৪. সম্রাট জাহাঙ্গীর(পুরো নাম-নুরউদ্দিন মুহাম্মদ সেলিম, শাসনামল -১৫ অক্টোবর ১৬০৫ – ৮ নভেম্বর ১৬২৭) : সম্রাট আকবর-এর পুত্র সম্রাট জাহাঙ্গীর ৷সম্রাট জাহাঙ্গীর এর জণ্ম ২০ সেপ্টেম্বর ১৫৬৯ ৷ মুঘল সম্রাটদের মধ্যে জাহাঙ্গীর সর্বপ্রথম পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন। আকবরের ছেলে সম্রাট জাহাঙ্গীর সমৃদ্ধির সাথে শাসন করেছেন। তবে জাহাঙ্গীর মাদকাসক্ত ছিলেন। তার রাষ্ট্রীয় কাজে অনীহা দেখে দরবারের প্রভাবশালীরা তাঁর দুই সন্তানদের পক্ষ নিয়ে দু’দলে বিভক্ত হয়ে বিদ্রোহ করে। বিদ্রোহীদের প্রভাবে পড়ে যান জাহাঙ্গীর। অবশেষে, তাঁর এক সন্তান-‘শাহজাহান’ হিসেবে মুঘল সিংহাসনে আরোহণ করেন । সম্রাট জাহাঙ্গীর মদ্যপায়ী ছিলেন বলে তাঁর সন্তানেরা ক্ষমতায় আরোহনের পূর্ব পর্যন্ত তাঁর স্ত্রী –‘সম্রাজ্ঞী নূর জাহান’ এসময় কিছুকালের জন্য রাজ্য পরিচালনা করেছিলেন ৷
৫. সম্রাট শাহজাহান ( শাহাবউদিন মুহাম্মদ খুররম, শাসনামল : ৮ নভেম্বর ১৬২৭ – ২ আগস্ট ১৬৫৮) : সম্রাট শাহজাহানের শাসনকাল মুঘল দরবারের জাকজমকের জন্য প্রসিদ্ধ। এসময় অনেক বিলাসবহুল ইমারত নির্মিত হয় যার মধ্যে আগ্রার তাজমহল অন্যতম। এসময় দরবারের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ রাজস্ব আয়ের চেয়ে বেশি ছিল।শাহজাহানের যুগে মুঘল স্থাপত্য এর স্বর্ণযুগে প্রবেশ করে। তিনি অনেক স্মৃতিসৌধ, মাসজিদ, দুর্গ নির্মাণ করেন যার মধ্যে রয়েছে আগ্রার তাজমহল, মোতি মসজিদ, লালকেল্লা, দিল্লি জামে মসজিদ,জাহাঙ্গীরের মাজার, শালিমার বাগান ইত্যাদি ।
৬.সম্রাট আঔরঙ্গজেব ( পুরো নাম : মুহিউদ্দিন মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব , শাসনামল : ৩১ জুলাই ১৬৫৮ – ৩ মার্চ ১৭০৭) : আঔরঙ্গজেবের শাসনামলে মুঘল সাম্রাজ্যের সীমানা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছায়। শিবাজী ভোসলের অধীনে মারাঠাদের আক্রমণের ফলে সাম্রাজ্যের অবনতি শুরু হয়। আঔরঙ্গজেবের সময় দক্ষিণ ভারত জয়ের মাধ্যমে ৩.২ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটারের বেশি অঞ্চল মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্গত হয়। এসময় সাম্রাজ্যের জনসংখ্যা ছিল ১৫০ মিলিয়নের বেশি যা তৎকালীন পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ এবং জিডিপি ছিল ৯০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আঔরঙ্গজেব শরিয়া আইনের প্রচলন পুনরায় শুরু করেন । ‘ফতোয়া-ই-আলমগীরি’ নামক আইন সংকলন তাঁর সময় প্রণীত হয়। গোলকুন্ডা সালতানাতের হীরার খনি তিনি জয় করেছিলেন। জীবনের শেষ ২৭ বছরের অধিকাংশ সময় আঔরঙ্গজেব বিদ্রোহী মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর শাসনামলে মুঘল সাম্রাজ্যের সীমানা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছায়। ব্যাপক বিস্তৃত সাম্রাজ্য মনসবদারদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হত । তাঁর মৃত্যুর পর সাম্রাজ্য বিভিন্ন দিক থেকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। নিজের হাতে কুরআন লিপিবদ্ধ করার জন্য আঔরঙ্গজেব অধিক পরিচিত। দক্ষিণাত্যে মারাঠাদের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় তিনি ৮৮ বছর বয়সে মারা যান।
তথ্যসূত্র : বুকস্ , ইন্টারনেট ৷
লেখক: ফারহানা আকতার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, একাডেমিসিয়ান, কলামিস্ট, লেখক এবং সহ-সভাপতি, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ ৷
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৬:০৮ ৬৯৩ বার পঠিত