আজকের পর্বে আমাকে পর্ব-৯ এর কিছু অংশ তুলে ধরতে হছ্ছে কারন প্রাচীন ভারতবর্ষ তথা এই উপমহাদেশ (সে সময় ভারত,বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে একসঙ্গে উপমহাদেশ বলা হতো) এর ইতিহাস পর্ব-৯ পর্যন্ত আলোচনা করা হয়েছিল ৷ “এই কলামটিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বর্ননার পাশাপাশি প্রাচীন ভারতবর্ষের ইতিহাসটি এই কারনে আলোচনা করা হয়েছে যাতে করে পাঠকগণ ‘বাঙালি জাতি’ ও ‘বাঙালি –জাতিয়তাবাদ’-এর উন্মেষ এর ইতিহাসটি কিছুটা হলেও হৃদয়াঙ্গম করতে পারেন ৷প্রাচীনযুগ, মধ্যযুগ ও বর্তমান যুগের রাজাদের ( ব্রিটিশ শাসনামল সহ) বিভিন্ন সামাজ্রবাদী আগ্রাসন ও শাসনামলের যাতাকলে নিষ্পেষিত হতে হতে ভারতবর্ষের জণগন তথা তৎকালীন ভারতবাসী ( বর্তমান ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্হানের জণগন) মুক্তির জন্য ভেতরে ভেতরে ফুঁসে উঠতে থাকে এবং একটু একটু করে তাদের মনের ভেতরে জাতীয়তাবাদের চেতনা ও অনুভূতির জণ্ম নিতে থাকে ৷ যতই দিন যেতে থাকে, ততই তারা এই চেতনায় সংঘবদ্ধ হতে থাকে এবং একই চিন্তা,চেতনা,বিশ্বাস,ধর্ম, ভাষার মানুষগুলো একসঙ্গে সংঘবদ্ধ হয়ে একটি গোষ্ঠী বা দল গড়ে তুলতে থাকে ৷ আরও কিছুদিন পর দেখা গেল, তারা সেই একই মতবাদের জন গোষ্ঠী বা দল ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে মেলামেশা করছে না ৷ এভাবে দিনে দিনে বিভিন্ন মতবাদের সমন্বয়ে বেশ কতগুলো দল বা গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে প্রাচীন ভারতবর্ষে এবং পরবর্তীতে এরই সূত্রপাত ধরে এ উপমহাদেশের জণসমষ্টি ‘ বিভিন্ন জাতি ও জাতীয়তাবাদের চেতনায়’ বিভক্ত হয়ে পড়ে ৷ এরই ফলশ্রুতিস্বরূপ, আমরা দেখতে পাই-সেই প্রাচীন ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে বর্তমানে প্রধানতঃ তিনটি জাতি তথা দেশে রূপান্তরিত হয়েছে : ১.ভারত , ২.বাংলাদেশ এবং ৩.পাকিস্হান (যদিও ‘জণ্মসূত্রে পাওয়া নাগরিকত্ব’ এর কারণে এই তিনটি দেশে আরো বহু ভাষভাষি,ধর্ম,বর্ন,গোত্রের বিভিন্ন ছোট ছোট জাতি বা উপজাতি বসবাস করছে তাদের পূর্নাঙ্গ অধিকার নিয়ে, কিন্তু তারপরও এই তিনটি দেশ মূলতঃ বিশ্বের দরবারে সুপরিচিত তাদের প্রধান জাতিস্বত্ত্বার পরিচয়ে যার উন্মেষ ঘটেছিল মূলতঃ সেসময়ে তাদের জাতি ও জাতীয়তাবাদের চেতনা থেকে) ৷
‘নতুন প্রজণ্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – পর্ব- ২’ -এ আমরা এই উপমহাদেশের ইতিহাসকে নিমোক্ত দুটো খণ্ডে বিভক্ত করে দেখিয়েছিলাম : ক. খ্রীষ্টপূর্ব ৭০,০০০ থেকে ৬০ খ্রীষ্টাব্দ এবং খ. খ্রীষ্টাব্দ ৬০ থেকে বর্তমান” (পর্ব-৯ থেকে উদ্ধৃত )৷
এবং এরই মধ্যে আমরা ‘ক. খ্রীষ্টপূর্ব ৭০,০০০ থেকে ৬০ খ্রীষ্টাব্দ’ এবং ‘ খ. খ্রীষ্টাব্দ ৬০ থেকে বর্তমান’ এই অংশ থেকে ২১.বিজয়নগর সাম্রাজ্য (১৩৩৬-১৬৪৬ খ্রীষ্টাব্দ) পর্যন্ত জেনে নিয়েছি৷ আজ আমরা জেনে নেবো- “খ. খ্রীষ্টাব্দ ৬০ থেকে বর্তমান” –এই অংশের পরবর্তী অংশগুলো ৷
