একজন সাধক কবি জেহাদ উদ্দিন

Home Page » সাহিত্য » একজন সাধক কবি জেহাদ উদ্দিন
শনিবার, ১ মে ২০২১



---

মেঘনা তিতাস পাড়ের গর্বিত সন্তান, আলোকিত মুখ, একজন নম্র ভদ্র মার্জিত, মায়াবী আচরণের মানুষ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের বেড়তলা গ্রামের কৃতি সন্তান সাধক কবি মোঃ জেহাদ উদ্দিন। তাঁর পিতা একজন সাদামনের মানুষ   জনাব মোঃ আনোয়ার হোসেন ও মাতা জাহেদা  খাতুন। তিনি আধ্যাত্মিকতাবাদের সাধক কবি, বিরল মেধা ও প্রতিভার অধিকারী। তাঁর চিন্তা ও কর্মে আধ্যাত্মিকতার উপস্থিতি রয়েছে। তিনি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। বাংলাদেশে নজরুল গবেষকদের মধ্যে তিনি অন্যতম। নজরুল অনুরাগী এ মানুষটি নজরুলের সৃষ্টি-কর্ম ও জীবন দর্শন চর্চা এবং কবির স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য নিজের গ্রামের বাড়িতে পাশে প্রতিষ্ঠা করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্যানিকেতন, নজরুল চর্চায় ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে গড়েছেন নজরুল স্টাডি সেন্টার। এখানেই  থেমে থাকেননি। বিটিভিসহ অন্যান্য স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলসমুহে নজরুল বিষয়ক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেন নিয়মিত।  নজরুলকে নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- নিশি প্রভাতের কবি, নিখিলের চির সুন্দর, নজরুলঃ সাম্যে, প্রেমে, দ্রোহে। তিনি নিয়মিত নজরুল গবেষণা কর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও ২০১৪ সালে লিখেছেন ঐতিহাসিক গ্রন্থ পলাশী ট্র্যাজেডির ইতিবৃত্ত। তাঁর লেখা ‘বাংলাদেশের আয়কর আইন’-এর পর পর তিনটি সংস্করণ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখা অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-ইতিহাসের গল্প (৫ খণ্ড), হে বিশ্বাসীরা, নবিজি, বসন্তের গান, দীঘল রাতের যাত্রাশেষে, কবিতার মাহফিল, ইনকাম ট্যাক্স ল’ অব বাংলাদেশ, প্রত্যক্ষ কর আইন পরিচিতি,

ইসলামের ইতিহাস ঐতিহ্য ও নজরুল বিষয়ক গবেষক হিসাবে সর্বাধিক পরিচিত হলেও তিনি মরমী সাধক হাসন রাজার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে গবেষনা করেন। ২০২০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ একদিন চলে যাবো। কবির চিন্তা ও মননে জাগতিক সত্যের আড়ালে লুকায়িত পরলৌকিক জগতের ভাবনা। অনন্তলোকে প্রস্থানের চরম সত্যের প্রকাশ ঘটেছে তাঁর এই কাব্যগ্রন্থে। প্রথম কবিতায় তিনি লিখেছেন

“একদিন চলে যাব

যেতে হবে চলে

এই কলকাকলি

সব পশ্চাতে ফেলে!

এই প্রান্তর মাঠ

নদী নালা সব

হয়তো তখনও রবে

আজিকার এই কলরব।

সেদিন আমি

দূরে কোন আকাশে

রচিব বসত আমার প্রভুর সকাশে

যেমন রয়েছে সাথে তাঁর

আমার তোমার সবার অঙ্গীকার!

আজিকার এই ধূলিমাখা ধরণী

সেদিন রচিবে বাসর

আর কারও সাথে, ভুলিবে আমায়

আমিও কি রাখিব মনে, হে লাবণী সেদিন?

যদিও আজিকে, একি সম্মোহন? একি ইন্দ্রজাল?

