আমাদের এবং ভারতের, এবং ইউরোপের প্রাজ্ঞজনেরা বেদ, পুরাণ, শূন্যপুরাণ, রামায়ন, মহাভারত পড়ে পড়ে এবং অর্কলজির সারা ভারতের মাটি খোঁড়ে জেনে গেছেন পূবের ম্লেচ্ছ “বং”রা পৃথিবীতে প্রথম ভাত ও মছলি আবিষ্কার করেছে আর লোহার লাঠি ও বটি কাবাব আবিষ্কার করেছে উত্তর-পশ্চিমের সুসভ্য অর্যরা। এবং . .
বং থেকে বাংলাদেশ, দূরত্ব ৩১৭১ বছর (আরণ্যক রচনার কাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত)
এর মাঝে এই বঙ্গজনপদের নাম পাল্টেছে, কম করে হলেও, ১৩ বার। ১২ বারই এই জনপদের নামকরণ করেছে স্বঘোষিত “প্রাজ্ঞ” এবং বাহুবলী “অ-বাঙ্গালরা”। কখনো সংষ্কৃতে, কখনো পালিতে, ব্রাহ্মী, দেবনাগরী, আরবী, গ্রিক, উর্দূ বা পারসি ভাষায়। এবং ইংরেজিতে, পর্তুগিজে, চৈনিক ভাষায়। বং, বঙ্গ, পূর্ব বঙ্গ, বঙ্গাল, বাঙ্গালা, সালতানাত-ই-বোঙ্গালা, সূবে বঙ্গালা, ইস্ট বেঙ্গল, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ইস্ট পাকিস্তান! পুন্ড্রবর্ধন, গৌড়, সুহ্ম, সমতট, হরিকেল, তাম্রলিপ্ত, লৌহিত্য, কর্ণসুবর্ণ, কামরূপ/আসাম।
প্রাচিনকালের একমাত্র, প্রথম ও শেষ বাঙ্গালী রাজা গৌড়েশ্বর শশাঙ্ক তার দেশের নামকরণ নিজে করেননি। গুপ্তরাজত্বের দূর্বলতম রাজা মহাসেন গুপ্তর কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিলেন “গৌড়দেশ”। শশাঙ্ক মহারাজের সবচে বড় কাজ বাংলা কেলেন্ডার আবিষ্কার ও গৌতমবুদ্ধের চেলাদের ঠ্যাঙ্গানো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই প্রথম বঙ্গজনপদবাসী যিনি প্রথম বারের মত স্ব-ভাষায়, স্ব-জনপদের নাম দিয়েছেন - “বাংলাদেশ”।
গ্রহন-বর্জনের গ্যাঁরাকলে বাংলা: ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, “বাংলার কোন শব্দই সংষ্কৃত থেকে আসেনি। তবে বাংলার গোড়ায় যে আর্য ভাষা, তা কেউ অস্বীকার করতে পারেনা।” - (ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, p164, M.N. Islam, 1990)।
কতটুকু গ্রহন কতটুকু বর্জন করলে একটি ভাষার নিজত্ব বা স্বকীয়তা বজায় থাকে? ভাষা যেহেতু ‘হয়ে হয়ে. উঠে, গ্রহন-বর্জনের কোন সীমা (যেমন পঞ্চাশোর্ধ শতাংশ বা উন-পঞ্চাশ শতাংশ) থাকেনা, থাকা সম্ভবও নয়।
এবং , মুস্তাফা নূরউল ইসলাম বলেন, “ভাষা শক্তি আহরণ করে সাধারণ মানুষের জীবনচর্চা থেকে - তার কর্ম থেকে, তার মানস ভুবন থেকে”ই ভাষা হয়ে হয়ে উঠে”, (P63, Mustafa N. Islam Ed. আত্মপরিচয়ের সন্ধানে)।
অতএব একটি সঙ্গত সংশয়জাত প্রশ্ন, - বাংলা যেহেতু সাধারণ মানুষের জীবনচর্চাজাত ভাষা, এবং বাংলা বা তথাকথিত “বং”এর জনসৌধ যেহেতু “অস্ট্রলেয়ড/নেগ্রিটোজাত-অনার্য”দের সমন্নয়ে গঠিত, ভাংলা ভাষার “আর্যত্ব প্রাপ্তি” ঘটলো কী ভাবে?
এর একটা সম্ভাব্য ‘জবাব-ই-শিকোয়া’ হলো, - বাংলার নব্য আর্যদের আর্যামীঃ বীজপ্রাধান্যের ‘পৌরুষ’ ও ক্ষেত্রপ্রাধান্যের “হীনমন্যতা”র এক ধ্যান বা concept । বংশপরিচয়ে এই বাংলা “অস্ট্রলেয়ড/নেগ্রিটোজাত অনার্য ভাষা গোষ্ঠীর ভাষা”, - এই কথাটা গ্রহন করা Later Day Aryanদের আত্ম সমমানের issue বা বাধা। এইতো সেদিন পরযনত , বাংলা ভাষায় শাসত্র পাঠ, যেহেতু অনারয ইতরদের ভাষা, নিষিদধ্য ছিলো এই গৌড়িয় বঙ্গে !
