিয়া
ইমাম শিকদারের কবিতা ‘ছোট্ট শিশু’

আর্কাইভ