প্রিয় পাঠক এই কবিতায় কি চমৎকারভাবে সহজবোধ্য করে প্রকাশ ঘটিয়েছেন এক মহা সত্যের, এই পৃথিবীর ক্ষণিকের মুসাফির মানুষ আবার ফিরে যেতে হবে অনন্তলোকে। পৃথিবী হয়তো আজিকার মতোই কোলাহলপুর্ণ থাকবে, অন্য কারো সাথে পৃথিবীর সখ্যতা গড়ে উঠবে! পৃথিবীর কাছে কবির প্রশ্ন, পৃথিবী কি তাঁকে সেদিন রাখবে মনে? তবু কি মিছে মায়া!

সাধক কবি জেহাদ উদ্দিন অসার এই জগৎ সংসারের মোহ মায়া ও লোভ লালসাহীন একজন নিভৃতচারী মানুষ। তাইতো কখনো ঘরোয়া বাউলের আসরে, কখনো মেঘনার বাঁকে, কখনো মরমী সাধক হাসন রাজার তেঘরিয়ায়, কখনো বাউল শাহ আব্দুল করিমের উজানধল গ্রামে, কখনো শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির আসরে তাঁর বিচরণ।

এবারের অমর একুশে বই মেলায় তাঁর দুটি কাব্যগ্রন্থ বসন্তের গান ও দীঘল রাতের যাত্রাশেষে  প্রকাশিত হয়েছে। বসন্তের গান কবিতার বইটি সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও এ বছর বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে তাঁর লেখা গ্রন্থ  বাংলাদেশের আয়কর আইন-এর তৃতীয় সংস্করণ।

তিনি একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ১৯৯১ সালে এস,এস,সি পরীক্ষায় কুমিল্লা বোর্ডে মানবিক বিভাগে সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম ও ১৯৯৩ সালে এইচ,এস,সিতে ঢাকা বোর্ডের মানবিক বিভাগের সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১০ম স্থান অধিকার করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে আইন শাস্ত্রে (প্রথম শ্রেণি) অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। কর্মসুত্রে পৃথিবীর বহুদেশ ভ্রমণ করে অভিজ্ঞতার ভান্ডার সমৃদ্ধ করেছেন। বহু জাতি সম্পর্কে পেয়েছেন বাস্তব ধারণা। বিরল প্রতিভাবান এই কর্মকর্তা উপসচিবের দায়িত্বের পাশাপাশি বেশ কিছু  প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সাথে জড়িত আছেন। কয়েকটি খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক, নজরুল স্টাডি সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সার্ফিং এসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান, সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের পরীক্ষক, বিসিএস কর, প্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগের সার্ভিস কর্মকর্তাগণের প্রশিক্ষণ একাডেমিসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রিসোর্স পার্সন। এতসব দায়িত্বপালনের পাশাপাশি এগিয়ে যাচ্ছে  তাঁর সাহিত্য-সাধনা ও গবেষণা কর্ম।

সাধক জেহাদ উদ্দিন বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ সাঃ এর স্মরণে অসংখ্য নাতে রাসুল রচনা করেছেন। সাধনার পথ ধরেই পাড়ি দিতে চায় তাঁর কালের খেয়া। তাঁর আধ্যাত্মিক চিন্তা-চেতনা তাঁকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিবে এবং তাঁর সাধনা সিদ্ধ হবে পরম স্রষ্টার নৈকট্য লাভের মধ্য দিয়ে, তিনি একদিন পৌঁছবেন সাধনার অন্য দিগন্তে এমনটাই প্রত্যাশা।

লেখকঃ

শেখ সিরাজুল ইসলাম

কবি ও সাংবাদিক

বাংলাদেশ সময়: ২২:৪৫:০৭   ৬৮০ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

সাহিত্য’র আরও খবর


সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন: স্বপন চক্রবর্তী
ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা “আমি তো গাঁয়ের মেয়ে ”
৫০ বছরের গৌরব নিয়ে জাবির বাংলা বিভাগ বিশাল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব আয়োজন করেছে
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা- ‘তোমার খোঁজে ‘
অতুলপ্রসাদ সেন: ৩য় (শেষ ) পর্ব-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন;পর্ব ২-স্বপন চক্রবর্তী
অতুলপ্রসাদ সেন-স্বপন চক্রবর্তী
অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমের কবিতা ” যাবে দাদু ভাই ?”
বাদল দিনে- হাসান মিয়া
ইমাম শিকদারের কবিতা ‘ছোট্ট শিশু’

আর্কাইভ