‘নতুন প্রজণ্মের চোখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ – মূলতঃ আমার এই রচনার মূল উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের এবং সুশীল সমাজের একজন সুনাগরিক হিসেবে (যদিও মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরে আমার জন্ম) বাংলাদেশে আমার পরবর্তী প্রজন্মের ও বহিরবিশ্বের সাধারণ পাঠকের কাছে এই উপমহাদেশের ইতিহাসসহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসটি পরিস্কারভাবে তুলে ধরা ।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, এই সাধারন কাজটি করতে গিয়ে আমাকে বিভিন্ন সময়ে নানারকম বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে ৷ তবে সবচাইতে কষ্টের বিষয় এই যে, স্বাধীন বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি দেখতে পেলাম- “আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার ইতিহাসটি একেক জন লেখক লিখেছেন একেকভাবে অর্থাৎ এখানেও পক্ষপাতিত্ব ! যদি লেখক জাতীয় পার্টির সমর্থক হয়ে থাকেন,তাহলে তিনি লিখেছেন একভাবে , যদি লেখক আওয়ামী লীগের সমর্থক হয়ে থাকেন,তাহলে তিনি লিখেছেন একভাবে , যদি লেখক বিএনপির সমর্থক হয়ে থাকেন,তাহলে তিনি লিখেছেন আরেকভাবে আবার যদি লেখক হয়ে থাকেন কোনো বামদলের সমর্থক,তাহলে তিনি লিখেছেন অন্যভাবে যাতে কিনা আমাদের নতুন প্রজণ্ম খুব সহজেই দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পরবে” ৷ আমি আমার এই কলামের কিংবা আমার কোনো একটি বইতে লিখেছিলাম, “আমি মনে করি, শিক্ষকতা হলো চিরজীবনের জন্য মানুষের জীবনকে শিক্ষার স্ফুলিঙ্গ দ্বারা আলোকিত করা আর অন্যদিকে লেখালেখি হছ্ছে – সাহিত্য বা জীবনবোধের মাধ্যমে জীবনের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ , ন্যায় - নীতি মূলক অনুভূতিগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে চিরজীবনের জন্য মানুষের জীবনকে আলোড়িত করে তোলা ৷ তবে এখানে কথা আছে, একটি ভালো লেখা মানুষকে যেমন সত্য ও সুন্দর জীবনের দিকে ধাবিত করে অপরদিকে একটি খারাপ লেখা মানুষকে মন্দ দিকেই শুধু নয়, তাকে চরিত্রহীনও করে তুলতে পারে ৷ তাই শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের কাছে এবং লেখক হিসেবে পাঠকদের কাছে আমাদের সর্বদা জীবনের আদর্শিক দিকগুলো এবং স্বছ্ছ,সুন্দর ও শুদ্ধ চিন্তা-চেতনাবোধ গুলো তুলে ধরা উচিত”৷ এটি পৃথিবীর সকল লেখকদের জন্য একটি অলিখিত বানী বা নিয়ম যা পালন করা অবশ্যকর্তব্য৷ এই নীতিবোধটি ধারন করে কেউ যদি তার মাতৃভূমির সঠিক ইতিহাসটি লিখতে বসেন, তাহলে আশা করি সেটি হবে স্বছ্ছ-পরিস্কার একটি রচনা সেখানে পক্ষপাতমূলক কোনো কথা-বার্তা থাকবে না ৷ সবচাইতে বড় কথা, একটি রাষ্ট্রের ইতিহাস হবে একটি অর্থাৎ মূল ঘটনা হবে একটি, দুটি কিংবা তিনটি নয় ৷ অর্থাৎ এখানে আমি অত্যন্ত স্বছ্ছভাবে বলতে চেয়েছি