“খ. খ্রীষ্টাব্দ ৬০ থেকে বর্তমান ”–এই অংশের পরবর্তী পয়েন্টস্গুলো হছ্ছে: ২২. মুঘল সাম্রাজ্য : ১৫২৬খ্রী:-১৮৫৮খ্রী:, ২৩.মারাঠা সাম্রাজ্য : ১৬৭৪খ্রী: -১৮১৮খ্রী: ,২৪.শিখ রাষ্ট্র : ১৭১৬খ্রী: -১৮৪৯খ্রী: ,২৫.শিখ সাম্রাজ্য : ১৭৯৯খ্রী: -১৮৪৯খ্রী: , ২৬.ব্রিটিশ ভারত :১৮৫৮ খ্রী:–১৯৪৭খ্রী:,২৭. । ভারত ভাগ : ১৯৪৭খ্রী:-বর্তমান ৷
২২. মোঘল সাম্রাজ্য : ১৫২৬খ্রী:-১৮৫৮খ্রী:ভারতবর্ষে মোঘল সাম্রাজ্য অর্থাৎ মোঘলদের শাষনামল কে সহজে মনে রাখবার জন্য একটি প্রবাদের প্রচলন রয়েছে ৷ প্রবাদটি স্মরণে থাকলেই বংশ পরস্পরায় মোঘল রাজাদের নাম ও শাসনামল স্মরণে থাকবে ৷ প্রবাদটি হছ্ছে: “বাবার হইলো আবার জ্বর শারিলো ঔষধে” ৷এই প্রবাদের একেকটি শব্দের প্রথম অংশ দ্বারা বংশ পরস্পরায় মোঘল রাজাদের নামের আদ্যক্ষরকে বোঝানো হয়েছে অর্থাৎ ১. ‘বাবার’ এই শব্দের দ্বারা মোঘল সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট –‘সম্রাট বাবর’ কে বোঝানো হয়েছে, ২. ‘হইলো’ এই শব্দের দ্বারা মোঘল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট –‘সম্রাট হূমায়ূন’ কে বোঝানো হয়েছে, ৩. ‘আবার’ এই শব্দের দ্বারা মোঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট –‘সম্রাট আওরঙ্গজেব’ কে বোঝানো হয়েছে, ৪. ‘জ্বর’ এই শব্দের দ্বারা মোঘল সাম্রাজ্যের চতুর্থ সম্রাট –‘সম্রাট জাহাঙ্গীর’ কে বোঝানো হয়েছে, ৫. ‘শারিলো’ এই শব্দের দ্বারা মোঘল সাম্রাজ্যের পঞ্চম সম্রাট –‘সম্রাট শাহজাহান’ কে বোঝানো হয়েছে, ৬. “ঔষধে” এই শব্দের দ্বারা মোঘল সাম্রাজ্যের ষষ্ঠতম সম্রাট –‘সম্রাট আঔরঙ্গজেব’ কে বোঝানো হয়েছে ৷এই ছয়জন প্রধান সম্রাটগনের শাসনামলের পরে তাদের নাতি-নাতনী অর্থাৎ পরবর্তী বংশধরগণ পরবর্তীতে বেশ কিছুকাল মোঘল সাম্রাজ্যের ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন৷
১. প্রথম সম্রাট –‘সম্রাট বাবর’ এর শাসনামল(৩০ এপ্রিল ১৫২৬ – ২৬ ডিসেম্বর ১৫৩০ ) : প্রায় দুই শতাব্দী ধরে মোঘল সাম্রাজ্য প্রাচীন ভারতবর্ষের পশ্চিমে সিন্ধু অববাহিকার বাইরের প্রান্ত, উত্তর-পশ্চিমে আফগানিস্তান এবং উত্তরে কাশ্মীর, পূর্বে বর্তমান আসাম ও বাংলাদেশের উচ্চভূমি এবং দক্ষিণ ভারতের ডেকান মালভূমির উপভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। মুঘল সাম্রাজ্য মূলতঃ পারস্য ও মধ্য এশিয়ার ভাষা, শিল্প ও সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত ছিল।পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইবরাহিম লোদির বিরুদ্ধে মোঘল সম্রাট বাবরের জয়ের মাধ্যমে মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা হয়। মুঘল সম্রাটরা ছিলেন মধ্য এশিয়ার টার্কো-মঙ্গোল বংশোদ্ভূত। তারা চাগতাই খান ও তৈমুরের মাধ্যমে চেঙ্গিস খানের বংশধর। ১৫৫৬ সালে আকবরের ক্ষমতারোহণের মাধ্যমে মুঘল সাম্রাজ্যের ধ্রূপদী যুগ শুরু হয়। (চলবে)৷
তথ্যসূত্র : বুকস্,ইন্টারনেট ।
লেখক: ফারহানা আকতার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, একাডেমিসিয়ান,গবেষক, কলামিস্ট এবং লেখক৷
বাংলাদেশ সময়: ১:২০:৫৮ ৫৪৩ বার পঠিত