আর্য ভাষা নয়। Indo-Aryan ভাষা নয়। ইন্দো-ইউরোপিয়নও নয় আমার এই বাংলা। ভাষাবিষেশজ্ঞরা যতই বেদ, পুরাণ, সংহিতা ঘেটে ঘেটে ও ভাষার অর্কলজি করে করে বগুরায়, কুমিল্লার ময়না ও মতির, ময়নামতির মাগধী ব্রাহ্মী অপভ্রংশে লিপির শিলালিপি আবিষ্কার করে শুভ্র Aryan উপাখ্যান ছাই রংএর বাঙ্গাল মুগ্ধ নয়।নয়। কারণ, “কোল-মুন্ডা”র চেহারা এখনো মুছে যায়নি! ওয়া থিয়োঙ্গও’র ভাষায় বলি, They would not simply go the way of Latin (পড়ুন - “সংষ্কৃত) to become the fossils for linguistic archeology to dig up, classify, and argue about their . . . (“Aryanism”)
ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে (History repeats itself) কথাটা একটা ভন্ড প্রবচন। History is always manipulated এবং সেহেতু ইতিহাস সততই পক্ষপাতদুষট। শকুনতলী তথা বংজনপদবাসী শুধুইএমন পরমপরা বদধ্য। একজনের করম ফলঅন্যজন ভোগে। রাজ, মহারাজ, সুলতান, শাহানশাহ, লরড গভরনরমনত্রিদের করমের ফল ভোগনতি শকুনতলীর পরমপরা !
ওরা বোবা হয়ে শুনে শকুনরা ওদের নাম রেখেছে মুনডা কোল ভীল সান্তাল ওরাং ওটাং . . .। বিচিত্র নামাবলী আঁকে জনপদেরও। : বং অব্দ ত্রব্দ পুন্দ্র গৌড় বরিন্দ্র রাঢ় সমতট বঙ্গ বঙ্গালা বোঙ্গাল সুবাহ-বাঙ্গাল বেঙ্গল ইস্ট বেঙ্গল ইস্ট পাকিসতান। নামায়ন নামান্তকরণ !
শকুন্তলীইতো যুৎসই নাম; শকুনদের যা ব্যস্ততা বংজনপদ জুড়ে ! শকুন্তলী হয়ে যায় আদিদের কাছে। জনপদ শকুনদের কারখানা হয়। রাজা যায় সুলতান আসে ; সুলতান গিয়ে আসে লর্ড , রয় ভাইস রয়, গভর্নর জেনারেল। শকুন-রাজন্য। কাম কাজ বৃদ্ধি পায়। উদবাহু নেত্য করে তারা। নাট্য করে প্রাসাদে প্রাসাদে। শকুন্তলীতে স্বর্ণযুগ যাপন হয়। খাজনা উঠে, ধান চাল ডাল। নীল কর ধান কর জল কর কার্পাস কর। সুবাহ-ই-বঙ্গাল হয়, Bengal হয় , গঙ্গা গেনজেস হয়, ঠাকুর Tagore। ঢাকার TVতে “Celebrity Lounge”এ Talk দিয়ে Show করে বং ভাষা উচ্ছন্যে কেন, কেমন করে যায়, জিজ্ঞাসা করে। “Xtra Hour”এ বাংলা নিউজ; বাংলা অক্ষরে “নিউজ 24”। টিভিতে জাত্যাভিমান সঞ্চালন করে কলিকালের শেষকালে পরিশোধিত “বঙ্গার্যগন”। আর তখন . . . .!
পাঠ সূত্র:
1. “মানব সমাজের প্রবৃদ্ধির সাথে, সভ্যতা সংষ্কৃতির অগ্রযাত্রার সাথে, মানুষের কর্মকান্ডের বিবর্তন ও তার অভিজ্ঞতার পরিবর্তনের সাথে বিচিত্র ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার, বিভিন্ন গ্রহন-বর্জনের মাধ্যমে ভাষা ‘হয়ে’ ‘হয়ে’ উঠে।” P63, Mustafa N. Islam Ed. “আত্মপরিচয়ের সন্ধানে” (see also P66 - “তবে আমরা অবশ্যই অবগত আছি, ভাষা শক্তি আহরণ করে সাধারণ মানুষের জীবনচর্চা থেকে - তার কর্ম থেকে, তার মানস ভুবন থেকে।”)
2. “অতএব, জনগোষ্ঠীর ভাষাই তৎকালীন বাংলাদেশে প্রচলিত, অর্থাৎ প্রাক-আর্য যুগের ভাষা ছিলো।” ref ঐ P63.
3. অতএব, সেই প্রত্নকালীন অস্ট্রিক, কোল-মুন্ডা , দ্রাবিড়, তিব্বত-ব্রহ্মণ গোষ্ঠীর এমন অনেক শব্দরাজি, শব্দরীতি অধুনা যুগের বাংলা ভাষায় আত্মস্থ হয়ে গেছে, যেগুলি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত”। P64
4. “They would not simply go the way of Latin to become the fossils for linguistic archeology to dig up, classify, and argue about at International conferences.” - p447, The Language of African Literature, Ngugi wa Thiong’o (1986)
5. “বাংলার কোন শব্দই সংষ্কৃত থেকে আসেনি। তবে বাংলার গোড়ায় যে আর্য ভাষা, তা কেউ অস্বীকার করতে পারেনা।” - ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, p164, M. N. Islam (1990)। “ঘসে মেজে রূপ আর ধ’রে বেঁধে পীরিত যেমন, নিয়মে বেঁধে ভাষার রীতি শেখানও তেমন।” - ডঃ মুহম্মদ শহীদুউললাহ্ , in মুসতাফা নূরউল ইসলাম, 1990, p. 164.
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৩৫:০৩ ১২৪৭ বার পঠিত #প্রাচীন আবিস্কার #প্রেস ফিডম #বঙ্গ জনপদ #ভাষা #মতি মিয়া #মানবসভ্যতা #সংস্ক্রতি