যে, “একটি রাষ্ট্রের প্রকৃত ইতিহাস যদি একশ জন লেখককেও লিখতে দেয়া হয়,তাহলে সেটা একশরকম ঘটনা কখনই হবে না, সেই সবগুলো রচনার মূল বক্তব্য হবে একটাই যা কিনা বিভিন্ন লেখক তাদের নিজস্ব স্টাইলে লিখবেন বা বলবেন ৷ কিন্তু সেখানে কখনই ঘটনার বিকৃতি অর্থাৎ যা ঘটেনি তা লেখা থাকবে না ৷ যদি সেখানে সেইরকম কোনো লেখা থাকে, তাহলে বুঝতে হবে তিনি ইতিহাসকে বিকৃত করে লেখার চেষ্টা করেছেন যা কিনা অত্যন্ত সচেতনভাবেই পরিহার করতে হবে”৷আলোচনার এ পর্যায়ে আবার ফিরে যেতে হছ্ছে, এ উপমহাদেশের ইতিহাস-পর্যালোচনার দিকে যে বিষয়ে আমরা পর্ব -২ ও ৩ এ কিছুটা জেনেছিলাম।
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসকে আমরা দু’ভাগে বিভক্ত করে আলোচনা করেছিলাম, যথাক্রমে- ক. খ্রীষ্টপূর্ব ৭০,০০০ থেকে ৬০ খ্রীষ্টাব্দ এবং খ. খ্রীষ্টাব্দ ৬০ থেকে বর্তমান :
ক. খ্রীষ্টপূর্ব ৭০,০০০ থেকে ৬০ খ্রীষ্টাব্দ: ১.প্রস্তর যুগ : ৭০,০০০-৩৩০০খ্রীষ্টপূর্ব , ২.হরপ্পা ও মহেঞ্জদর সভ্যতা :৩৩০০-১৭০০খ্রীষ্টপূর্ব, ৩. হরপ্পা সংস্কৃতি :১৭০০-১৩০০খ্রীষ্টপূর্ব, ৪.বৈদিক যুগ : ১৫০০-৫০০খ্রীষ্টপূর্ব,৫.লৌহ যুগ : ১২০০-৩০০খ্রীষ্টপূর্ব, ৬.ষোড়শ মহাজনপদ : ৭০০-৩০০খ্রীষ্টপূর্ব, ৭.মগধ সাম্রাজ্য :৫৪৫খ্রীষ্টপূর্ব, ৮.মৌর্য সাম্রাজ্য : ৩২১-১৮৪খ্রীষ্টপূর্ব, ৯.মধ্যকালীন রাজ্যসমূহ : ২৫০খ্রীষ্টপূর্ব, ১০.চোল সাম্রাজ্য : ২৫০খ্রীষ্টপূর্ব, ১১.সাতবাহনসাম্রাজ্য : খ্রীষ্টপূর্ব ২৩০- ৬০ খ্রীষ্টাব্দ ৷
খ. খ্রীষ্টাব্দ ৬০ থেকে বর্তমান : ১২.কুষাণ সাম্রাজ্য- ৬০-২৪০ খ্রীষ্টাব্দ, ১৩.গুপ্ত সাম্রাজ্য :২৮০-৫৫০ খ্রীষ্টাব্দ, ১৪.পাল সাম্রাজ্য :৭৫০-১১৭৪ খ্রীষ্টাব্দ, ১৫. সুলতানী আমল :১২০৬-১৫৯৬, ১৬.দিল্লি সুলতানি -১২০৬-১৫২৬, ১৭.দাক্ষিনাত্যের সুলতান :১৪৯০-১৫৯৬, ১৮.হোয়সলা সাম্রাজ্য : ১০৪০-১৩৪৬,১৯.কাকাতিয়া সাম্রাজ্য : ১০৮৩-১৩২৩,২০.আহমন সাম্রাজ্য : ১২২৮-১৮২৬,২১.বিজয়নগর সাম্রাজ্য : ১৩৩৬-১৬৪৬, ২২.মুঘল সাম্রাজ্য : ১৫২৬-১৮৫৮,২৩.মারাঠা সাম্রাজ্য : ১৬৭৪-১৮১৮,২৪.শিখ রাষ্ট্র : ১৭১৬-১৮৪৯,২৫.শিখ সাম্রাজ্য : ১৭৯৯-১৮৪৯, ২৬.ব্রিটিশ ভারত :১৮৫৮–১৯৪৭,২৭. । ভারত ভাগ : ১৯৪৭-বর্তমান ৷
এই আলোচনায় উপরে উল্লেখিত সর্বশেষ পয়েন্ট- “ভারতবর্ষ ভাগ : ১৯৪৭–বর্তমান”-এই পয়েন্টটি হতে শুরু করলেও আমরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটি অত্যন্ত পরিস্কারভাবেই জানতে পারতাম কিন্তু আমার মনে হলো এ পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের এই উপমহাদেশের তৎ পূর্ববর্তীকালের ইতিহাসটাও সংক্ষিপ্ত আকারে জানা থাকাটা জরুরী (চলবে) ৷
তথ্যসূত্র : বুকস্,ইন্টারনেট ।
লেখক: ফারহানা আকতার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, লেখক, গবেষক এবং কলামিস্ট ৷
বাংলাদেশ সময়: ১৮:১৯:০৩ ৭৮৩ বার পঠিত #নতুন প্রজণ্ম #ফারহানা আকতার #বাংলাদেশ #ভাষা আন্দোলন #মুক্তিযুদ্ধ