বঙ্গ-নিউজঃপ্রকল্প বাস্তবায়ন রেখা (অ্যালাইনমেন্ট) অনুযায়ী ফসলরক্ষা বাঁধটি মন্দিরের পূর্বপাশ দিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু স্থানীয় অকিল তালুকদারের নামের এক ব্যক্তির জমি বাঁচাতে প্রকল্প বাস্তবায়ন রেখা পরিবর্তন করে কিছুটা পশ্চিমে সরিয়ে এক কালী মন্দিরের উপর দিয়ে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের পায়তারা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মন্দিরের পিছনে ও সামনের অংশে মাটি ফেলেছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) লোকজন। তারা (পিআইসি) বলছে আলাদা জায়গা নির্ধারণ করে মন্দিরটি অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হবে। তবে কোনোক্রমেই স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় ও মন্দির কমিটির লোকজন এখান থেকে মন্দির অন্যত্র সরাতে রাজি নয়। বিষয়টি নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায় ও গ্রামবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এতে করে কয়েকদিন ধরে ওই ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজও বন্ধ রয়েছে। ধর্মপাশা উপজেলার গোড়াডোবা হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধের ১৫১ নম্বর প্রকল্পে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। আর বিষয়টি নিয়ে মধ্যনগরের সরকার দলীয় স্থানীয় একাংশের কয়েকজন নেতা মন্দিরের উপর দিয়ে বাঁধ নির্মাণের জন্য পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে ১৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা ব্যয়ে উপজেলার গোড়াডোবা হাওরে ১৫১ নম্বর প্রকল্পের কাজ শুরু হয় গত ১২ ফেব্রুয়ারি। এ কাজের জন্য স্থানীয় পিংকু তালুকদারকে সভাপতি ও গোপেশ তালুকদারকে পিআইসির সদস্য সচিব নিযুক্ত করা হয়। মধ্যনগর ইউনিয়নের বৈঠাখালী নতুনপাড়া গ্রামের উত্তর-পূর্বদিক দিয়ে ১৫০ নম্বর প্রকল্প থেকে ওই গ্রামের সামনে ১৫২ নম্বর প্রকল্প পর্যন্ত ২৬০ মিটার বাঁধ নির্মাণ কাজ গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা ছিল।
শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁধে এলোপাতাড়িভাবে মাটি ফেলে রাখা হয়েছে আর বৈঠাখালী নতুনপাড়া গ্রামের কালি মন্দিরের উপর দিয়ে বাঁধ নির্মাণের পায়তারা করায় স্থানীয়দের বাধায় বাঁধ নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। ওই গ্রামের আব্দুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি পাশের গ্রামের অকিল তালুকদারের কাছ থেকে জমি কিনেছিলেন। অকিল তালুকদারের ফসলী জমি বাঁচাতে এখন আব্দুল্লাহর ক্রয়কৃত জায়গার উপর দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে অকিল তালুকদার দাবি করেন, তিনি আব্দুল্লাহর কাছে জমি বিক্রি করেননি।’
সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সভাপতি পিংকু তালুকদার জানান, গ্রামের পাশে যখন কাজ শুরু হয় তখন গ্রামবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে মধ্যনগরের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের নেতারা অফিসের সাথে কথা বলে স্থান পরিবর্তন করে পশ্চিমপাশ দিয়ে কাজ করতে বলায় তিনি এভাবে কাজ করছেন।
বৈঠাখালী নতুনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সনাতন দাস, অমৃত জ্যোতি সামন্ত, লিটন দাসসহ অনেকে জানান, বাঁধের অ্যালাইমেন্ট পরিবর্তন করায় মন্দির ভাঙার উপক্রম হয়েছে। মন্দিরটি অক্ষত রেখে বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তারা।
মধ্যনগর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ সরকার বলেন, ‘আমার সংগঠনের কেউ এমন কাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারেনা। সরকার দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ এমনটি করা অবশ্যই দুঃখজনক।’
সুনামগঞ্জ পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘অ্যালাইমেন্ট পরিবর্তন করে কাজ করার সুযোগ নেই। যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে শনিবার পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বাংলাদেশ সময়: ১৩:০১:৪৪ ৪৮৪ বার পঠিত #মন্দির # রাস্তা